স্টাফ রিপোর্টার: লিজ নয়, নিঃশর্ত দলিল। শিল্পপতিদের জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নীতি আনছে রাজ্য। এর ফলে জমি নিয়ে শিল্পপতিদের হয়রানি অনেকটাই কমবে। বৃহস্পতিবার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন বোর্ডে’র বৈঠকে শিল্পপতিদের আশ্বস্ত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, “আমাদের অনেক জমি পড়ে আছে। আমরা ঠিক করেছি সেগুলো নিলাম করে দেব। সেখানে কেউ শিল্প করুক, শপিং মল করুক, বাজার করুক–তাদের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করছি একটা নীতি করার। এখনও হয়নি। লিজে জমি না দিয়ে, শিল্পপতিদের ‘ফ্রি হোল্ড ল্যান্ড ডিড’ করে দেব। তাতে একটু বেশি টাকা দিতে হবে ঠিকই কিন্তু ঝামেলা অনেকটাই কমবে। বারবার এখানে ওখানে করতে হবে না।”
আলিপুরের ‘সৌজন্য’ অডিটোরিয়ামে এদিন বৈঠক বসে বোর্ডের। প্রথমেই মুখ্যমন্ত্রী দেউচা পাঁচামির কয়লা ও রানিগঞ্জের গ্যাস প্রকল্পের অগ্রগতির ব্যাপারে অবহিত করেন শিল্পপতিদের। বলেন, “দেউচা পাঁচামি নিয়েও আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়েছে। প্রশাসন ও কিছু এনজিও-র তৎপরতায় তা সফল হয়নি। কয়লা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুতের দাম অনেক কমবে।” মুখ্যমন্ত্রী এদিন ল্যান্ড ব্যাংকএর কথা মনে করিয়ে দেন শিল্পোদ্যোগীদের। বলেন, “সিলিকন ভ্যালির জন্য ১০০ একর দিয়েছিলাম, ফুরিয়ে গিয়েছে। আরও ১০০ একর দেওয়া হয়েছে। তাও ফুরিয়ে গিয়েছে। আরও জমি আজ বরাদ্দ করা হল।” আলিপুরে ১০৮ একর জমিও ল্যান্ডব্যাংক রয়েছে। কিছু সরকারি প্রকল্প হবে। বাকিটা ছ’টি জোনে ভাগ করে নিলাম করা হবে। এই খবর জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “একটা মিউজিয়াম হচ্ছে। তার বাইরে ছ’টা জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। চারটি জোনে অকশন করা হচ্ছে। ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাবে।”
[আরও পড়ুন: মন্ত্রিত্বের পর এবার তৃণমূলের সমস্ত পদও খোয়ালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধান্ত দলের]
মুখ্যমন্ত্রী এদিন মুখ্য সচিবকে বলেন, “আমাদের অনেক কমিটি আছে। শিল্পপতিদের অনেক সমস্যার কথা আমি শুনছি। এগুলো সমাধানের জন্য একজন নোডাল অফিসার নিয়োগ করে দিন। রোজ আধ ঘণ্টা করে সেই অফিসারের সঙ্গে আপনি বসুন। অভিযোগ জানানোর জন্য একটা একটা মেল আইডিও তৈরি করে দেওয়া হোক।” বন্ধ চা বাগানের উদ্বৃত্ত জমিতে হাসপাতাল, নার্সিং কলেজ ও ফুড প্রসেসিং ইউনিট তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য। সেই ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পাঁচটি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী (Harikrishna Dwivedi) এই খবর জানিয়ে বলেন, “হোম স্টে-তে মহারাষ্ট্রকে টপকে এক নম্বর হয়েছে বাংলা। ১৭০৪টি হোম স্টে-কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।” পর্যটকদের সুবিধার জন্য রাজ্য ‘পথসাথী’ প্রকল্পও হাতে নিয়েছে। হাইওয়ের পাশে থাকার জায়গা, ওয়াশ রুম করা হচ্ছে। এখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যুক্ত করা হবে বলেও জানান মুখ্যসচিব।
[আরও পড়ুন: অপসারিত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ‘জাগো বাংলা’র নতুন সম্পাদক সুখেন্দুশেখর রায়]
মুখ্যমন্ত্রী এদিন ফের তিনটি ফ্রেট করিডরের কথা মনে করিয়ে দেন। বলেন, “উত্তরপাড়ায় ওয়াগন ফ্যাক্টরির পাশে সাতশো একরের মতো জায়গা আছে। আমরা ওই জমিটা নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব করার চেষ্টা করব।” রাজ্যে শিল্পের অনুকূল পরিবেশ যে তৈরি হচ্ছে তা এদিন বারবার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, সঞ্জয় বুধিয়া, রুদ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো শিল্পপতিরা স্বীকার করে নেন। ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন রাজ্যের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য শিল্পপতিদের কাছে আরজি জানান। সিএসআর থেকে অর্থ বরাদ্দ করে এই ব্যাপারে প্রচার করার অনুরোধ করেন। চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষকে (Gautam Ghosh) অনুরোধ করেন এই ব্যাপারে তথ্যচিত্র বানাতে। বলেন, “আপনারা বাইরের টিমগুলোকে নিয়ে আসুন শুটিং করার জন্য।”
মুখ্যমন্ত্রী এদিন সব জেলার রবীন্দ্রভবনে সিনেমা দেখানোর নির্দেশ দেন। অনেক শিল্পপতিই এদিন অভিযোগ করেছেন যে, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও ফুড প্রসেসিং পার্কে প্রচুর সংস্থা জমি নিয়ে ফেলে রেখে দিয়েছে। শিল্প করছে না। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি মুখ্যসচিবকে দেখতে বলেন।