স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফল সামনে আসতেই বিজেপির অন্দরে নব্য-আদি সংঘাত চরমে। পুরনো নেতা ও কর্মীদের বড় অংশের অভিযোগ, দলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি পরিবর্তন না করা এবং প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ থেকে দলের পুরনো নেতা-কর্মীদের বড় অংশ প্রচারে অংশ নেননি। ভোটদানেও বিরত ছিলেন। পরিণতিতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় এবার উপনির্বাচনে দশ হাজার ভোট কম পেয়েছে দল। শুক্রবার ফলাফল প্রকাশের পরই রাতে পুরনো ক্ষুব্ধ নেতা ও কর্মীরা একপ্রস্থ বৈঠক করে দলের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্বকে মেল করে চিঠি পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। জানা গিয়েছে, ওই চিঠিতে তাঁরা খোলাখুলি জানাতে চলেছেন, দ্রুত জেলা সভাপতির পরিবর্তন করা না হলে লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি অনিবার্য।
কার্যত জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির ঘরে-বাইরে দলের জেলা সভাপতি পরিবর্তনের দাবি ঘিরে নব্য-আদি দ্বন্দ্ব যে বেড়েই চলেছে, সেটা ধূপগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচন আরও একবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। দলের পুরনো নেতৃত্বের ক্ষোভের কথা অস্বীকার করেননি বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য এবং কিষাণ মোর্চার উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক শ্যামচাঁদ ঘোষ। তিনি বলেন, “বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে ধূপগুড়ির পুরনো নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা কিছু বলতে চেয়েছেন। তাঁদের আশ্বস্ত করেছিলাম ভোটের পরে আলোচনা হবে।” কিন্তু কোনও আশ্বাসেই যে ডাল গলেনি ফলাফলে স্পষ্ট।
[আরও পড়ুন: মরক্কোয় মৃত্যুমিছিল চলছেই, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ২ হাজার]
শুক্রবার পরাজয়ের বার্তা মিলতে রাতেই পুরনো নেতৃত্ব ও কর্মীদের একাংশ বৈঠকে বসেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, ভোটের ফলাফলের পরিসংখ্যান দিয়ে তারা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বোঝাবেন দলের জেলা সভাপতিকে অপসারিত না করায় কতটা মাশুল দিতে হল! কয়েকজন ক্ষুব্ধ নেতা জানান, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ১ লক্ষ ৩ হাজার ৫৩৩। এবার উপনির্বাচনে দল পেয়েছে ৯৩ হাজার ৩০৪। ভোট কমেছে ১০ হাজার ২২৫টি। প্রশ্ন, ওই ভোট গেল কোথায়? তৃণমূল অথবা বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে? পুরনো নেতৃত্বের দাবি, মোটেও না। কারণ, তৃণমূলের ভোট কমেছে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৯৯ হাজার ২৯৩। এবার উপনির্বাচনে পেয়েছে ৯৭ হাজার ৬১৩ ভোট। ২ হাজার ১৯ ভোট কমেছে। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেস জোটের ভোট বেড়েছে মাত্র ৮৪৫টি। তবে ওই ভোট গেল কোথায়?
পুরনো ক্ষুব্ধ নেতৃত্ব জানান, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ধূপগুড়ি ব্লকে যে পুরনো নেতা কর্মীরা যোগ্য মর্যাদার দাবিতে সরব ছিলেন তাঁদের অনেকেই প্রচারে অংশ নেয়নি। এমনকি প্রথমসারির কর্মী তারামণি রায় জেলা নেতৃত্বের কার্যকলাপে বিরক্ত হয়ে নির্দল হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা করেছিলেন। দলের জেলা সভাপতির পরিবর্তন চেয়ে সাংগঠনিক পদ থেকে গণইস্তফার মতো ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু দ্বন্দ্ব মেটানোর কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ হয়নি। ভোটের আগে দলের জেলা সভাপতির লাথি মারা কান্ড সেটাকে আরও উসকে দিয়েছে। তারই ফল মিলেছে। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য এবং কিষাণ মোর্চার উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক শ্যামচাঁদ ঘোষ অবশ্য বলেছেন ফলাফলের সবদিক পর্যালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।