পরিচয় গুপ্ত: পাইলট। শব্দটা শুনলেই যেরকম স্মার্ট, বুদ্ধিদীপ্ত, শৌর্য মেশানো ইমেজের ছবিটা ভেসে ওঠে ঠিক সেরকমটাই দেখতে ‘ককপিট’-এর দিব্যেন্দু রক্ষিত ওরফে ‘ডিবস’-কে। এবার পুজোয় মেয়েরা তার প্রেমে পড়তে বাধ্য। অতএব এয়ার হস্টেস কীর্তি সচদেব অর্থাৎ রুক্মিণীও প্রথম দেখাতেই তাকে ভালবেসে ফেলেছিল। কিন্তু ‘ডিবস’-এর মন গলেনি। সে বন্ধু হিসেবেই চেয়েছিল কীর্তিকে। তার ভাললাগা রিয়া অর্থাৎ কোয়েল মল্লিক। উত্তর কলকাতার নম্র ভদ্র ইন্ট্রোভার্ট স্বভাবের এ মেয়েকে শেষ পর্যন্ত ‘ডিবস’ বিয়েও করে। কিন্তু কীর্তি তো তার উড়ানের সহযোগী। তাকে এড়াবে কী করে!
[ উৎসবের মরশুমে রহস্য বাড়িয়ে কেমন হল যিশুর ব্যোমকেশ ]
এই দিব্যেন্দুর বাবা নামকরা পাইলট ছিলেন। যিনি এয়ারক্র্যাশে মারা যান। কিন্তু ছেলে বাবার স্বপ্নটা লালন করেছিল মনেপ্রাণে। তাই বড় হয়ে সে হয় ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু রক্ষিত। দেবের বাবার চরিত্রে গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্সে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় চমৎকার। এদিকে ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু অনেক কঠিন উড়ান পার করেছে। এবার মুম্বই থেকে কলকাতা ফ্লাইটের দায়িত্বে। ভয়ঙ্কর খারাপ আবহাওয়া। মন কু ডাকছে সকলেরই। এটাই আবার কীর্তির ফ্লাইট হস্টেস হিসেবে শেষ কাজ। এদিকে বৃষ্টিতে চারদিক ভেসে যাচ্ছে। দিব্যেন্দু প্রথম থেকেই খুব সাবধানী। কিন্তু টেক অফ-এর পরই টার্বুলেন্সের মুখে পড়ে ফ্লাইট। কোনওক্রমে তা অতিক্রম করে।
[ পাহাড়চূড়োয় কেমন হল সৃজিতের ‘ইয়েতি অভিযান’? ]
যাত্রীদের মধ্যেও প্রত্যেকের কাছেই এই ফ্লাইটটা মনে রাখার। কেউ বা প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। কেউ নতুন সংসারের স্বপ্ন নিয়ে ঘর ছেড়ে যাচ্ছে কলকাতায়। এক বৃদ্ধের হাতে আর তিন মাস সময়। ধরা পড়েছে প্যানক্রিয়াসের ক্যানসার। এক মা ছোট্ট কন্যাকে তুলে দিয়েছে ফ্লাইটে, কলকাতায় তাকে বাবা রিসিভ করবে বলে। বাবা-মায়ের আর বনিবনা হচ্ছে না যে! এক অভিনেত্রী প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে ফ্লাইট ধরেছে। পাশে এক ছাপোষা বাঙালি যুবক যে তার নামই শোনেনি। এই রকম নানা ধরনের মানুষ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে বিমানটি। সবার প্রার্থনা যেন ঠিকভাবে পৌঁছে যায়।
[ ভালবাসার এক আশ্চর্য সফর ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ ]
কিন্তু একথা শুধু দিব্যেন্দু আর তার সহকারী পাইলট আর কীর্তিই জানে যে, যাত্রাপথটি আর মোটেও সহজ নেই। একটা ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়াতে সমস্যার শুরু। বিমানের ভিতরের বায়ুচাপ কমে আসছে। ফলে অনেক নিচু দিয়ে ওড়াতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। এখনই ল্যান্ডিং করা দরকার। না পাটনা, না ভুবনেশ্বর, না গুয়াহাটি, না কলকাতা কোথাও ল্যান্ড করা যাচ্ছে না। অতএব উপায় কী? দিব্যেন্দু কি আর পারবে ১৪৬ জন যাত্রীকে নিরাপদে মাটিতে নামিয়ে আনতে? এভাবেই গল্প ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছায়। ফ্ল্যাশব্যাকে ঘুরে ফিরে আসে দেব-কোয়েল-রুক্মিণীর ত্রিকোণ প্রেম।
রুক্মিণী এয়ার হস্টেসের চরিত্রে দারুণ বিশ্বাসযোগ্য। পাগলাটে ভালবাসার মুহূর্তেও দুর্দান্ত। আর কোয়েল তুলনায় মিতভাষী। অভিজাত রোমান্টিকতায় বিশ্বাসী। দেব দুই নায়িকাকেই ভাল সামলেছেন প্রকৃত হিরোর মতোই। তবে ছবির মেকিং আরও স্মার্ট হতে পারত। ছোট ডিটেলিংয়ে নজর দেওয়া উচিত ছিল। তবে পুজোর ছবিতে তাইল্যান্ডে মন ভোলানো গানের দৃশ্য আর ৩৬ হাজার ফুট উঁচুতে জীবনমরণ সমস্যা দেখলেই পয়সা উসুল। পুরোপুরি বিনোদনের ছবি ‘ককপিট’। দেব-কমলেশ্বর জুটি ক্লিক করে গিয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। অরিন্দমের মিউজিকে আতিফ আসলাম আর অরিজিৎ সিংয়ের গানগুলোও শুনতে ভালই লাগে। এ আদতে এক হিরোর উড়ানেরই সিনেমা।
The post সাফল্যের নতুন উচ্চতায় উড়ল দেবের ‘ককপিট’ appeared first on Sangbad Pratidin.