স্টাফ রিপোর্টার: কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য বিপুল অর্থ। কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প হোক বা কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রকল্প, কোনও ক্ষেত্রেই মিলছে না প্রয়োজনীয় টাকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ যাতে থেমে না থাকে, তার জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। একদিকে রাজ্যের মানুষের জন্য মানবিক প্রকল্পগুলি চালানো, অন্যদিকে গ্রামীণ পরিকাঠামোর উন্নয়ন করে মানুষের কর্মসংস্থান ও আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার লক্ষ্য নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এই কাজে আরও গতি আনতে কয়েক কোটি টাকা করে একাধিক দপ্তরকে দেওয়া হল। অর্থ দপ্তর সূত্রে খবর, সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ উন্নয়নর সঙ্গে সম্পর্কিত দপ্তরগুলিকেই এই টাকা দেওয়া হয়েছে। যাতে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ পদক্ষেপ ও প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারে দপ্তরগুলি।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণ বৈঠকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সামনেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, অযথা খরচ করা যাবে না। জরুরি প্রকল্প ছাড়া যেমন নয়া প্রকল্প করা হবে না, তেমনই যে প্রকল্পগুলি চলছে, তার কাজও দ্রুত শেষ করতে হবে। তার জন্য কড়া নজর দিতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদেরও। মুখ্যমন্ত্রী একইসঙ্গে জানান, কোভিড (COVID-19) অতিমারিতে রাজ্য সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হলেও কেন্দ্রীয় সাহায্য মেলেনি। এমনকী একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়নি রাজ্যকে। জিএসটি নিয়ে প্রাপ্য টাকাও বাকি রেখেছে কেন্দ্র। যশ বা ইয়াসে (Yass) প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা রাজ্যের ক্ষতি হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথপ্রকল্পগুলিতে কেন্দ্র তাদের অংশের টাকাও কমিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে রাজ্যের পাওনা প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। তা এখনও মেলেনি। তাই বাজেট বহির্ভূত খরচ না করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
[আরও পড়ুন: আর রাখঢাক নয়, সরাসরি বিজেপি সমর্থিত মেঘালয় সরকারে যোগ কংগ্রেসের সব বিধায়কের!]
কৃষক বাজার, কর্মতীর্থ, পথসাথী ব্যবহার না হয়ে পড়ে থাকার জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তা ও মন্ত্রীদের বোঝান, রাজ্যের হাতে যা রয়েছে, তা ব্যবহার করে রাজ্যের কোষাগারে অর্থ এলে মানবিক প্রকল্পে আরও বেশি করে মানুষকে সাহায্য করতে পারবে সরকার। সেটাই চান মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে যে সমস্ত প্রকল্পগুলি চলছে, তাতে আরও জোর দেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
[আরও পড়ুন: গোয়ায় নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে তৃণমূল]
নবান্ন (Nabanna) সূত্রে খবর, গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রা ও আর্থিক মানোন্নয়নে জড়িত একাধিক দপ্তরের প্রকল্পগুলিতে বাড়তি নজর দিতে প্রায় ৪৮৬ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। দেওয়া হচ্ছে রাজ্যের ৯টি দপ্তরকে। রাজ্যে ‘রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপমেন্ট ফান্ড’ বা ‘RIDF’–এর অধীনে যে প্রকল্পগুলির কাজ চলছে, সেগুলি যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, তার জন্যই এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে বলে অর্থ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। ৯টি দপ্তরের মধ্যে সব থেকে বেশি অর্থ পাচ্ছে পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন দপ্তর। প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা। দপ্তর সূত্রে খবর, গ্রামীণ উন্নয়নে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পঞ্চায়েত দপ্তর।একগুচ্ছ প্রকল্প রয়েছে ‘আরআইডিএফ’–এর। এরপরই রয়েছে পূর্ত। গ্রামীণ পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য তারা পাচ্ছে ১৫৫ কোটি টাকা। রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছে। এবার সেই পরিকাঠামোয় আরও জোর দিতে বিদ্যুৎ দপ্তরকে দেওয়া হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। জলসম্পদ অনুসন্ধান ও উন্নয়নের জন্য দেওয়া হচ্ছে ৩৫ কোটি টাকা। গ্রামীণ অর্থনীতিতে চাষি বা ছোট ছোট শিল্প, কারখানার জন্য সমবায় ব্যাঙ্কের উপর বিরাট অংশের মানুষ নির্ভরশীল। সেই দিকে লক্ষ্য রেখে সমবায় দপ্তরকে দেওয়া হচ্ছে ২৫ কোটি টাকা। সেচ পাচ্ছে ২২ কোটি, কারিগরী শিক্ষা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা হচ্ছে ১৫ কোটি, খাদ্য দপ্তরকে দেওয়া হচ্ছে ১৩ কোটি এবং প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতর পাচ্ছে ৬ কোটি টাকা।