সোমনাথ রায়, শ্রীনগর: “ওটা ৮ তারিখে দেখাব...।”
শান্ত ডাল লেকের বুক চিরে তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শতাধিক শিকারা। শ্রীনগর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান মুখপাত্র তনবীর সাদিকের প্রচারে শিকারা র্যালি করছিলেন দলের সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা, শ্রীনগর কেন্দ্রের সাংসদ আগা সইদ রুহুল্লাহ মেহদিরা। দলের পতাকা হাতে হাসিমুখে পোজ দিচ্ছিলেন সাংবাদিকদের। সে সময়ই জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ভি সাইন দেখানোর অনুরোধ করতে প্রতিবেদককে উপরোক্ত কথাটি বললেন ওমর।
গত কয়েকদিনে তাঁর কিছু র্যালি দেখে, বিভিন্ন বক্তব্যে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রথম সরকার গঠনের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে ফারুক আবদুল্লার পুত্রকে। এদিনও শিকারা র্যালির মাঝে ডাল লেকের বুকে ছোট্ট ভূখণ্ড চার চিনারে কফি খেতে থামলেন, তখনও দেখা গেল একই প্রত্যয়। মাস পাঁচেক আগে শ্রীনগরের সদর দপ্তরে তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সুযোগ এসেছিল। সেই কথা মনে করাতেই “রাইট, রাইট...” বলে কাছে টেনে নিয়ে কাঁধে হাত রেখে হাঁটতে রাখলেন। “বঙ্গাল সে আয়ে হো কাশ্মীর কা ইলেকশন কভার করনে!” ভূস্বর্গের প্রতি বঙ্গবাসীর আগ্রহ তাঁকে বোঝাতে খুব একটা সময় লাগল না। হাঁটার মাঝে বললেন, “লাখ চেষ্টা করুক। স্থানীয় দলগুলিকে পিছন থেকে সাহায্য করা, কাউকে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া। বিজেপি আমাদের রুখতে পারবে না। কাশ্মীরের আওয়াম (জনতা) ওদের সব ছক ধরে নিয়েছে।” সঙ্গে জুড়লেন, “সবাই বলছে প্রচুর ভোট পড়েছে, তবে আমরা যতটা আশা করেছিলাম, ততটাও হয়নি। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ২০১৪-র থেকে কম ভোট পড়েছে। নুরাবাদে ৮০% বেশি পড়েছিল, এবার ৬০%। এমন আরও আছে। কেন্দ্রকে ভাবতে হবে কেন হচ্ছে? ওরা তো দাবি করে কাশ্মীরে এখন নাকি সব ঠিকঠাক আছে। কোনও ভয় নেই, বয়কট নেই। তাহলে কেন এত কম ভোটদান হল? তবুও যারা ভোট দিয়েছেন ধন্যবাদ। এভাবেই ভোট দিয়ে আমাদের সরকার গঠনে সাহায্য করুন।” একটু থেমে বললেন, “উপত্যকার সৌন্দর্য দেখিয়ে ওরা (বিজেপি) যতই দাবি করুক, সবাই খুব ভাল আছে, বাস্তবটা উল্টো। এই ডালের নিচে যেভাবে পাঁক জমে আছে, সাধারণ কাশ্মীরিদের মনের মধ্যেও তেমনই। গত ৬-১০ বছরে ওরা কী কষ্টে আছে, তা ওদের সঙ্গে কথা বললেই জানতে পারবেন।”
সোমবার কাশ্মীরে জনসভা রয়েছে রাহুল গান্ধীর। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কোনও বিজেপি হেভিওয়েট নেতা উপত্যকায় না এলেও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, রাহুল গান্ধীরা বারবার এখানে আসছেন। এই প্রসঙ্গে ওমরের বক্তব্য, “কাশ্মীরে না হলেও বিজেপির অনেক হেভিওয়েট নেতা জম্মুতে আসছেন। রাহুলজি ওদের পাল্টা দিতেই আসছেন। খাড়গেজিও এসেছেন। শুনেছি ওঁরা ফের আসবেন। ভালই তো। আরও বেশি করে আসা উচিত।”
অনেকেই মনে করছেন এবার হয়তো জম্মু-কাশ্মীরে ম্যাজিক ফিগার পাবে না কেউ। ত্রিশঙ্কু হলে নতুন করে শাসন ক্ষমতা চলে যেতে পারে উপরাজ্যপালের হাতে। এই প্রসঙ্গে ওমরের বক্তব্য, “যারা বলছেন ত্রিশঙ্কু হবে, তাদের কাছে হয়তো কোনও বিশেষ মেশিন আছে। তাতেই রেজাল্ট দেখতে পাচ্ছেন ও এই ধরনের কথা বলছেন। আসলে ওরা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষের মনে একটা আতঙ্ক তৈরি করে দিতে চাইছেন। বিজেপি তো চায়ই ত্রিশঙ্কু হোক। তাহলে উপরাজ্যপালের মাধ্যমে ছড়ি ঘোরাবে। আমরা তা হতে দেব না। কাশ্মীরের মানুষ তা হতে দেবেন না। যত এই ধরনের কথা ওরা বলবে, তত বেশি করে মানুষ এনসি-কংগ্রেসকে ভোট দেবে। চাইলে আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী জোট করতে পারতাম। কিন্তু কিছুতেই যাতে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাই আগে থেকেই জোট করেছি।”
এতদূর বলেই সামনে থাকা জেট স্কি-তে চেপে বসলেন ওমর। এরপর তীব্রগতিতে একাই ছুটলেন ডাল লেকের বুক চিরে। দেখালেন বিভিন্ন স্টান্ট। এটাই হয়তো এদিনের প্রতীকি ছবি। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা আগেই হয়ে আছে। নতুন করে পিডিপি বা অন্য কারও সাহায্য না নিয়ে হয়তো এভাবেই জম্মু-কাশ্মীরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন ওমর। স্টান্টের মতো যেখানে থাকবে নানা নতুন চমক।