অর্ণব দাস ও জ্যোতি চক্রবর্তী: মতুয়া সম্প্রদায়ের তরফে আমন্ত্রণ পেয়েও তা শেষমেশ রক্ষা করতে পারলেন না রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Jagdeep Dhankhar)। শুক্রবার ঠাকুরনগরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু মাঝপথ থেকেই কলকাতা ফিরে আসেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী সুদেশ ধনকড়।
মতুয়া ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও ঠাকুরনগরে বারুণী মেলা আয়োজিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত হতেই রাজ্যপালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন জগদীপ ধনকড়। আজ রওনাও হয়েছিলেন সস্ত্রীক। কিন্তু হঠাৎই মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন রাজ্যপাল ও তাঁর স্ত্রী। প্রথমে শোনা যায় ব্যক্তিগত কারণেই নাকি ফিরে এসেছেন তিনি। কিন্তু সূত্রের খবর, আচমকা অসুস্থ বোধ করেন রাজ্যপাল (Jagdeep Dhankhar)। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে রাজভবনে ফেরেন।
[আরও পড়ুন: রাজ্যসভার সদস্য সংখ্যায় ৩ দশকের রেকর্ড ভাঙল BJP, ‘প্রধান বিরোধী’ তকমা হারাতে পারে কংগ্রেস]
এদিকে রাজ্যপালের সফরের দু’দিন আগেই উত্তপ্ত হয় বারাসত এলাকা। মতুয়া পুণ্যার্থীদের বাসে হামলা এবং মারধরের ঘটনায় সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে মতুয়ারাই বুঝে নেবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। বারাসত থানায় এই ঘটনার লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ঘটনার তদন্তে নেমে বৃহস্পতিবার রাতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৩০ মার্চ রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুর থেকে বাসে করে একজন পুণ্য়ার্থী ঠাকুরনগরের বারুণী মেলায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। গভীর রাতে বাস বারাসতের কাজিপাড়ায় পৌঁছায়। অভিযোগ, সেই সময় বাস থামিয়ে পুণ্যার্থীদের উপর হামলা চালায় একদল দুষ্কৃতী। প্রথমে বাসের মধ্যে থাকা মহিলাদের উদ্দেশে কটুক্তি করা হয়। প্রতিবাদ করতেই সুমন হালদার এবং বিধান হালদারকে বাস থেকে টেনে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে হামলাকারীরা। পরে আহত দু’ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বিধানকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্ত সুমনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় রাতেই তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার একটি হাসপাতালে।
[আরও পড়ুন: কিছুতেই রোগা হতে পারছিলেন না! মানসিক অবসাদে আবাসনের ১১ তলা থেকে ঝাঁপ কলকাতার প্রৌঢ়ের]
অভিযোগ উঠেছে বাস ভাঙচুর করারও। এ বিষয়ে বারাসত থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়। ঘটনা জানামাত্রই সরব হন মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। তিনি পুলিশ প্রশাসনকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি পুলিশকে। এর মধ্যে যদি হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হন, তাহলে মতুয়ারাই বুঝে নেবে বিষয়টি।” প্রতিবাদে শুক্রবার হাবড়া স্টেশনে রেল অবরোধ করেন মতুয়া ভক্তরা। এরপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কি না,তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এদিন সংসদেও ওঠে বারাসতের কাজিপাড়ার ঘটনার কথা। প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, বাংলায় মতুয়াদের উপর নির্যাতন হয়েই চলেছে। এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করা হোক।