সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: রাজ্যে ভোটের আগে স্বস্তিতে পাহাড়ে একদা প্রতাপশালী নেতা বিমল গুরুং (Bimal Gurung)। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অধিকাংশ মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু করল রাজ্য সরকার। এমনই খবর রাজ্যের আইন দপ্তর সূত্রে। জানা গিয়েছে, বছর কয়েক আগে দার্জিলিংয়ে বিভিন্ন আদালত বিমল গুরুং ও রোশন গিরির বিরুদ্ধে থাকা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, অগ্নিসংযোগ, বেআইনি জমায়েত, জাতীয় সড়ক অবরোধ-সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা প্রত্যাহারের কাজ শুরু করল রাজ্য। প্রত্যাহার করা মামলার সংখ্যা কমবেশি ৭০। এই মর্মে সরকারি নোটিস দিন দুই আগে রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে পৌঁছেছিল। যেসব আইনজীবী গুরুংয়ের বিরোধিতায় মামলা লড়ছিলেন, তাঁদের কাছেও সরকারি বিজ্ঞপ্তি পৌঁছে গিয়েছিল। আর শনিবার থেকে প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। তবে গুরুংয়ের বিরুদ্ধে UAPA ধারায় মামলা এখনও চলবে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে বিরোধী মহলে তীব্র আপত্তির সুর। শিলিগুড়ির বিধায়ক তথা বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্য মনে করেন, তৃণমূল রাজ্য সরকারকে ব্যবহার করে যেভাবে রাজনীতি করতে চাইছে, তা ভয়ংকর ধারার প্রচলন করছে। দেশীয় সার্বভৌমত্ব প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক সুজয় ঘটক মনে করেন, তৃণমূলের কাছে রাজনীতি দেশের নিরাপত্তা চেয়ে অগ্রাধিকার লাভ করেছে যা ন্যক্কারজনক এবং মেনে নেওয়া যায় না। ছত্রধর মাহাতো এবং বিমল গুরুং এর মতো লোককে রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ক্লিনচিট দেওয়া উচিত নয়। বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রথীন বসু তৃণমূল কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করে বলেন, তৃণমূলের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। নিজেরাই দেশদ্রোহিতার মামলা দিয়ে, নিজেরাই তা তুলে নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জার কিছু হয় না। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে চলে আসার কারণেই একশোর কম আসনে সীমাবদ্ধ থাকবে তৃণমূল। তবে এ বিষয়ে তৃণমূলের তরফে কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
[আরও পড়ুন: নিমতিতা কাণ্ডের রেশ কাটার আগেই সুতিতে মিলল বস্তাভরতি বারুদ, আতঙ্কে স্থানীয়রা]
বছর কয়েক আগে দার্জিলিং পাহাড়ে একাধিক সমাজবিরোধী মূলক কার্যকলাপে যুক্ত থাকায় তৎকালীন জনমুক্তি মোর্চার প্রেসিডেন্ট বিমল গুরুং, সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। এরপর ২০১৭ সালে পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলাকালীন ভানুভবনে হামলা চালানোর পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এরপর গুরুং অজ্ঞাতবাসে চলে যান। গত বছরের পুজোর সময়ে আচমকা ফিরে আসেন তিনি। তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন। গুরুংয়ের মুখে এও শোনা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চান। এসবের জেরেই কি তাঁর বিরুদ্ধে নরম মনোভাব দেখাল রাজ্য সরকার? কারণ এটাই, তা ধরে নিয়ে বিরোধী মহলে তীব্র আপত্তি।