সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ‘কেকে কাণ্ডে’র পর আবারও নেটপাড়ার রোষানলে রূপঙ্কর বাগচি (Rupankar Bagchi)। একটি ভাইরাল পোস্টের ভিডিও ঘিরেই বিতর্কের সূত্রপাত। যেখানে দাবি করা হয়েছে, গায়কের স্ত্রী পোস্ট অফিসে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছেন! সেই ভিডিও নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এপ্রসঙ্গে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল রূপঙ্কর বাগচির স্ত্রী চৈতালি লাহিড়ির সঙ্গে।
ঠিক কী রয়েছে ওই ভাইরাল পোস্টে? সংশ্লিষ্ট পোস্ট অফিসে কর্মরতার দাবি, “পেশায় গায়ক রূপঙ্কর বাগচী সস্ত্রীক আমাদের পোস্ট অফিসে আসেন আধারের কাজ করাতে। প্রথমে সাড়ে বারোটা নাগাদ জনৈক চৈতালি লাহিড়ি এসে আধার নথিভুক্তিকরণের জন্য থাকা কর্মীকে বলেন উনি রাজ্য সরকারের মহিলা সুরক্ষা দপ্তর থেকে আসছেন, ওনাকে তক্ষুনি করে দিতে হবে। প্রত্যুত্তরে আধার কর্মী বলেন- তিনি করে দেবেন কিন্তু আগে যারা সেই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের করে তারপর। পরে বোঝা গেল উনি রূপঙ্কর বাবুর স্ত্রী। তাঁদের টপকে আগে সার্ভিস দেওয়া সম্ভব নয়, অন্তত নীতিগতভাবে তো নয়ই। ওঁর স্ত্রী চৈতালিদেবীর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মুড়ি-মুড়কি এক করলে চলবে না, বুঝতে হবে কাকে আগে করতে হবে…’ অর্থাৎ ওনারা দামী মুড়কি আর সকাল থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলি সস্তার মুড়ি। ইতিমধ্যে আমরা অর্থাৎ উক্ত ডাকঘরে থাকা কর্মীরা ছুটে যাই, ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করি, বলি যে আপনারা দরকার পড়লে আলাদাভাবে বলতেন, আমরা এনাদের কাজ করে শেষ বেলার দিকে আপনাদের সময় করে দিতাম, ইত্যাদি। কিন্তু এই ঘটনা চলাকালীন বাকবিতণ্ডায় অহঙ্কারবশত বাগচিবাবু ভুলে যান যে উনি একজন কর্তব্যরত সরকারী কর্মচারীর সাথে কী ব্যবহার করছেন, তাই ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাবে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেন। এরপরই চৈতালিদেবী রূপঙ্করকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যান।” ওই পোস্টের সকলেই রূপঙ্কর-চৈতালীর ‘ঔদ্ধত্যে’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এপ্রসঙ্গে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর কাছে মুখ খুললেন চৈতালি লাহিড়ি। যিনি নিজেও মহিলা কমিশনে চাকরিরতা। তাঁর কথায়, “গোটা ঘটনাটা জানা দরকার সকলের। আমার আধারকার্ডের সমস্যার জন্য গতবার ভোট দিতে পারিনি। তাই আপডেট করানোর জন্য পোস্ট অফিসে গিয়েছিলাম। তখন ওঁরা বলেন, এখানে সকাল থেকে লাইন পড়ে, আপনি এখন এলে হবে না। তখন আমি বলি, পোস্ট অফিসে কোথাও লেখা নেই- ১০টার সময় এসে কুপন নিতে হবে। তার পালটা আমি বলি, কেন হবে না? সেটা জানার অধিকার আছে আমার। আমি রাইট টু ইনফরমেশনে চিঠি করব।- এসব কথা শুনে ওঁরা উত্তেজিত হয়ে যান। কারণ ওঁদের ওখানে দালালি চলে। যে আধারকার্ডের কাজ করতে ৫০ টাকা লাগে, সেটার পরিবর্তে গরীব মানুষদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে নেয় দালালরা। এগুলো নিয়ে কেউ তো কথা বলেনি। আমি বললাম বলেই ওঁরা তেড়ে আসেন আমার দিকে। আমি বলি- দেশে এত অশিক্ষা বলেই এভাবে আপনারা কাজ করছেন। ওরা পালটা আমাকে প্রশ্ন করেন- আমরা কি আপনার চাকর? উত্তরে আমি বলি, আপনারা সরকারী কর্মী। সাধারণ মানুষের কাজ করার জন্যই এখানে বসে আছেন।”
[আরও পড়ুন: অস্কার মঞ্চে নীতীন দেশাইকে শ্রদ্ধার্ঘ্য, ভারতীয় আর্ট ডিরেক্টরকে কুর্নিশ হলিউডের]
অশ্লীল শব্দ ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে চৈতালির মন্তব্য, “বিষয়টাকে ট্যুইস্ট করা হয়েছে। আমাদের নাটক দেখতে যাওয়ার কথা ছিল সেদিন। রূপঙ্কর বাইরে গাড়িতে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে বসেছিল। এতটা সময় অতিবাহিত হলে ও পোস্ট অফিসের ভিতর ঢুকে দেখে ৪-৫জন মিলে আমার সঙ্গে অভব্য আচরণ করছেন। সেটা দেখেই রূপঙ্কর আমাকে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করে- (What the F*** is going on here?), যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়- কী হচ্ছেটা কী এখানে? সেটা ও রেগে আমাকে বলেছে। পোস্ট অফিসের কোনও কর্মীকে আক্রমণ করেনি। আমি ওকে থামিয়ে গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসাই এরপর। এই সমস্ত ঘটনাগুলোকে অন্যভাবে ওই পোস্টে লেখা হয়েছে। তারপরও কিন্তু ওই পোস্ট অফিসের কর্মীরা আমাকে ওখানকার স্কিম বুঝিয়েছেন। আমি সময় নিয়ে কাজ করে ফিরেছি। যিনি এই টুকরো ভিডিও ছড়িয়েছেন তিনি রূপঙ্করের নাম ব্যবহার করে জনপ্রিয় হতে চাইছেন। ঘটনাটা তো আমার সঙ্গে ঘটেছে। রূপঙ্করকে কেন টানা হবে?” শেষে রূপঙ্করপত্নীর সংযোজন, “আমার মনে হয়, মহিলাদের এখন প্রতিবাদী হওয়াটা অন্যভাবে দেখানো হয়। দরকারে ওই পোস্ট অফিসের মুখোশ খুলে দেব”, বলে চ্যালেঞ্জ করলেন চৈতালি।