সুব্রত বিশ্বাস: কাটিহার এক্সপ্রেসে বালির তবলার শিক্ষক খুনে কি গুজরাট যোগ? সম্প্রতি গুজরাটের ভালসাদ পুলিশ ও রেল পুলিশ হরিয়ানাবাসী রাহুল জাট নামের এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করার পর সেই প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে। ধৃত রাহুল 'সিরিয়াল কিলার'! দেশজুড়ে বিভিন্ন ট্রেনে খুন, ধর্ষণের-সহ একাধিক অপরাধে সে যুক্ত বলে অভিযোগ। বাংলার তবলার শিক্ষক খুনের কিনারায় ভালসাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে যাওয়ার পরিকল্পনা হাওড়া পুলিশের।
সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিভিন্ন ট্রেনে এমন ধরনের অপরাধে নানা রাজ্যের রেল পুলিশ তটস্থ ছিল। পর পর খুনে গুজরাটের ভালসাদ পুলিশ ও রেল পুলিশ বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে তদন্ত শুরু করে। পাঁচ রাজ্যের এক হাজারের মতো সিসিটিভি খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। সাত হাজারের মতো যাত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন পুলিশ কর্তারা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লম্বা এক ব্যক্তি, যার পায়ে সমস্যা, সে ট্রেন থেকে নেমে যাচ্ছে। প্রতিটি সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে, খুনের পর চাদর মুড়ে রাখা হয় খুন হওয়া যাত্রীকে। ধৃতের কাছ থেকে বেশ কিছু চাদরও পাওয়া গিয়েছে, যা খুন হওয়া যাত্রীদের গায়ে জড়ানো ছিল। বালির শিক্ষকের দেহেও চাদর জড়ানো ছিল।
এদিকে গুজরাটের ১৯ বছরের এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে রাহুলের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে মোবাইল ফোনের লোকেশান ধরে রাজস্থান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আরও অভিযোগ, মহারাষ্ট্রের সোলাপুর স্টেশনের কাছে এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করে। তার পর সেকেন্দরাবাদেও এক মহিলাকে খুন করে সে।
ধৃত রাহুল জাট।
গ্রেপ্তার করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই চমকে যান পুলিশকর্তারা। সম্প্রতি, বিভিন্ন রাজ্যের ট্রেনে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে থাকে। খুনগুলো সে করেছে বলে শিকার করে নেয় রাহুল। তখনই জানা যায়, ডাউন কাটিহার এক্সপ্রেসে তবলার শিক্ষককেও সে খুন করেছে। ধৃতের থেকে একাধিক ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো মৃতদের মোবাইল ফোন বলে খবর।
বিষয়টি জানতে পেরে হাওড়া পুলিশ ভালসাদ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। হাওড়া রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তবলার শিক্ষক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় খুনে এখনও কোনওরকম সন্দেহজনক সূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে খুনি ভিনরাজ্যের হতে পারে।
রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার ভবানীভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, "মোবাইল ফোনের লোকেশন ধরে আমরা গতিবিধির উপর নজর রাখছিলাম। সেই মতো স্টেশনগুলোকে অ্যালার্ট করতে থাকি। তার পর সেলিমে গিয়ে ফোনটি সুইচ অফ হয়ে যায়। তার পর সেখান থেকে কী করে অভিযুক্ত গুজরাটে গেল তা জিজ্ঞাসাবাদের পর পরিষ্কার হবে।"
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার কাটিহার এক্সপ্রেসের আপার বার্থ থেকে তবলা শিক্ষক সৌমিত্রবাবুর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। হাওড়া কারশেডে ট্রেন সাফাইয়ের সময় চাদর মোড়া দেহ দেখতে পান সাফাইকর্মীরা। পুলিশের অনুমান তাঁকে খুন করা হয়েছে। সেই ঘটনায় রাহুল জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। নতুন সূত্র পেয়ে সেই পথেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে রাজ্য পুলিশ।