গৌতম ব্রহ্ম: কেন্দ্রের থেকে এক টাকাও সাহায্য নয়। নিজস্ব তহবিলের জোরেই রাজ্যের কৃষকদের সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়ে ফেলল নবান্ন (Nabanna)। শুধু চলতি অর্থবর্ষেই রাজ্যের কৃষকবন্ধুরা পেয়েছেন প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলার কৃষকদের আয় বেড়েছে তিনগুণ। যা নজিরবিহীন তো বটেই, সারা দেশের সামনে উন্নয়নের জ্বলন্ত দৃষ্টান্তও।
২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকবন্ধু (Krishak Bandhu) প্রকল্পের সূচনা। নবান্ন সূত্রের খবর, ২০১৮-১৯ সালে ৩৮.৮১ লক্ষ কৃষক পান ৬০১.৪৯ কোটি টাকার সাহায্য। ২০১৯-২০ সালে ৪৪.২৬ লক্ষ কৃষক পান ১৩৫৩.৮৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে ৫৯.০৩ লক্ষ কৃষক পান ১৫৬৫.৯৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ৭৭.৮৯ লক্ষ কৃষককে দেওয়া হয় ৪০৪০.১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবর্ষের রবি মরশুমে ৯১ লক্ষের বেশি কৃষককে ২,৫৫৫ কোটি টাকা দেওয়ার পদক্ষেপ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯০ লক্ষ কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে গিয়েছে। কৃষি দপ্তর সূত্রের খবর, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে এ যাবৎ কৃষকবন্ধুতে রাজ্য সরকার খরচ করেছে ৪৯৫০.২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত চার বছরে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ সাহায্য পেয়েছেন কৃষকবন্ধুরা। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার হাওড়ার পাঁচলায় সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে একাধিক প্রকল্পের সঙ্গে কৃষকদের তিনগুণ আয়বৃদ্ধির তথ্য ও কৃষকবন্ধুর সাফল্যের কথা ঘোষণা করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)।
[আরও পড়ুন: পাহাড়ের প্রার্থীদের জন্য SSC-তে বিশেষ সুবিধা চেয়ে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ অনীত থাপার]
দায়িত্ব গ্রহণের পর চাষে বৈচিত্র্য এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকদের আয়বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ১১ বছরে কৃষি উৎপাদনও বেড়ে যায় রাজ্যে। শুধু ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ৭ গুণ, ডাল ২.৫ গুণ, তৈলবীজ ১.৫ গুণ। ধানের উৎপাদন ৫২ লক্ষ মেট্রিক টন বেড়ে ২৫৩ লক্ষ মেট্রিক টনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, অভাবী বিক্রি বন্ধ করতে কৃষকদের থেকে বাজারদরের থেকে বেশি দামে ধান কেনারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্যজুড়ে এর জন্যে ১৮৬টি কিষান মান্ডি (Kishan Mandi) তৈরি করা হয়। এবং নবান্নের দাবি, এই সব কিছুর দৌলতেই রাজ্যে কৃষকের বার্ষিক আয় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সারা দেশে নজির। যার জন্য রাজ্যের কৃষি দপ্তর কেন্দ্রের থেকে একটানা ‘কৃষি কর্মণ’ (Krishi Karman) পুরস্কারও পেয়েছে। রাজ্যের কৃষি ও পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (Sovondeb Chatterjee) জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কৃষকবন্ধু প্রকল্পে সাহায্যের পরিমাণ ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে বছরে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ন্যূনতম সহায়তাও ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। ৯১ লক্ষ কৃষক, বর্গাদার, ভাগচাষি এই সহায়তা পাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গ একমাত্র রাজ্য যেখানে বর্গাদার ও ভাগচাষিরাও ‘কৃষকবন্ধু’ পাচ্ছেন।
[আরও পড়ুন: তুরস্কের ভুমিকম্পে আটকে ১০ ভারতীয়, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ২০০]
চলতি রবি মরশুমে আড়াই হাজার কোটি টাকার অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছে। যা পরিস্থিতি মার্চ পর্যন্ত সাহায্য প্রাপক কৃষকের সংখ্যা ৯২ লক্ষে গিয়ে পৌঁছবে। এখানেই নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) পিএম কিষাণ (PM Kishan) যোজনাকে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষকবন্ধু। কারণ, পিএম কিষাণ প্রকল্পের সুবিধা পায় এ রাজ্যের মাত্র ৪৩ লক্ষ কৃষক। যা ‘কৃষকবন্ধু’র অর্ধেকেরও কম। মাথাপিছু টাকার অঙ্কও অনেক কম, মাত্র ৬ হাজার টাকা। নবান্ন (Nabanna) সূত্রের খবর, প্রথমে পিএম কিষাণে এ রাজ্যের ৪৬.৭ লক্ষ কৃষক অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। পরে তা কমে প্রথমে ৪৪.৫ লক্ষ, শেষে ৪৩ লক্ষ হয়। শুধু সাধারণ আর্থিক সাহায্য দেওয়াই নয়, কৃষকবন্ধুতে মৃত্যুজনিত সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। ১৮-৬০ বছর বয়সী কৃষকের মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মোট ৭১,৮০৫টি কৃষক পরিবার ১৪৩৬ কোটি টাকা সাহায্য পেয়েছেন। বাংলা শস্য বিমা যোজনার প্রিমিয়ামের পুরো টাকাও দিচ্ছে নবান্ন। কৃষিজমিতে খাজনা ও মিউটেশন ফি মকুব করা হয়েছে। এই সবই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় হয়েছে বলে জানালেন শোভনদেব।