জ্যোতি চক্রবর্তী বনগাঁ: অশান্ত আফগানিস্তান (Afghanistan Crisis) থেকে ফিরে এসেছিল গ্রামের বন্ধুরা। কিন্তু গোপালনগরের যুবক জয়ন্ত বিশ্বাস তাঁদের সঙ্গে ফেরেননি। প্রবল দুশ্চিন্তায় ছিল তাঁর পরিবার। অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের ছেলে ফেরে ঘরে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন জয়ন্তর বাবা ও মা। কিন্তু বন্ধুরা ফিরে এলেও জয়ন্ত কেন দেশে ফেরেননি? কেন তিনি তালিবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ছিলেন আফগানিস্তানে? দায়িত্ববোধ। জবাব গোপালনগরের যুবকের। মার্কিন সেনার জন্য খাবার তৈরির কাজ করতেন জয়ন্ত। সেই দায়িত্ব অসম্পূর্ণ রেখে ফেরত আসতে পারেননি তিনি।
জয়ন্ত ফেরায় উৎসবের পরিবেশ বিশ্বাস বাড়িতে। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন যুবক। স্ত্রীর হাতে মিষ্টি খান। তারপরই বলেন, “আমার দায়িত্ববোধ আছে। বন্ধুদের সঙ্গে আগেই চলে আসব ঠিক করেছিলাম। কিন্তু দেখি আমার সামনে আমেরিকার কয়েক হাজার সৈনিক দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁদের না খাইয়ে আমি কেমন করে আসি? তাঁরা তো আমাদের এত বছর ধরে বেতন দিচ্ছে। তাতেই আমাদের সংসার চলছিল৷ দায়বদ্ধতা থেকে কয়েকজনের সঙ্গে আমিও থেকে গেলাম সেখানে।”
[আরও পড়ুন: Taliban Terror: ভয়াবহ সংঘর্ষে রক্তাক্ত পঞ্জশির, তালিবানের হাতে খুন আমরুল্লা সালেহর দাদা]
তবে কাবুলের কিছু স্মৃতি এখনও জয়ন্তকে তাড়া করে বেড়ায়। তালিবানের ভয়ে (Taliban Terror) হাজার হাজার আফগান কাবুল বিমান বন্দরে ঢুকে আতঙ্কে ছোটাছুটি করছে। এ দৃশ্য দেখে তাঁর মন ভারাক্রান্ত হয়েছিল। জয়ন্ত জানান, প্রায় ৩ বছর আগে মার্কিন সেনাদের জন্য রান্না ও খাবার সরবরাহের কাজ করতে একটি সংস্থার হাত ধরে কাবুলে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কাবুলে গিয়েছিলেন গোপালনগর রামশংকরপুরের আর ৩ জন। তালিবান কাবুল দখলের পর ৩১ আগস্টের মধ্যে বিদেশিদের চলে যেতে বলে। আতঙ্কিত হয়ে বেশিরভাগ সহকর্মীরা বাড়ি ফিরলেও জয়ন্ত তাদের সঙ্গে ফেরেননি। ২৬ আগস্ট কাবুল থেকে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে দিল্লিতে পৌঁছান। ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামে ফেরেন। মার্কিন সেনারা ডাকলে আবার তিনি আফগানিস্তানে যেতে প্রস্তুত বলেই জানান গোপালনগরের বাসিন্দা।
জয়ন্তর পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি ফিরেছেন তাঁর বন্ধু রাজেশ বিশ্বাসও। রাজেশের বাড়ি পাশের খরুড়া রাজাপুর গ্রামে। তিনি মার্কিন সেনাদের খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন। তবে রাজেশ আর আফগানিস্তানে যেতে চান না। তাঁর কথায়, “আফফানরা দেশ ছাড়তে চেয়ে বিমানবন্দরে জড়ো হয়েছিলেন। বিমান ধরে ঝুলতে গিয়ে তাঁদের পড়ে যেতে দেখেছি।”