সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিজেপির ‘ভাতিজা’ আক্রমণের জবাব দিতে এবার নিজেই আসরে নামলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানের সভা থেকে তাঁর পালটা আক্রমণ, ”আপনাদের নিশানায় শুধু দিদি আর ভাতিজা। আমি বলছি, দিদিকে পরে দেখবেন। আগে ভাতিজার সঙ্গে লড়াইটা করো। আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) হারিয়ে দেখাও, তারপর মমতার সঙ্গে লড়তে আসবে।” পাশাপাশি, অমিত শাহর ছেলে জয় শাহকে নিয়েও তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী। হুঁশিয়ারির সুরে বললেন, অভিষেকের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে মনে রেখো, জয় শাহও ছাড় পাবে না। ওর বিরুদ্ধে তদন্ত চলবে। কোটি কোটি টাকার মালিক কীভাবে জয় শাহ, দেখতে চাই আমরা।”
ঘণ্টা খানেক আগেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার মাটিতে ‘পরিবর্তন যাত্রা’র সূচনা করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নামখানার সেই জনসভায় ভিড় বিশেষ ছিল না। তবে পৈলানের মাঠে তৃণমূলের কর্মিসভা যেভাবে ভরে গেল, তাতে একথা একেবারেই স্পষ্ট, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এখনও তৃণমূলের সংগঠন, জনপ্রিয়তায় থাবা বসাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। সেই জনতার ভিড় দেখে আপ্লুত তৃণমূল নেত্রী নিজেই জনগনের কাছে শৃঙ্খলা মেনে সভায় যোগদানের আবেদন করেন। আর তারপর এক ভোকাল টনিকেই চাঙ্গা করে দেন সভায় উপস্থিত দলীয় কর্মীদের। এদিনের কর্মিসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত অভিষেকের হয়েই সুর চড়ালেন। কেন, কীভাবে অভিষেক রাজনীতিতে এলেন, তাতে তিনি কী বাড়তি সুবিধা পান, সমস্ত কথা প্রকাশ্যে এনে বিজেপির অভিযোগের জবাব দিলেন।
[আরও পড়ুন: ক্ষমতায় এলে রাজ্যে সপ্তম বেতন কমিশন, সরকারি চাকরিতে বাড়তি সংরক্ষণ, ঘোষণা শাহের]
অভিষেকের রাজনীতিতে আগমন নিয়ে মমতা তাঁর প্রথম জীবনের রাজনীতির প্রসঙ্গ টানলেন। ১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেস নেত্রী হিসেবে আন্দোলন করতে গিয়ে যখন তৎকালীন বাম সরকারের পুলিশের হাতে ব্যাপক প্রহৃত হয়েছিলেন, সে কথা উল্লেখ করেন। জানান যে, ”অভিষেক সেসময় খুবই ছোট। কিন্তু আমাকে ওভাবে মার খেতে দেখেছিল, আমি বাড়িতে বসে বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলাম, তখন ও আমার কাছেই থাকত। মায়ের কাছে গল্প শুনত, কীভাবে আমাকে মারা হয়েছিল। তারপর যখন আমার দলের ছেলেমেয়েরা ‘দিদিকে কেন মারা হল, জবাব চাই, জবাব দাও’- এই স্লোগান তুলত, তখন অভিষেকও ওদের সঙ্গে এটাই বলত। এইভাবে ছোট থেকে ও রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বোধ করে। আমি বলেছিলাম, ভোটে দাঁড়ানোর দরকার নেই। পার্টির কাজ করো। কিন্তু ও রাজি হয়নি। ও জনতার ভোটে নির্বাচনে জিতে রাজনীতি করতে চেয়েছিল।”
[আরও পড়ুন: নামখানায় অমিত শাহর সভায় বিশৃঙ্খলা, ব্যারিকেডে উঠে কালো পতাকা দেখালেন মহিলারা]
এরপর নাম না করে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে মমতার আরও বার্তা, ”ও আমার থেকে কোনও সুবিধা পায় না। ওকে কি আমি উপ-মুখ্যমন্ত্রী করেছি নাকি মন্ত্রী করেছি? শুধু প্রার্থী করেছিলাম, আপনাদের ভোটে জিতে ও একজন সাধারণ সাংসদ হয়েছে। আমার খারাপ লাগে, রোজ আমাকে নিয়ে অভিষেককে আক্রমণ করা হচ্ছে। আমি বলছি, আমাকে যা খুশি বলুন, আমার বাড়ির ছেলেমেয়েদের কিছু বলবেন না।” এদিনের সভার বক্তব্যের অধিকাংশটাই মমতা বলেন অভিষেককে নিয়ে। বোঝাই গেল, পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিজেপি নেতারা তাঁকে যেভাবে আক্রমণ করছে, তারই যাবতীয় জবাব দিয়ে দিলেন।