মলয় কুন্ডু : রাজ্য যে বাণিজ্যনীতি নিয়েছে, তার ফলেই দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীদের এক নম্বর গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ। একদিকে রাজ্যে শিল্পবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা, অন্যদিকে প্রশাসনিক কাজে গতি ও জটিলতা কমানো হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেওয়া একাধিক মানবিক প্রকল্প। তার ফলেই এ রাজ্য এখন দেশের মধ্যে লগ্নিকারীদের প্রথম পছন্দ।
শুক্রবার নবান্ন (Nabanna) সভাগৃহে বেঙ্গল গ্লোবাল বিজেনস সামিট (Bengal Global Business Summit) বা বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মলনের প্রস্তুতি বৈঠকে দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রদূত, অনারারি কনসাল, কনসাল জেনারেল এবং বণিকসভাগুলির কাছে এই বার্তাই দিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে অর্থ দফতরের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্র (Amit Mitra)। তিনি জানান, রাজ্যের সুস্পষ্ট বিশ্বাসযোগ্য বাণিজ্যনীতিই দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে লগ্নির এক নম্বর গন্তব্য করে তুলেছে। শিল্পবান্ধব পরিবেশ, নীতি এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি। যাতে বিদেশের প্রতিনিধিরা তাঁদের দেশের শিল্পপতি ও লগ্নিকারীদের রাজ্য সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরতে পারেন। অমিতবাবুর আশ্বাস, রাজ্যের বিনিয়োগ করলে মিলবে প্রশাসনিক সব ধরনের সাহায্য। এই বার্তাই দেশ-বিদেশের শিল্পপতিদের কাছে পৌঁছে দিতে চায় রাজ্য সরকার। এদিকে আজ, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘সিনার্জি’। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দিয়ে ‘সিনার্জি’-র শুরু। ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় শিল্প নিয়ে যাবতীয় সমস্যার সমাধানে ও নয়া লগ্নির ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে চলবে ‘সিনার্জি’।
[আরও পড়ুন: দেউচা পাচামিতে কয়লা খনি হলে গড়ে উঠবে সোনার মহম্মদবাজার, প্রতিশ্রুতি অনুব্রতর]
২০২২ সালের ২০ ও ২১ এপ্রিল মাসে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হবে বাণিজ্য সম্মেলন। তারই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে জোরকদমে। এদিন সেই প্রস্তুতি বৈঠকে অমিতবাবু দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিদের কাছে রাজ্যের লগ্নি সম্ভাবনা বিস্তারিতভাবে জনান। গত ১০ বছরে রাজ্য সরকার শিল্পক্ষেত্রে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে, বিভিন্ন নীতি পরিবর্তন করে দ্রুত লগ্নির পথে এগিয়েছে, প্রশাসনিক কাজকর্মে জটিলতা কমিয়ে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির পথ সুগম করেছে, তা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি জানান, রাজ্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন মানবিক প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে গিয়েছে আমজনতার কাছে। ফলে তাঁদের কেনার ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে তৈরি হয়েছে চাহিদা। তাঁর আশ্বাস, রাজ্যে বিনিয়োগ করলে সরকার সব ধরনের সাহায্য করবে। এদিন জার্মানি, ইটালি, ফ্রান্স, আমেরিকা, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইজরায়েল-সহ ২৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত, অনারারি কনসাল, কনসাল জেনারেল উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা এ রাজ্যে লগ্নির ক্ষেত্রে তাঁদের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিভিন্ন দেশের লগ্নিকারীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কথা বলেন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়। তার মধ্যে রয়েছে পরিকাঠামো, নগরোন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্র।
[আরও পড়ুন: কান্দিতে খুন তৃণমূল নেতা, তদন্তে পুলিশ]
পাশাপাশি পরিষেবা নির্ভর শিল্প, যেমন শিক্ষা, প্রযুক্তি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, পর্যটন এবং শিল্পক্ষেত্র যেমন, কারখানা, এমএসএমই, কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র, মৎস্য, পোলট্রি, ডেয়ারি, দুগ্ধজাত খাদ্য তৈরি এবং রপ্তানির মতো বিষয়গুলিতে জোর দিতে চায় রাজ্য সরকার। এই সমস্ত দপ্তরের সচিবরাও এদিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটি বণিকসভা নিজস্বভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রজেন্টেশন তৈরি করবে। যাতে সহজেই রাজ্যের বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করতে পারেন দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীরা। দপ্তরগুলিও তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরবে লগ্নিকারীদের কাছে।