অভিরূপ দাস: ৯৩৩০২১৬৩০৩। এ যেন মায়ের নম্বর। নিজের নাম, গোত্র এই নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ করলেই মিলবে আর্শীবাদ।
ঈশ্বরের দেশকাল ব্যবধান নেই। হোক না খড়-মাটি, বাঁশের তৈরি। অনলাইনে ঈশ্বরের স্নেহাশিস পাওয়ার এমনই ব্যবস্থা রয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত মন্দিরে। তবে শহরের কালীপুজোর ইতিহাসে প্রথম। শ্যামবর্ণা, স্বাস্থ্যবতী, মুক্তকেশী, দিগম্বরী, পীনপয়োধরা, শবরূপী মহাদেবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে পাথুরিয়াঘাটা বড়কালীর আর্শীবাদ পৌঁছে যাবে দুবাই, আমেরিকা গ্রীসেও।
১৯২৭ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঘাযতীনের হাতে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির। সেই থেকেই শুরু বড়কালীর কাঠামো পুজো। মুখে মুখে আজও তাই এটি পরিচিত বাঘাযতীনের কালী হিসেবেই। ৯৩ বছরের এ পুজোর ঐতিহ্য মারাত্মক। আভিজাত্যে কলকাতার প্রথম পাঁচ পুজোর মধ্যে এ পুজো সর্বাগ্রে। খোদ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর পা পড়েছিল যে চৌকাঠে। তা ডিঙিয়েই সেই ৩০ ফুট মূর্তি। শুভ্র দাঁতের মাঝে লোলজিহ্বা। দুই বাম হাতের একটিতে খড়গ। অপরটিতে অসুরমুণ্ড। দুই ডানহাত বরদান ও অভয় মুদ্রায়। বিবসনা দেবীর সর্বাঙ্গ নানা অলংকারে সুসজ্জিত। একবার যিনি দেখেছেন, বারবার তিনি এসেছেন। এমনই কবিতা ঘোরে পাথুরিয়াঘাটা বড়কালীকে ঘিরে। দর্শনার্থীদের সামলাতে নতুন জামা ঘেমে জবজব করে।
[আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণ নন, বাউরি সম্প্রদায়ের মহিলার পুজোতেই সন্তুষ্ট দেবী, জেনে নিন সাত বোন কালীর মাহাত্ম্য]
তবে এবার নয়। করোনা আবহে এবার পুজো শুধু আন্তরিকতায়। অগণিত ভক্তদের জন্য এবার নতুন পরিকল্পনা ক্লাব সদস্যদের। পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, মায়ের পুজোকে ঘিরে দুটি নম্বর চালু করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বরের মধ্যে সেখানেই জমা পড়ে গিয়েছে নাম গোত্র। পুরোহিত পুজোয় বসে সে নাম গোত্র ধরে পুজো দেবেন। সে পুজো নিজের কানে শুনতে চান? তাহলে পাথুরিয়াঘাটা ব্যায়াম সমিতির ফেসবুক পেজে চোখ রাখতে পারেন। ক্লাব সদস্যরা জানিয়েছেন, কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে বসে নিজের নামের পুজো দিতে নাম গোত্র জমা পড়ছে ঝড়ের বেগে।
মায়ের প্রণামীর বাক্সও এবার ভারচুয়াল। ইউনাইটেড ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার পোস্তা ব্রাঞ্চে এই কালীপুজোর নামে একাউন্ট খোলা হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রণামীও পাঠিয়ে দেওয়া যাবে। মহাভারতের সৌপ্তিক পর্বে পাথুরিয়াঘাটার এই দেবীর উল্লেখ রয়েছে। একাধারে যিনি অশুভশক্তি সংহারের প্রতীক আবার বরাভয় ও অপত্যস্নেহের আবরণে শুচিস্নিগ্ধ। তাঁর আর্শীবাদ পেতে ঢল নামবে এ আর আশ্চর্য কী? যিনি পুজো দিতে অর্থ পাঠাবেন, প্রয়োজনে তাঁর ই-মেলে ছবিও পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা।