গৌতম ব্রহ্ম: কর ফাঁকি দিয়ে বিপজ্জনকভাবে চলছে রাজ্যের প্রচুর ছোট বাণিজ্যিক গাড়ি। যার জেরে রাজ্যের রাজস্বের ক্ষতির পরিমাণ চোখ কপালে তোলার মতো। ক্ষতির অঙ্কটা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এবার তাই এধরনের ছোট বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে রাজ্য মোটা অঙ্কের ছাড় দিয়ে এককালীন টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করছে নবান্ন। পাঁচ বছরের কর দিয়ে ১৫ বছরের ছাড়পত্র। অর্থাৎ মোট করের এক তৃতীয়াংশ দিয়েই ‘লাইফ টাইম ট্যাক্স’ মিটিয়ে ফেলা যাবে।
৪০৭ বা ছোটা হাতির মতো গাড়িগুলোই রাজ্যে কর ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে এগিয়ে। এমন তথ্যই সম্প্রতি হাতে এসেছে পরিবহণ দপ্তরের। দপ্তরের এক কর্তা দাবি করছেন, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করার সময় ৩০০-৫০০ টাকা মূল্যের একটা রোড টাক্সের একটা কিস্তি দিতেই হয়। ওটাই প্রথম, ওটাই শেষ! এরপরই নিখোঁজ হয়ে যায় গাড়িগুলি। আসলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভাড়া খাটে। যেখানে আরটিও-র নজরদারি নেই। ট্র্যাফিক পুলিশের চোখরাঙানি নেই। জানা গিয়েছে, বহু গাড়ি কর ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে। বিমাও করাচ্ছে না। ফলে সিএফ হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের তিনতলা থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু, তদন্তে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াড]
যাত্রী ও পথচারীদের সুরক্ষা শিকেয় তুলে চলছে এই সব ‘বেআইনি’ গাড়ি। ফলে দুর্ঘটনা ঘটছে মাঝেমধ্যেই। তারপর কর ফাঁকির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে। এই কর ফাঁকির পরিমাণ জরিপ করতে সম্প্রতি সমীক্ষা চালায় পরিবহণ দপ্তর। তখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার কর বকেয়া রয়েছে। প্রায় সমপরিমাণ টাকা পেনাল্টি হিসাবে প্রাপ্য রাজ্যের। অর্থাৎ প্রাপ্য টাকার অঙ্ক প্রায় ৫ হাজার কোটি। এই টাকা কীভাবে আদায় করা যায় তাই নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী।
জানা গিয়েছে, যা পরিস্থিতি তাতে মূল বকেয়া আদায় করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। পেনাল্টি তো অনেক দূরের কথা! এক্ষেত্রে ‘ওয়েভার স্কিম’ এনে ছাড় দিয়ে এককালীন টাকা তুলতে চাইছে রাজ্য। পরিবহণ দপ্তরের এক আধিকারিক জানালেন, ছাড় দিলেও এই সব কর ফাঁকি দেওয়া গাড়িগুলি থেকে অন্তত দেড় থেকে দু’হাজার কোটি টাকা উঠবে! তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় নবান্ন। জানা গিয়েছে, এবার থেকে এই ধরনের ছোট বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে রাজ্য মোটা অঙ্কের ছাড় দিয়ে এককালীন টাকা আদায় করার জন্য আইনে বদল আনতে চায় রাজ্য। যদিও এই নিয়ম করতে গেলে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে বিধানসভায় বিল আনতে হবে। জানা গিয়েছে, এই ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত হলে পাঁচ বছরের টাকাতে ১৫ বছরের ট্যাক্স মেটাতে পারবে ছোট বাণিজ্যিক গাড়ি।