সৈকত মাইতি, তমলুক: নন্দকুমার মডেলকে সামনে রেখে তৃণমূলের (TMC) বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হয়ে সমবায় নির্বাচনের আসরে নামলেও তমলুকে পর্যুদস্ত রাম-বাম জোট। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরা ব্লকের খারুই গঠরা সমবায়ের ৪৩ আসনের মধ্যে তৃণমূলই পেয়েছে ৩৯টি আসন। অপরদিকে মাত্র ৪টি আসনে জয়ী হয় বাম ও বিজেপি (BJP) জোট। উলটো ছবি অবশ্য দেখা গিয়েছে মহিষাদল বিধানসভার অন্তর্গত জগতপুর শীতলা সমবায় কৃষিউন্নয়ন সমিতির নির্বাচনে। সেখানে আবার ঘাসফুল শিবিরকে ধাক্কা দিয়েছে সিপিএম-বিজেপি জোট।
তমলুকে জয়ের পর রবিবার বিকালে উচ্ছ্বাসে ভাসেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা। তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি শরৎ মেটিয়া বলেন, ‘‘বিজেপি এবং সিপিএমের অশুভ আঁতাতকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ উন্নয়নের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। ফলে আবারও একবার এই সমবায় সমিতির নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতল তৃণমূল। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ফলাফল দলীয় কর্মী সমর্থকদের আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করবে। নিজেদের হার নিশ্চিত জেনে ময়না থেকে বহিরাগতদের নিয়ে এসে এলাকায় সন্ত্রাস গন্ডগোল করা চেষ্টা করছিল বিজেপি। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের সক্রিয়তায় তাদের সেই পরিকল্পনা বানচাল হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: শ্বশুরের সঙ্গে পরকীয়ায় মজে স্ত্রী! সন্দেহের বশে শীতলকুচিতে বাবাকে ‘খুন’ যুবকের]
রবিবার সকাল থেকে টানটান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ভোটপর্ব শুরু হয় খারুই গঠরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেড-এর। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই সমবায় সমিতির নির্বাচন ঘিরে বছর থেকে শুরু করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দু’পক্ষ। ভোটারদের ভোটার স্লিপ কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে বুথ ভাঙচুরের অভিযোগ ও পালটা অভিযোগে উত্তেজনা ছড়ায় এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই আসরে নেমে লাঠিও চালায়ন পুলিশ। এর ফলে অল্পবিস্তর আহত হন দুজন।
প্রসঙ্গত, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একের পর এক সমবায় নির্বাচনকে ঘিরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনৈতিক মহলে তীব্র গুঞ্জন শুরু হয়। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে শাসক দলকে কোনঠাসা করতে বহু ক্ষেত্রেই এককাট্টা হয় বিরোধীরা। নন্দকুমার মডেলকে সামনে রেখে লাগামছাড়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি এবং সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্বরা জোটবদ্ধ হয় তমলুকের বীরাঙ্গনা শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার ব্লক এলাকাতে। এমন অবস্থায় বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ের অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন স্থানীয় সিপিএম নেতাকে বহিষ্কার করা হয় দলের পক্ষ থেকে।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা কিষান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক তথা স্থানীয় বিজেপি নেতা বামদেব গুছাইত অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমবায় বাঁচাও মঞ্চ নামে সাধারণ মানুষের এই জোট হয়ে লড়াই আন্দোলনে নেমেছিল। কিন্তু শাসকদলের পরিকল্পিত ভুয়ো ভোটার এবং সন্ত্রাস চালিয়ে এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। এ বিষয়ে বামেদের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান দীনেশ মণ্ডল বলেন, “নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। আমরা এই রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।” অপরদিকে মহিষাদল বিধানসভার অন্তর্গত জগতপুর শীতলা সমবায় কৃষিউন্নয়ন সমিতির নির্বাচন ছিল এদিন। সেখানে অবশ্য জয়ী হয়েছে বাম ও বিজেপি জোট। তৃণমূল পেয়েছে ১১টি আসনে জয়।