জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: সম্প্রতি বনগাঁয় সর্প দংশনের (Snake Bite) পর গৃহবধূকে ওঝার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। খড়ের গাদা থেকে বিচুলি বের করতে গিয়ে সাপের কামড় খাওয়া মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হল ওঝার বাড়িতে। সেখানেই নেমে এসেছিল চরম বিপদ। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়৷ শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ (Bongaon) থানার কালুপুর এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত বৃদ্ধার নাম সতীবালা বৈরাগী, বয়স ৬৯ বছর৷ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এদিন সকাল দশটা নাগাদ ওই বৃদ্ধা একাই বাড়ি ছিলেন৷ তাঁর দুই ছেলে কাজে গিয়েছিলেন৷ বাড়ির খড়ের গাদা থেকে বিচুলি বের করার সময় হাতের আঙুলে সাপে কামড় দেয়৷ এরপর স্থানীয়রা তাঁকে নিয়ে ছুটে যায় পার্শ্ববর্তী ওঝা সুভাষ মণ্ডলের বাড়ি। ওঝা ওষুধ দিতে ব্যর্থ হন। ঝাড়ফুঁক করে সাপের বিষ বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হয়ে বৃদ্ধাকে নিয়ে বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে আসে তাঁর পরিবার৷ হাসপাতালে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়৷ ছেলে অনিমেষ বৈরাগী বলেন, “আমাদের গ্রামে কাউকে সাপে কামড়ালে প্রথমে সকলেই ওই ওঝা বাড়ি যায়। কিন্তু পরে আমরা হাসপাতালে নিয়ে আসি।”
[আরও পড়ুন: ঋণ আদায়ে দুর্ব্যবহার নয়, রাতে করা যাবে না ফোন, ব্যাংকগুলিকে কড়া হুঁশিয়ারি আরবিআইয়ের]
এই ঘটনার পর ওঝা সুভাষ মণ্ডলকে বাড়ি না পাওয়া গেলেও তাঁর মা সুমিত্রা মণ্ডল জানিয়েছেন, “সুভাষ ওর দাদুর কাছ থেকে সাপে কাটা রোগী, কুকুর, বিড়াল কামড়ানো রোগীকে গাছ-পাতা দিয়ে সুস্থ করার চিকিৎসা পদ্ধতি শিখেছিল৷ হাত চালান দিয়ে শিকড়-বাকড় খাইয়ে রোগী সুস্থ করে৷ এদিন বৃদ্ধাকে আনার পর হাত চালান দেওয়া যাচ্ছিল না৷ তাই তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল৷” ঘটনার পর বনদপ্তর খবর পেয়ে বিচুলির গাদার মধ্যে থেকে ওই সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়৷ তারা জানিয়েছে, সেটি ছিল গোখরো সাপ।
[আরও পড়ুন: অনুব্রতর অনুুপস্থিতিতে বীরভূমে সংগঠন সামলাবেন কে? একাধিক নাম নিয়ে জল্পনা তৃণমূলে]
বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে প্রচার করি৷ অন্যান্য সংগঠনের পক্ষ থেকেও সাপে কামড়ে আগে হাসপাতালে নেওয়ার প্রচার নিয়মিত চালানো হয়৷ কিন্তু এরপরেও এমন ঘটনা ঘটছে! প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামে গ্রামে আরো প্রচার চালানোর দরকার ৷ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় সারা বছর ধরেই সাপে কামড়ানো বিষয়ে সচেতনতা মূলক নিয়মিত প্রচার করা হয়। সাপে কাটলে কোন ওঝা গুনিনের কাছে যাবেন না। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতলে যাবেন। সেই প্রচার যে কিছু মানুষের মধ্যে এখনো যে পৌঁছায়নি তা কালুপুরের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।