দিপালী সেন: অপেক্ষা শুধু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সংকেতের। তা মিললে আগামী সপ্তাহেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় অধীনস্ত কলেজগুলিতে স্নাতক স্তরে পড়ুয়া ভরতির বিধি প্রকাশ করা হতে পারে। শুক্রবার স্পষ্টভাবে একথা জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শেষ ধাপের আলোচনা বাকি। তাঁর সবুজ সংকেত পেলেই জানিয়ে দেব।’’
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই) ও কাউন্সিল ফর দ্য ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফিকেট এক্সামিনেশনসের (সিআইএসসিই) দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আগেই। গত বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফলও প্রকাশ পেয়েছে। এরপর স্নাতক স্তরে ভরতির পালা। তবে, এখনও পর্যন্ত স্নাতক স্তরে পড়ুয়া ভরতি সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেনি উচ্চশিক্ষা দপ্তর। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, এবছর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে রাজ্যের সব কলেজে স্নাতক স্তরে পড়ুয়া ভরতি নেওয়ার কথা। কিন্তু, কবে থেকে, কোন নিয়মে তা হবে, তা স্পষ্ট হবে ভরতি বিধি প্রকাশের পরই। আবার জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী, এবছর থেকে এ রাজ্যে চার বছরের স্নাতক অনার্স কোর্স চালু করা হবে কি না, সেই বিষয়টিও উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিবেচনাধীন।
[আরও পড়ুন: বীরবাহা হাঁসদার গাড়ি ভাঙচুরের পর আসরে অভিষেক, কুড়মি বিক্ষোভ নিয়ে ফোন মুখ্যমন্ত্রীকে]
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘এবার দু’টি নতুন বিষয় রয়েছে। দু’টোর জন্যই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, সুব্যবস্থা ও নিরাপত্তার দরকার। যাতে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকে। দিন আনি, দিন খাইয়ের চক্করে তারা কোনও বিপদের মধ্যে পড়তে পারে। তাই পুরোটা যাতে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে সরকার আলোচনা চালাচ্ছে।’’ একইসঙ্গে তিনি জানান, দু’টি বিষয়ই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ও তাঁর অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে, রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস নির্দেশ দেওয়ার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজ সংক্রান্ত রিপোর্ট না পাঠানোয় কয়েকজন উপাচার্যকে কার্যত শো-কজ চিঠি পাঠানো হয়েছিল রাজভবন থেকে। এই পদক্ষেপ আইনি কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইনি পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এই গোটা ব্যাপারটাই আইনি না বেআইনি, তা নিয়ে আমরা আইনি পরামর্শ নেব স্থির করেছি। আদৌ এটা করা যায় কিনা সেটা দেখব।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দপ্তর যদি রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা না করে উপাচার্য ঠিক করে দিত বা এই ধরনের শো-কজের চিঠি আচার্যের দপ্তর না ঘুরিয়ে পাঠাত, তাহলে সেটা নিয়ে কী বলা হত?’’ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শো-কজ পাঠানো হয়নি। মনে করা হচ্ছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে সাপ্তাহিক রিপোর্ট পেয়েছে রাজভবন। সেবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘কারা রিপোর্ট জমা দিয়েছেন এবং কারা দেননি, এবিষয়ে আমরা ধোঁয়াশায় আছি। আমরা বেসরকারিভাবে খবর পেয়েছি। কিন্তু, তার ভিত্তি বা মূল্য কী? আমরা তো বারবার মাননীয় আচার্য, রাজ্যপালের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চাইছি, সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাইছি। সব উপাচার্যকে নিয়ে আমি রাজভবনে উপস্থিত হয়েছি। তাঁর সঙ্গে আমি সদর্থক বৈঠক চেয়েছি। কিন্তু, তিনি এককভাবে করতে চাইছেন। সেটা আইনি কি না, এখন সেটাই দেখার।’’
[আরও পড়ুন: মমতার পর কেজরিওয়াল, নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর]
কিছুদিন আগেই রাজ্য়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি তৈরির বিধিতে সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। রাজ্যের হাতেগোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে সবক’টিতেই বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য রয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ কয়েকটিতে উপাচার্য পদটি এক মাসের উপর ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে? ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। সার্চ কমিটিতে মুখ্যমন্ত্রীর নমিনি আছে, আচার্যের নমিনি আছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমার। তিনি খুব শীঘ্রই ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তাঁর নমিনি পাঠিয়ে দেবেন। আমরা আচার্যের নমিনির অপেক্ষায় থাকব। সেগুলো পেলেই আমরা কাজ শুরু করে দিতে পারব।’’ তবে, আচার্যের থেকে তাঁর নমিনির নাম পাওয়ার বিষয়ে সন্দিহান শিক্ষামন্ত্রী।