‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর প্রোমোশন থেকে বহু কষ্টে তাঁকে একান্তে আনা গেল। ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মদিনের মুখে র্যাপিড ফায়ারের লক্ষ্যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। প্রশ্নকর্তা ইন্দ্রনীল রায়।
১) একটা স্টেজের পর জন্মদিনের পায়ে পায়ে মৃতু্যভয় এসে পড়ে। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুভয় হয়?
প্রসেনজিৎ: হ্যাঁ হয়।
২) কাটান কী ভাবে?
প্রসেনজিৎ: কাজে ডুবে। মৃত্যুভয় এলেই সেটা মাথা থেকে বের করে ভাবি কী কী কাজ বাকি আছে। কোনও নতুন মিটিং ফেলি। নিজেকে ব্যস্ত রাখি।
৩) সুপারস্টাররা কি জন্মদিনে গিফট এক্সপেক্ট করেন?
প্রসেনজিৎ: নিশ্চয়ই করি। কিছু কিছু গিফট অ্যাডভান্স এসেও গেছে।
৪) কী পেতে ভাল লাগে?
প্রসেনজিৎ: যে কোনও গিফট যা হৃদয় থেকে দেওয়া। দাম কী ব্র্যান্ড, কোনও দিন সেগুলো ম্যাটার করে না। তবে পারফিউম আমার খুব ফেভারিট।
৫) আপনি নিজে কী পারফিউম ব্যবহার করেন?
প্রসেনজিৎ: ‘পোলো’ আমার চিরকালীন ফেভারিট পারফিউম। এই মুহূর্তে ‘পোলো ব্ল্যাক’ আমি রোজ ব্যবহার করি। এ ছাড়া শুটিংয়ের সময় যে পারফিউমটা ইউজ করি সেটা লোমানির ‘সিগনেচার অমিতাভ বচ্চন’ পারফিউম। লাস্ট পনেরো বছর শুটিং ফ্লোরে ওটাই আমার ফেভারিট।
৬) মেয়েদের কোন পারফিউম আপনি পছন্দ করেন?
প্রসেনজিৎ: (হাসি) সে রকম স্পেসিফিক কিছু নেই কিন্তু ‘গুচি ফর উইমেন’ আমার অলটাইম ফেভারিট।
৭) এমন কেউ আছে যার উইশ জন্মদিনের দিন না এলে আপনার খারাপ লাগে?
প্রসেনজিৎ: অনেকে আছেন। তবে বেশির ভাগ মানুষই উইশ করেন।
৮) তাও একটা নাম যার উইশ না এলে দুঃখ হয়?
প্রসেনজিৎ: (হেসে) কোনও কাছের প্রিয় বন্ধু।
৯) এবারের জন্মদিনে রেজোলিউশন কী?
প্রসেনজিৎ: এখনও ভাবিনি। সে রকম কোনও নেশা নেই যে সেটা ছাড়ার কথা ভাবব। একটাই রেজোলিউশন থাকতে পারে- জিমে সময়টা আরও বাড়িয়ে দেওয়া। জিমে সময় বাড়ানোর কারণ ‘গুমনামী বাবা’-র জন্য আমাকে একটু ওয়েট বাড়াতে হচ্ছে। ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটসের মাত্রাটা বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে বিল্ডটা বাড়ে। এই ওয়েট বাড়ানোর জন্য যে এক্সারসাইজগুলো আছে সেগুলো করার জন্যই সময়টা বাড়াব।
১০) এমন কোনও জন্মদিন যা ভুলে যেতে চান?
প্রসেনজিৎ: শুধু একটা জন্মদিন কেন, বেশ কিছু জন্মদিন এমন আছে যখন বাড়িতে শুধু একটা ছোট্ট কেক এনে কাটা হয়েছে। তার বেশি কিছু করার ক্ষমতা ছিল না আমাদের। অ্যাফোর্ডই করতে পারতাম না। সেই দিনগুলো, সেই জন্মদিনগুলো আর মনে রাখতে চাই না। কিন্তু সেই দিনগুলো ছিল বলেই আজকাল জন্মদিনটা সেলিব্রেট করতে পারছি।
১১) ৩০ সেপ্টেম্বর কারা উইশ করল না সেই হিসেব পরের দিন সকালে করেন?
প্রসেনজিৎ: (হেসে) করি। মাঝেমধ্যে করি। কারা উইশ করল না বা কারা টুইটে কিছু লিখল না।
১২) জন্মদিনে কেক না পায়েস?
প্রসেনজিৎ: এনি ডে পায়েস।
১৩) অনেকে আছে যারা এক সময় আপনার জীবনের অভিন্ন অংশ ছিল। তারা আজ মনে রেখে উইশ করলে খারাপ লাগে না আনন্দ হয়?
প্রসেনজিৎ: আনন্দ হয়।
[ কমবয়সি পার্টনার এখন নতুন ট্রেন্ড! কী বলছে নবীন প্রজন্ম? ]
১৪) ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। দেবশ্রী রায়। যদি অপশন থাকত জন্মদিনে এঁদের কাছে থেকে একটা গিফট চাওয়ার, কী চাইতেন?
প্রসেনজিৎ: দু’জনের কাছেই দুটো ভাল সিনেমা চাইতাম। এর বেশি কিছু নয়।
১৫) আজকের প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় কি লং ড্রাইভে যান?
প্রসেনজিৎ: (হাসি) শো ছাড়া আর লং ড্রাইভে যাওয়া হয় না। সময় পাই না।
১৬) অপরাজিতা আঢ্য এখন বড় বড় ছবিতে আপনার অনস্ক্রিন ওয়াইফ। অপরাজিতার একটা গুণ বলুন যা ওঁকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়?
প্রসেনজিৎ: অপা-র প্রাণখোলা হাসি।
১৭) জন্মদিনের সকালে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে আশীর্বাদ চাইতে গেলে কী চাইবেন?
প্রসেনজিৎ: এই বয়সে এসেও যে উদ্দীপনার সঙ্গে উনি কাজ করে চলেছেন, সেই পাওয়ারটা চাইতাম।
১৮) কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় আর আপনি। সৃজিত আর আপনি। দুটো টিমের মধে্য পার্থক্য কী?
প্রসেনজিৎ: আমার যেটা মনে হয়, যেহেতু আমি সৃজিতের প্রথম ছবিতেই ছিলাম, তাই সৃজিত প্রথম থেকেই ওয়াইডার অডিয়েন্স নিয়ে শুরু করেছে। অন্য দিকে কৌশিক কিন্তু প্রসেনজিতের সঙ্গে টিম করে ওয়াইডার অডিয়েন্স খুঁজে পেয়েছেন। এটাই পার্থক্য।
১৯) লোকে বলে আপনি ট্যালেন্ট চিনতে পারেন সবার আগে। কী দেখেন মানুষের মধ্যে যা আপনাকে বলে দেয় এই মানুষটা ট্যালেন্টেড?
প্রসেনজিৎ: পাগলামো এবং ডেডিকেশন।
২০) অনেকে বলেন আপনি সব ব্যাপারেই অতিরিক্ত টেনশন করেন। ভীষণ হাইপার। এমন কোনও জিনিস আছে যে ব্যাপারে আপনি হাইপার হন না?
প্রসেনজিৎ: এটা গৌতম ভট্টাচার্যর প্রশ্ন। আমি আজও একটা ব্যাপারে হাইপার হই না। ধরুন কাউকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছে। সে যদি সেই কাজটা শেষ না করেও বিরাট কোহলির ব্যাটিং দেখে বা মেসি কী রোনাল্ডোর খেলা দেখে, আমি হাইপার হই না। কারণ আমি মনে করি জীবনকে বুঝতে হলে মানুষের ভাল খেলা দেখা দরকার।
২১) আপনার বাড়িতে দশটা খবরের কাগজ আসে। নিজের সম্পর্কে কী বেরোল, সেটা কি আজও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েন? না কি এত বছর পরে আর কিছু মনে হয় না?
প্রসেনজিৎ: আমার খবরের কাগজ পড়া মানে পলিটিক্যাল পাতাগুলো ওলটানো। ছোটবেলার অভ্যাস বলে আজও খেলার পাতাটা পড়ি। আর সিনেমার পাতাটা মন দিয়ে দেখি। তবে আমাকে নিয়ে কী বেরোল সেটা আর খুঁটিয়ে পড়ি না। আমার মিডিয়ার বন্ধুরা আমাকে চেনে, জানে। মিসকোটের ভয় করি না।
২২) রোজ রাতে শুনি একটা সিনেমা দেখে ঘুমোতে যান। কখনও নিজের ছবি দেখেন?
প্রসেনজিৎ: নিজের ছবি কোনও দিন দেখি না। নেভার।
২৩) নানা ছবি নিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের কিছু ওয়ান-লাইনার ইন্ডাস্ট্রিতে বিখ্যাত হয়ে গেছে। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দেখে যেমন উনি বলেছিলেন ‘ওটা তো মিরাক্কেল- শুধু একটারপর একটা জোক বলছে সবাই।’ পাঁচটা ছবির নাম করছি। এগুলো নিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর নিজস্ব মেজাজে কী বলতে পারতেন? ‘জুলফিকার’, ‘দৃষ্টিকোণ’, ‘ময়ূরাক্ষী’, ‘প্রাক্তন’, ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’।
প্রসেনজিৎ: (হাসি) ‘জুলফিকার’ দেখে ও সৃজিতকে বলত, “এই ছবিটা মাল্টিস্টারার করার কি খুব দরকার ছিল?” ‘দৃষ্টিকোণ’ দেখে বলত, “বুম্বার চোখটা ঠিক হয়নি।” ‘ময়ূরাক্ষী’ দেখে বলত, “বুম্বাকে দিয়ে আমি আরও বেটার অভিনয় করিয়ে নিতে পারতাম।” ‘প্রাক্তন’ দেখে “কিছু কিছু ‘উৎসব’-এর মতো দৃশ্য করলি কেন রে শিবু?” আর ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’ নিয়ে বলতে হলে বলত, “কিশোরকুমার কেন ভাবলি কৌশিক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় জুনিয়র কেন নয়?”
২৪) ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই বলে, হিরোইনরা কখনও একে অপরের বন্ধু হয় না। হিরোরা কি একে অপরের বন্ধু হয়?
প্রসেনজিৎ: (হেসে) আশপাশে যা দেখছি, মনে হচ্ছে হিরোরাও একে অপরের বন্ধু হয় না।
২৫) আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কিশোরকুমারের সঙ্গে মিল পান?
প্রসেনজিৎ: (হেসে) একটা জায়গায় তো অসম্ভব মিল আছে। সেটা নিয়ে কোনও বক্তব্যই নেই। আর বাকিটার কথা বলতে ওই মানুষটার ট্যালেন্টের ধারেকাছে আমরা কেউ নেই।
[ পুজোয় সাজুন হ্যান্ডলুমের শাড়িতে, জেনে নিন কোথা থেকে করবেন শপিং ]
২৬) এত বছর কাজ করছেন। আপনাকে নিয়ে গসিপ, গুজব কোনওটাই কম হয় না। এই গুজব হজম করার ওষুধটা কী?
প্রসেনজিৎ: হিরোদের নিয়ে গুজব হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। আগে একটু অ্যাফেক্টেড হতাম। এখন এক কান দিয়ে ঢোকাই, অন্য কান দিয়ে বের করে দিই। এটাই ওষুধ।
২৭) রাজ্যসভার অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। লোকসভায় দাঁড়ানোর অনুরোধ এলে কী করবেন?
প্রসেনজিৎ: সেটাও বোধহয় ফিরিয়ে দেব।
২৮) হিরো হিসেবে এতদিন ইন্ডাস্ট্রিটা চালিয়েছেন। পরিচালক হিসেবে কবে থেকে চালাবেন?
প্রসেনজিৎ: খুব শিগগির। এখন ওটাই আমার টার্গেট। ডিরেক্টর হওয়া।
২৯) ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’ তো হল। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় জুনিয়র কে হতে পারে?
প্রসেনজিৎ: ওটা হতে পারে একমাত্র তৃষাণজিৎ চট্টোপাধ্যায়। ওটা রক্তে না থাকলে হবে না (হাসি)।
৩০) লাস্ট প্রশ্ন, জন্মদিনে কখনও ইচ্ছে করে মেয়ের হাতে পায়েস খেতে?
প্রসেনজিৎ: ইচ্ছে তো করেই। এটাও ইচ্ছে করে, মেয়ের জন্মদিনে গিয়ে মেয়ে কেক কাটছে দেখি। কিন্তু সেটা হয় না। জীবনে সবটা বোধহয় পাওয়া যায় না।
The post ঋতুপর্ণা, দেবশ্রীর থেকে কী উপহার চান? অকপট প্রসেনজিৎ appeared first on Sangbad Pratidin.