shono
Advertisement

ছাত্রদের বন্ধু হতে হবে শিক্ষককে, কচিকাঁচাদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে জোট বাঁধল স্বাস্থ্য শিক্ষা দপ্তর

করোনাকালে দুই দপ্তরের পদক্ষেপে খুশি মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।
Posted: 02:07 PM Jul 22, 2021Updated: 02:09 PM Jul 22, 2021

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ‘তোতা কাহিনী’তে রাজা জিজ্ঞেস করেছিল, “পাখিটা কি ডাকে?” পরিষদের উত্তর ছিল, “না।”
রাজার পালটা প্রশ্ন “পাখিটা কি চিৎকার করে?” “আরে রাম।” উত্তর দিয়েছিল রাজার পরিষদের দল। করোনা (Coronavirus) আবহে টানা ১৮ মাস স্কুলের মুখ না দেখা পড়ুয়াদের একাংশ ‘তোতা কাহিনী’র মতো নয়তো? এই প্রশ্ন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের। সংশয় রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের (West Bengal Health Department)। কেন এমন প্রশ্ন উঠেছে দুই দপ্তরের কর্তাদের মধ্যে? উত্তর খুঁজতে কয়েকদিন আগে দুই দপ্তরের শীর্ষকর্তারা স্বাস্থ্য ভবনে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনায় বসেন। সেখানেই যে সব তথ্য উঠে এসেছে, তাতে সংশয় আরও বেড়েছে।

Advertisement

অনলাইনে দীর্ঘদিন ক্লাস (Online Class) করে বেশিরভাগ পড়ুয়া একঘেয়েমিতে ভুগছে। তারা স্কুল দেখতে চায়। কেউবা আবার পরিবেশের অস্বাস্থ্যকর অবস্থার কথা বলেছে প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাকে। আবার কেউ বই-খাতা সরিয়ে রেখে পরিবারের আর্থিক সাহায্যে লেগে পড়েছে। আর এই সব খণ্ডচিত্র দ্রুত মুছে ফেলে শিশু-কিশোর, কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে দুই দপ্তর একযোগে। শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রশিক্ষণ নেবেন স্বাস্থ্য দপ্তরে। তাঁরাই আবার সহ-শিক্ষককে শেখাবেন কীভাবে করোনা আবহে একঘেয়েমি কাটিয়ে তাঁদের প্রিয় ছাত্রছাত্রীর মানসিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করা যায়।

[আরও পড়ুন: ধর্ষণের অভিযোগে দাদা গ্রেপ্তার হতেই পিছিয়ে এলেন তরুণী, মামলা প্রত্যাহারের আরজি]

স্কুল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের মধ্যে মত বিনিময়ের সময় জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ ঘরবন্দি পড়ুয়া এবার স্কুলে যেতে চায়। তারা চায় সহপাঠীর সঙ্গে আবার খুনসুটিতে মেতে উঠতে। এমনকী, যে শিক্ষক বা শিক্ষিকাকে রীতিমতো ভয় করত, তাঁকেও কাছ থেকে দেখতে চায়। একটু বড় পড়ুয়াদের (Student) মধ্যে আবার নেশায় আগ্রহ দেখা গেছে। এই ঘটনা শুধু কলকাতার নয়, মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা উত্তরবঙ্গের জেলাতেও। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তীর কথায়, “ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত স্কুল পড়ুয়াদের পঠনপাঠন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। লেখাপড়ার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশে উদ্যোগ নিয়েছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। স্বাস্থ্য দপ্তর শুধুমাত্র শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবে। আগস্টের শেষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। স্কুলপিছু দু’জন করে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে এবং প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রশিক্ষণ দেবে।”

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, প্রথম দফায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ হবে। এরপরে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জেলা। কোন কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার প্রাথমিক রূপরেখাও ঠিক হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “এক ঘণ্টা করে ক্লাস হবে। বয়ঃসন্ধির সমস্যা ও তার দ্রুত সমাধানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের (Teacher) যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে সেই বিষয়টিকে মনে রেখেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।” ওই স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “মা-বাবা বন্ধুর মতো। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধু হয়ে ওঠা যায় না। শিক্ষক-শিক্ষিকা অনেক সময় সেই পাঁচিল ভেঙে মিশে যান তাঁর পড়ুয়ার সঙ্গে। ধৈর্য ধরে তার সমস্যা শোনেন। সমাধান করেন। এমন উদাহরণ অনেক। তাই স্কুল শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে এমন উদ্যোগ।” দুই দপ্তরের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. রঞ্জন ভট্টাচার্যর কথায়, “শিশু-কিশোরদের জীবন থেকে দুটো বছর চলে গেল। ওরা কারও সঙ্গে মিশতে পারল না। ছোটরা দেখে শেখে। অনুসরণ করে। অতিমারী আবহে সেই পরম্পরা ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছে। তবে দেরিতে হলেও দুই দপ্তর যে এই পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে শিশু কিশোরদের সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে।

[আরও পড়ুন: পার্কস্ট্রিটের হোটেলের পার্টিতে কারা জোগান দিত মদ ও মাদক? উত্তর পেতে ৬ ম্যানেজারকে ফের তলব]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement