স্টাফ রিপোর্টার: ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, আর্জেন্তিনার লিওনেল মেসি, জার্মানির ম্যানুয়েল নয়্যার যতবার কাতারের মাঠে নামবেন, তাঁদের চুলে বিলি কেটে দেবে বাংলার আলো। কলার উঁচু হবে বঙ্গের। আলোর গতিবেগ মারাত্মক। বাংলার সে আলো যে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান পেরিয়ে তিন হাজার সাতশো ছিয়াত্তর কিলোমিটার দূরের কাতারের মাঠে জ্বলজ্বল করবে, কে জানত।
এই প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলে স্টেডিয়ামের আলোর দায়িত্বে বাংলার সংস্থা। ফিফা বিশ্বকাপে (Football World Cup 2022) বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে ইলেকট্রোপ্লাস্ট প্রাইভেট লিমিটেড। এই প্রথম কোনও ভারতীয় সংস্থা হিসাবে এই সুযোগ পেয়েছে বাংলার বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্ট। সংস্থার এই প্রজন্মের কর্ণধার সপ্তর্ষি মিত্র জানিয়েছেন, ফিফা বিশ্বকাপে এতদিন একচেটিয়া ছিল ইংল্যান্ডে তৈরি জিনিস। এমনকী, আমেরিকার তৈরির জিনিসও ফিফা কর্তাদের না পসন্দ। সেখানে বাংলার সংস্থা বিএমসি-র তৈরি যন্ত্র তাদের মনে ধরায় আপ্লুত সপ্তর্ষি।
[আরও পড়ুন: হলদিয়া পুরসভার টেন্ডার দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন কাউন্সিলর]
নয়া ডিভাইসের নাম ইন্সট্রুমেন্ট ট্রান্সফরমার। হাই-টেনশন লাইনে কত ভোল্ট তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে তা দেখে লাইনকে সুরক্ষা দেওয়ার কাজ করবে যন্ত্র। দেশি-বিদেশি তাবড় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাকে এই যন্ত্র সরবরাহ করে বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্ট। সেই রকমই একটি বিদেশি সংস্থার মাধ্যমেই কাতারে ফিফা বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) বরাত পেয়েছে বিএমসি। সেই সংস্থাই কাতারে হাইটেনশন লাইন পাতার দায়িত্বে। শুনতে সহজ। কিন্তু দায়িত্ব বিস্তর। আন্তর্জাতিক মঞ্চ ফিফা বিশ্বকাপ। সারা পৃথিবীর গণমান্যরা হাজির থাকবেন। তাবড় ব্যক্তিত্বদের আলো দেওয়ার কাজ সহজ নয়।
বিশ্বকাপে ইলেকট্রিক ইন্স্ট্রুমেন্টের ব্যবস্থা করতে হলে পার হতে হয় হাজারো পরীক্ষা। সেই মান পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্টের ইন্সট্রুমেন্ট। কাতারের তাপমাত্রা মারাত্মক। চ্যালেঞ্জ ছিল একটাই। কাতারের সেই গরমে ঠিকভাবে কাজ করবে তো যন্ত্র? সূত্রের খবর, ফিফা কর্তারা খুশি বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্টের মান দেখে। ঘনিষ্ঠমহলে তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে বিএমসি ইলেকট্রোপ্লাস্টের তাপমাত্রাবান্ধব যন্ত্র।
বাংলার এই সংস্থার পথ চলা শুরু হয় এনআইটি, দুর্গাপুরের প্রাক্তনী শান্তনু মিত্রর হাত ধরে। ছিলেন তাঁর ভাই ইঞ্জিনিয়ার সিদ্ধার্থ মিত্রও। এখন সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সুবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ মিত্র, রাজীব ভার্গব, গিরীশ ভি মাগ্রের মতো ইঞ্জিনিয়াররা। বর্তমান কর্ণধার সপ্তর্ষির মতে, বাম আমলে ধর্মঘটের রাজনীতির ফলে বহু সংস্থা রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়েছিল। এখন রাজ্য সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহস দিচ্ছে। সম্ভব হয়েছে অত্যাধুনিক মানের ডিভাইস বানানো।