দীপক পাত্র: অনলাইনে ট্রিপঅ্যাডভাইজার-এর তালিকা বলছে, দক্ষিণ আমেরিকার শহরগুলির মধ্যে রিও ডি জেনেইরো সৌন্দর্যের বিচারে তিনে৷ একে, বুয়েনস আইরেস৷ দুইয়ে পেরুর কুসকো৷ তালিকাটা এই বছরের নিরিখে৷ অনলাইন সাইট এমন তালিকা করার আগে পর্যটকদের ভোট নেয়৷
অ্যান্তনিও কার্লোস জোবিম বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন-এর লাইনে দাঁড়িয়ে কানাডার মহিলা ফুটবল দলের কোচ জন হার্ডম্যানের দাবি, “ওলিম্পিকের প্রস্তুতি সারতে গত চার বছরে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছি৷ কই, কখনও তো তেমন বিপদ হয়নি৷ আসলে কখনও কোনও ওলিম্পিক গেমস পারফেক্ট হতে পারে না৷ ভিলেজের কোনও না কোনও ঘরে জল সরবরাহের সমস্যা হবে৷ কোথাও একটু বেশি মশার উপদ্রব হবে৷ এত বড় ইভেন্ট৷ চাট্টিখানি কথা!”
পাশ দিয়ে তখন এক মার্কিন দম্পতি হেঁটে যাচ্ছেন৷ সবার প্রথমে কর্তার চোখ পড়ল গিয়ে ওই পোস্টারে৷ ‘ওয়েলকাম টু হেল’৷ কর্ত্রীও ততক্ষণে মুখ চাপা দিয়ে ফেলেছেন৷ পোস্টারে আবার ছোট ছোট করে লেখা, “এখানে পুলিশ মাইনে পায় না৷ রাস্তায় বেরোলে আপনি নিরাপদ নন৷ সাবওয়ের কাজ বছরের পর বছর চলেও শেষ হয় না৷ আপনি নিজেই আপনার মৃত্যুর জন্য দায়ী হতে পারেন৷” দেখে গায়ের লোম নিজের অজান্তেই খাড়া হয়ে গেল৷ হার্ডম্যানের কথাগুলো মনে করে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হল– ‘কোনও ওলিম্পিক পারফেক্ট হয় না৷’
২০০৯-তে যখন ব্রাজিল ওলিম্পিক আয়োজনের যোগ্যতা অর্জন করল, তখন কিন্তু রিও জুড়ে খুশির হাওয়া বয়েছিল৷ সেই সময় অবশ্য ব্রাজিলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড সোজা ছিল৷ এখনকার অবস্থা অন্যরকম৷ জিকা ভাইরাস, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ কত কী কালো মেঘের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে রিওর আকাশ জুড়ে৷ কিন্তু ওলিম্পিকের আগে এরকম ঝামেলা তো শুধু রিও জুড়ে নয়৷ এথেন্স তৈরি ছিল না৷ তুরিনে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা ছিল, নির্মাণ কাজেও দেরি হয়েছিল৷ বেজিংয়ে ওলিম্পিকের ঠিক আগে মানবাধিকার নিয়ে ঝামেলার শেষ ছিল না৷ বছর চারেক আগে লন্ডনও ওলিম্পিকের আগে সাবওয়েতে এক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল৷
“দুটো বড় ইভেন্ট দু’বছরের মধ্যে হচ্ছে৷ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সত্যি আমরা বিধ্বস্ত৷ সব সামলে নেব৷ শুধু ভয় সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ে৷ ব্রাজিলিয়ান হয়েও বলছি, ফাঁকায় কখনও মোবাইলে কথা বলবেন না৷ যে কোনও মুহূর্তে ছিনতাই হয়ে যাবে৷” এয়ারপোর্ট থেকে গাড়িতে আসার সময় উদ্বেগ ধরা পড়ছিল জুলিও সিজারের গলায়৷ ওলিম্পিকের ইতিহাসে ’৭২-এর মিউনিখে এগারোজন ইজরায়েলি মারা যাওয়ার ঘটনা আছে৷ আছে ’৯৬-এ আটলান্টা ওলিম্পিকে টাউন স্কোয়ারে একটা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা৷ যেখানে মারা গিয়েছিলেন দু’জন৷ আজ উদ্বোধনে সেই সতর্কতাই যেন ব্রাজিলের মাহাত্ম্যকে কয়েক যোজন পিছনে ঠেলে দিল৷
মারাকানায় আজ স্থানীয় সময় রাত আটটায় শুরু ৩১তম ওলিম্পিক৷ উদ্বোধনের অনুষ্ঠান শুরু হবে তখন ভারতের মাঝ রাত৷ যোগ দিচ্ছেন গোটা পনেরো দেশের প্রধানরা৷ ফ্রান্স, চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, কলম্বিয়া-সহ একাধিক দেশের প্রেসিডেন্ট আসছেন৷ প্রধানমন্ত্রী আসছেন ডাচ, ইতালির৷ আরও অনেকের আসার কথা ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক ডামাডোল থাকায় কেউ আসার ঝুঁকি নেননি৷ দু’বছর আগে এই মারাকানাতেই উদ্বোধন হয়েছিল বিশ্বকাপ ফুটবলের৷ এবারের উদ্বোধনে যে খুব একটা জাঁকজমক হবে না তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এমনও বলা হয়েছে, গত লন্ডন ওলিম্পিকে উদ্বোধনের পেছনে যে অর্থ খরচ করা হয়েছিল তার মাত্র দশ শতাংশ ধরা হয়েছে৷
তবে, আশ্বস্ত করেছেন উদ্যোক্তারা৷ সৃষ্টিশীলতার পাশে আবেগ আর ছন্দকে ধরে রেখেই হচ্ছে উদ্বোধন৷
The post আবেগ আর ছন্দকে ধরে রেখেই কাল ভোরে উদ্বোধন ওলিম্পিকের appeared first on Sangbad Pratidin.