অর্ণব আইচ ও নিরুফা খাতুন: সহকর্মীরা নাকি তাঁকে হেনস্তা করতেন। তাই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতায় থাকা দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের ‘ডিফেন্স অডিট’ দপ্তরের বেশ কয়েকজন সহকর্মী ও অফিসের ছবি তুলে বাইরে অন্য এক বন্ধুকে পাঠাতে থাকেন ওই দপ্তরেরই এক মহিলা কর্মী। পুলিশ ও সেনা সূত্রের খবর, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আওতায় ওই নিরাপত্তা ছেদ করে মাছি ঢুকতে পারে না ও দেশের সুরক্ষা জড়িত থাকায় দপ্তরের কর্মী আধিকারিকদেরও অনেক বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়, সেখানে নিয়ম-নিষেধ ভেঙে একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের গোপন ছবি তুলে বাইরে পাঠাচ্ছিলেন ওই মহিলা কর্মী। শেষ পর্যন্ত সেনাদের অন্তর্তদন্তে ধরা পড়ে বিষয়টি। ইস্টার্ন কম্যান্ডের পক্ষে আলিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তদন্তে মহিলা ছাড়াও নাম উঠে আসে অভিযুক্ত মহিলা কর্মী সঙ্গীতা চক্রবর্তীর সেই বন্ধু, যিনি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সংস্থার মুখ্য চিকিৎসক। বিপদ বুঝে ওই ব্যক্তি আলিপুর আদালত থেকে আগাম জামিন নেন। যদিও আলিপুর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সঙ্গীতা। পুলিশের মতে, কোনও নাশকতার জন্য নিষিদ্ধ জায়গার ছবি বাইরে পাঠানো হচ্ছিল, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেই ক্ষেত্রে মহিলার কাছে স্পাই ক্যামেরা থাকতে পারে। তার জন্য তাঁর বাড়িতেও চালানো হচ্ছে তল্লাশি। প্রতিরক্ষা দপ্তরের ছবি ও গোপন তথ্য বাইরে কোনও জঙ্গি সংগঠন বা পাকিস্তান অথবা চিনের মতো শত্রুদেশের কাছে পাচার করা হত কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। রবিবার আলিপুর আদালতে ধৃত মহিলাকে তোলা হলে তাঁকে ১৩ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
[আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটে ‘নজর’ NHRC’র, ডিজি আসায় এক্তিয়ার নিয়ে উঠছে প্রশ্ন]
পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গীতা চক্রবর্তীর স্বামী প্রতিরক্ষা দপ্তরে চাকরি করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী আলিপুরের ‘ডিফেন্স অডিট’ দপ্তরে চাকরি পান। কিছুদিন আগেই ওই দপ্তরেরই কয়েকজন কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীর নজরে আসে যে, ওই মহিলা কর্মী নিজের মোবাইলে দপ্তরের ভিতরে বিভিন্ন জায়গার ছবি তুলছেন। এমনকী, লুকিয়ে লুকিয়ে তিনি সহকর্মীদের ছবি তুলছেন, এমন দৃশ্যও দেখা যায়। সিসিটিভির ক্যামেরা পরীক্ষা করেও পুরো বিষয়টি চোখে পড়ে। দপ্তরের আধিকারিকরা তাঁকে ডেকে জেরা করেন। অন্তর্তদন্ত শুরু হয়। তাতেই সঙ্গীতার মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই চিকিৎসক বন্ধুকে সঙ্গীতা ছবিগুলি পাঠিয়েছেন। তাতেই সন্দেহ হয় দপ্তরের কর্তাদের। রবিবার সকালে বাড়ি থেকেই সঙ্গীতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের জেরায় অভিযুক্ত মহিলা জানান, তাঁর সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই চিকিৎসক বন্ধুর আলাপ হয়। স্বামী না থাকার কারণে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। তার মধ্যেই সঙ্গীতা দাবি করেন, কর্মরত অবস্থায় অফিসেই তাঁকে হেনস্তা করা হত। কিন্তু কী করবেন, বুঝতে না পেরে বিষয়টি চিকিৎসক বন্ধুকে বলেন।
ওই চিকিৎসক বন্ধুই তাঁকে সেই সহকর্মী ও জায়গাগুলির ছবি তুলে রাখতে বলেন প্রমাণ হিসেবে। কীভাবে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন, তারও খসড়া তৈরি করেন দু’জন মিলে। বন্ধুর পরামর্শেই মহিলা ছবি তুলতে থাকেন। যদিও পুলিশের ধারণা, মহিলার বয়ানে অসংগতি রয়েছে। তাই নাশকতার কারণে ওই ছবি তোলার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সেনাবাহনীর সঙ্গে যুক্ত ওই দপ্তরের ছবি বাইরে পাচার হওয়ার কারণে দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে বলে শঙ্কা পুলিশের। পুরো বিষয়টি যাচাই করতে ওই মহিলাকে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।