সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: চলন্ত লঞ্চ থেকে মাঝগঙ্গায় প্রেমিক অভিষেক সাউ এবং প্রেমিকা সুজাতা ভারতী ওরফে প্রিয়াঙ্কার মরণঝাঁপের পর ঘটনার দানা বাঁধছে রহস্য।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দশেক আগে গভীর রাতে মল্লিকবাজারের গুলপাড়ার বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যান শহরের নামী নাট্যদল ‘পদাতিক’-এর সক্রিয় নাট্যকর্মী সুজাতা ওরফে প্রিয়াঙ্কা। সোমবার মাঝরাতে শেষবার মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় সুজাতার মা অপর্ণা ভারতীর। ফোনে কান্নাভেজা গলায় সুজাতা বলেন, “লাভ ইউ মামি। আমি ভাল নেই। মামি গুডবাই।” এরপরই ফোন কেটে দেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে আচমকাই সুজাতা চলে আসেন মল্লিকবাজারের আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস রোডে অভিষেকদের দোকানে। দোকানে তখন বাবা ওমপ্রকাশ সাউয়ের সঙ্গে ছিলেন অভিষেক। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে যান সুজাতা। মিলেনিয়াম পার্কে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর হাওড়াগামী লঞ্চে ওঠেন দু’জনে। মাঝগঙ্গায় হাত ধরাধরি করে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দেন সুজাতা ও অভিষেক। এখনও পর্যন্ত তাঁদের হদিশ পাওয়া যায়নি।
[ শহরে ফের অঙ্গদানের নজির, পাঁচজনকে নবজীবন দিলেন কোলাঘাটের সজল]
গত সাত-আট বছর ধরে এলিয়ট রোডেই মেয়ে সুজাতাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন অপর্ণা ভারতী। মাসখানেক আগে বাড়িওয়ালার চাপে তাঁরা চলে আসেন গুলপাড়ার অন্য একটি ভাড়াবাড়িতে। সুজাতার দু’বছরের শিশুসন্তান আরোহীকে বুকে চেপে কাঁদতে কাঁদতে অপর্ণাদেবী জানালেন, “খুবই প্রতিভাবান ছিল আমার মেয়ে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে অ্যাসেম্বলি অফ গডচার্চ স্কুলে পড়াশোনা করিয়েছিলাম। পাশ করার পর লন্ডনে স্কলারশিপেরও সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু পয়সার অভাবের জন্য সেই সুযোগ হাতছাড়া হয় তার। নাটকে খুবই ঝোঁক ছিল তার। বিখ্যাত চলচিত্র প্রযোজক শ্যামানন্দ জালানের গ্রুপ থিয়েটারের দল ‘পদাতিক’-এর নিয়মিত নাট্যকর্মী ছিল সে। জালান সাহেবের নির্দেশে নাটক লিখে মাসে চার হাজার টাকা রোজগার করত প্রিয়াঙ্কা। শ্যামানন্দ জালান নিজেও তাকে খুবই ভালবাসতেন।”
সুজাতার বয়স যখন ১১ বছর, তখন বাবা অজয় ভারতী অপর্ণাদেবীকে ছেড়ে উধাও হয়ে যান। তখন থেকেই আর্থিক দিক থেকে বড় অসহায় হয়ে পড়ে এই পরিবার। গ্রুপ থিয়েটারে অভিনয় করতে করতেই সুজাতার সঙ্গে আলাপ হয় বছর পঞ্চাশের রাজেশ বাজপেয়ীর। রাজেশও ‘পদাতিক’-এর নাট্যকর্মী ছিলেন। জানবাজারে তাঁদের একটি দোকানও ছিল। সেই আলাপ থেকেই প্রেম, বিয়েও করেছিলেন সুজাতা ও রাজেশ।বছর তিনেক আগে সুজাতার ব্রেন ক্যানসার ধরা পড়ে। ওই অবস্থায়ই বছর খানেক আগে শিশুসন্তানের জন্ম দেন সুজাতা। এদিকে রাজেশের ব্যবসায় চরম মন্দার কারণে সংসারে দেখা দেয় আর্থিক অনটন। অপর্ণাদেবীর একটি কিডনিও নষ্ট হয়ে যায়। সংসার আর টানতে পারছিলেন না রাজেশ। এরই মাঝে এলিয়ট রোডের সুজাতাদের ভাড়া বাড়ি ভেঙে বহুতল করতে চান মালিক। তাঁদের বাড়ি ছেড়ে উঠে যেতে বলেন। সুজাতাদের বাড়ির জল ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় অপর্ণাদেবীর দাদা মোহন পাল নিজের দায়িত্বে বোন ও ভাগ্নিকে গুলপাড়ার অন্য একটি ভাড়াবাড়িতে নিয়ে আসেন মাসখানেক আগে। বন্ধুবান্ধবদের সাহায্যে সুজাতার চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু, এতকিছু মাঝে মল্লিকবাজারের ব্যবসায়ী ওমপ্রকাশ সাউয়ের ছোট ছেলে অভিষেকের সঙ্গে কীভাবে সুজাতার আলাপ হল, দুই পরিবারের কেউ জানেন না।
[ রাতভর নাইট ক্লাবে হুল্লোড়? বেপরোয়া ড্রাইভিং বন্ধে সকালেও নজরদারি পুলিশের]
The post ‘আমি ভাল নেই’, মাকে ফোন করে প্রেমিকের সঙ্গে মরণঝাঁপ যুবতীর appeared first on Sangbad Pratidin.