shono
Advertisement

Breaking News

রোনাল্ডো কেন টিমে, প্রি কোয়ার্টারের আগে প্রশ্ন পর্তুগালেই

রেকর্ডের পিছনে দৌড়ন না রোনাল্ডো, রেকর্ড সিআর সেভেনের পিছনে দৌড়োয়! 
Posted: 02:22 PM Dec 06, 2022Updated: 02:22 PM Dec 06, 2022

দুলাল দে, দোহা: সময়টা সত্যিই ভাল যাচ্ছে না ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর (Cristiano Ronaldo)। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামার আগে পর্তুগিজ সাংবাদিকরা এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে হঠাৎই জিজ্ঞাসা করে বসেন, “সুইজারল্যান্ড ম্যাচে প্রথম একাদশে থাকবেন রোনাল্ডো?”

Advertisement

তাঁর চোট আছে বলে এমন কোনও খবর শোনা যায়নি। খেলতে অন্য সমস্যা আছে বলেও কেউ জানেন না। তারপরেও ফের্নান্দো স্যান্টোসকে সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর দেশেরই সাংবাদিকদের থেকে শুনতে হচ্ছে, সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোনাল্ডো প্রথম দলে থাকবেন? 

 

[আরও পড়ুন: জাপানের কাছে হারের তেতো স্বাদ ভুলে অ্যাটলাস সিংহের গর্জন থামাতে মরিয়া স্পেন]

 

হকচকিয়ে গিয়ে শুরুতে স্যান্টোস মন্তব্যই করতে পারেননি। শেষে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে মজা করেই বললেন, ‘‘টিম লিস্টটা আমি পর্তুগাল ক্যাম্পের লকারে ফেলে এসেছি। হাতের কাছে থাকলে বলতে পারতাম।’’ ম্যাঞ্চেস্টার পর্বের পর থেকে সময়টা সত্যিই ভাল যাচ্ছে না সিআরসেভেনের।

কিছুদিন আগেই ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়ার্স মরগ্যান সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে জিজ্ঞসা করেছিলেন, তিনি কি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলার? উত্তরটা দেওয়ার জন্য ক্ষণিকের ভগ্নাংশও ভাবতে হয়নি সিআর সেভেনকে। সঙ্গে সঙ্গে বলেন, তাঁর মতে তিনিই সেরা। কিন্তু বাকিদের কীভাবে সন্তুষ্ট করবেন তিনি? একজন ভাবে অন্য কোনও ফুটবলার সেরা। আরেকজনের মতে, অন্য কেউ। তবে ফুটবল ইতিহাসের বই থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া যাবে না।

সত্যিই মানুষের মন বোঝা সত্যিই কঠিন। নাহলে যে পর্তুগিজরা এতদিন ধরে রোনাল্ডোর নাম জপ করতেন, তাঁর নিজের দেশের সেই জনতাই এখন দাবি তুলেছে, মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রোনাল্ডোকে যেন প্রথম একাদশে না রাখা হয়! প্রি কোয়ার্টার ফাইনালের আগে এরকম খবর দোহায় এসে পৌঁছলে কোন মহাতারকার মুড ঠিক থাকে? ফলে সুইস ম্যাচের আগে কোচের সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনেই এলেনই না সিআর সেভেন।

ফর্মে ফিরে আসা শুধু নয়, তাঁর প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি (Lionel Messi) চারটে ম্যাচ খেলে তিনটে গোল করে বসে আছেন। সেখানে তিনি বিশ্বের এক নম্বর গোলদাতা হয়েও প্রথম তিনটে ম্যাচ শুরু থেকে খেলতে নেমে গোল করেছেন মাত্র একটি! তাও আবার পেনাল্টি থেকে। কিন্তু পুরো ম্যাচে একবারও মনে হচ্ছে না, রোনাল্ডো মাঠে থাকলে কিছু একটা ঘটতে পারে। এখানেই যত সমস্যা।

পর্তুগালের (Portugal) প্রথম সারির দৈনিক ‘আ বোলা’ সেই দেশের জনগণের মধ্যে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সুইজারল্যান্ড ম্যাচকে কেন্দ্র করে। সমীক্ষায় প্রশ্ন ছিল, মঙ্গলবার রোনাল্ডোর কি প্রথম একাদশে থাকা উচিত? দেশের সত্তর শতাংশ মানুষ রায় দিয়েছেন, রোনাল্ডোকে মঙ্গলবার কিছুতেই প্রথম একাদশে রাখা ঠিক হবে না! এরপরই সবাই বলতে শুরু করেছেন, তাহলে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কোচ টেন হাগ রোনাল্ডোকে রিজার্ভে রেখে দিয়ে ভুলটা কী করেছেন?

‘আ বোলা’র সমীক্ষাটা নিয়ে এদিন পর্তুগাল শিবিরে মারাত্মক চাপা টেনশন তৈরি হয়েছে। রোনাল্ডো প্র্যাকটিসে এসেছিলেন। কিন্তু সেই হাসিখুশি ভাবটাই যে নেই। অন্যদিন হলে প্র্যাকটিসে মজা করেন সতীর্থদের সঙ্গে। এদিন প্র্যাকটিসে সংবাদমাধ্যমের দেখার অধিকার ছিল মাত্র শুরুর ১৫ মিনিট। তাতে দেখা গেল, শুরুতে একপাশে একা দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিং করলেন। তারপর পেপের সঙ্গে কিছুক্ষণ ওয়ান-টু খেললেন। ব্যস।

আগেরদিন কোরিয়ার বিরুদ্ধে রোনাল্ডোকে দ্বিতীয়ার্ধে কোচ তুলে নেওয়ার পরই মূল সমস্যাটা শুরু হয়। মারাত্মক বিরক্ত দেখাতে থাকে তাঁকে। সবাই ভেবে বসেন, স্যান্টোসের তাঁকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা ভালভাবে নিতে পারেননি তিনি। যদিও রোনাল্ডো এবং স্যান্টোস দু’জনেই ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পরিস্থিতিটার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। রোনাল্ডোর সমস্যাটা হয়েছিল কোরিয়ার ফুটবলারের সঙ্গে। কিন্তু এদিনই সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রসঙ্গ ফের উঠে এল। আর বিরক্ত পর্তুগাল কোচ বললেন, ‘‘এক কথা কতবার বলব যে, সমস্যাটা আমার সঙ্গে নয়। হয়েছিল কোরিয়ার ফুটবলারের সঙ্গে।’’

তার মধ্যেই আবার রোনাল্ডোকে কেন্দ্র করে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিষয়টিকে আরও জটিল করে ফেলেছেন তাঁরই সতীর্থ উইলিয়াম কার্ভালহো। যিনি সরাসরি কিছু না বলে সেদিনের কোরিয়া ম্যাচের প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই ব্যাপারে মন্তব্য করার আমি কে? রোনাল্ডো নিজেই ভাল বলতে পারবে।’’

আর এখানেই পর্তুগিজ মিডিয়া ভাবছে, তাহলে কি কোরিয়া ম্যাচের পর পর্তুগাল শিবিরে কোচের সঙ্গে সত্যিই কিছু সমস্যা শুরু হয়েছে রোনাল্ডোর? তবে সাংবাদিক সম্মেলনে বসে স্যান্টোস পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, তাঁর কাছে এখন এই ইস্যুর থেকেও সুইজারল্যান্ড ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এর মধ্যেই আবার স্পেনের পত্রিকা মার্কা খবর করেছে, বার্ষিক ২০০ মিলিয়ন ইউরো নিয়ে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নাকি জানুয়ারি থেকেই চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন সৌদির ক্লাব আল নাসেরে। কেন সৌদির ক্লাবে যাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে মার্কা। ফেব্রুয়ারিতে ৩৮ বছর হয়ে যাবে সিআর সেভেনের। এই বয়সে ইউরোপের ফুটবলে তিনি আর পরীক্ষায় বসতে চাইছেন না। ফলে শেষ আড়াই বছরের চুক্তিতে আর্থিকভাবে লাভবান হতে চাইছেন তিনি। আর এই খবর নিয়ে এদিন দোহায় পর্তুগাল শিবির মারাত্মক উত্তাল। তাঁকে কেন্দ্র করে প্রতি মুহূর্তে এত খবর চর্চিত হচ্ছে যে, তিনি আর সংবাদমাধ্যমের সামনেই আসতে চাইছেন না। তাঁর হয়ে যাবতীয় ডিফেন্স করছেন কোচ। বিশ্বকাপের মাঝে সৌদির ক্লাবের সঙ্গে রোনাল্ডোর চুক্তির এই প্রসঙ্গটি অবশ্য মাঠের বাইরে ফেলে দিয়েছেন বিশ্বকাপে পর্তুগালের কোচ। বেশ বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কাল সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে কেন এই সব প্রসঙ্গ তুলছেন কিছুতেই বুঝতে পারছি না। রোনাল্ডো কোন ক্লাবে খেলবে, তা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। আমি অন্তত সৌদির ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির ব্যাপারে কিছুই জানি না। প্লিজ সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে রোনাল্ডোকে একটু ফোকাসড থাকতে দিন।’’

তিনি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। তিনি আলোর সার্চলাইটের বাইরে থাকতে চাইলেই কি আর থাকা সম্ভব? না তাঁকে কেউ শান্তিতে থাকতে দেবে? তবে এটা তো ঠিক, মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ড ম্যাচের আগে তিনি ভাল নেই। এর একটাই কারণ, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীরা যেভাবে বিশ্বকাপের আসরে এগিয়ে যাচ্ছেন, পারফরম্যান্সে তিনি অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছেন। এরকম পরিস্থিতি থেকে বহুবার বেরিয়ে এসেছেন চ্যাম্পিয়নের মতো। এবার কি তাহলে তাঁকে ঘিরে এই সমালোচনা, অপমান শুধু শুধু হজম করবেন তিনি? এই প্রসঙ্গেই রোনাল্ডো একটা দারুণ উত্তর দিয়েছেন পিয়ার্স মরগ্যানকে।
— ক্রিশ্চিয়ানো, প্রতিদিন সংবাদপত্র পড় তুমি?
রোনাল্ডো— কোনওদিন না। জানি ওরা আমাকে, আমার পরিবারকে নিয়ে সব সময় মিথ্যে সমালোচনা করে। আমাকে নিয়ে খবর ওদের করতেই হবে। তাই ওদের আমি পাত্তা দিই না। আমি কখনও রেকর্ডের পিছনে দৌড়ই না। রেকর্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পিছনে দৌড়োয়! 

[আরও পড়ুন: ‘রোনাল্ডোর আচরণে অসন্তুষ্ট’, সাংবাদিক সম্মেলনে বিস্ফোরক পর্তুগাল কোচ]

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement