অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: অভাব অনটনই জীবনকে পথ দেখায়। যেমনটা দেখিয়েছে ডোমকলের ভগীরথপুরের বছর পয়ত্রিশের সাখিনা খাতুনকে। ক্ষিদের জ্বালা মেটাতে দুই বোনের কানের দুল বন্ধক রেখেছেন। আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একজনের থেকে টোটো কিনে পথে নেমেছেন সাখিনা। কিন্তু তাতেও বাদ সাধছে পুরনো টোটো মালিকের চালাকি। কারণ টোটোর ব্যাটারি ভালো নয়। দিনে দুই ক্ষেপ ভাড়া খাটার পর আর চলে না। ফলে আয়ও ভালো হয়না। সাখিনা জানান, “ ব্যাটারিটা ভালো থাকলে চার-পাঁচ ক্ষেপ ভাড়া খাটা যেত। তাহলে সংসার চালাতে সুবিধা হত। এখন যেভাবে চলছি তাতে চাল-ডালের সমস্যাই মিটছে না। আবার ঋণ শোধেও হাতই দিতে পারছি না।”
ব্যাটারি নতুন হলে সত্যি সাখিনা খাতুনের অনেক সমস্যা মিটবে। কিন্তু গ্রামের রাস্তায় সাখিনার টোটো চালানো কতটা নিরাপদ তা নিয়ে আশঙ্কা অনেকের। যদিও সাখিনা ও তাঁর দিদি তাহমিনা বিবির কথায়, "জানি সমস্যা অনেক। তাই বলে তো আর বাড়িতে বসে থেকে না খেয়ে মরতে পারি না।" সাখিনা জানান, "জীবনটাই লড়াই করার জন্য। তাই তো পথে নেমেছি। অনেকে উৎসাহও দিচ্ছেন। তাছাড়া আমি রাস্তায় নামলে মহিলা যাত্রীরা আমার টোটোতেই চাপছেন। তাঁদের কাছ থেকেও উৎসাহ পাচ্ছি। তাতে মনে হয়েছে টোটো চালাতে নেমে আমি কোনও ভুল করিনি।”
[আরও পড়ুন: স্বামীর অবসরে মুখ্যসচিবের আসনে স্ত্রী! বেনজির ঘটনা কেরলে]
ভগীরথপুরের সাখিনা আর পাঁচটা মেয়ের মতোই স্বামী-সন্তান নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলন। কিন্তু বিধির লিখন। স্বামীর সংসার টেকেনি সাখিনার। স্বামী তাঁকে তালাক দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে সাখিনা ফিরে আসেন বাবার সংসারে। কিন্তু বাবা-মাও প্রয়াত হয়েছেন। অসুস্থ জামাইবাবু, দিদি আর তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় সংসার। কিন্তু রোজগেড়ে বলতে সাখিনা খাতুনই তাঁদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন।
অনটনে পড়ে মেয়ারা টোটো চালায় এই দৃশ্য শহরের অলিতে গলিতে দেখা গেলেও গ্রামে তেমন দেখা যায় না। কিন্তু সাখিনা টোটো নিয়ে পথে নেমেছেন। তাতেই অনেকে অবাক হচ্ছেন। তবে প্রশংসাও করছেন অনেকে। যেমনটা করলেন ভগীরথপুরের তৃণমূল নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষ। তাঁর কথায়, “ সাখিনা খাতুন এলাকার অনেক অভাবী মেয়েদের শুধু নয় অনেক বেকার যুবকের আইকন হয়ে উঠবে। আগামী দিনে রাস্তায় আরও অনেক মহিলা চালিত টোটো গাড়ি দেখতে পাওয়া যাবে। সেদিনও কিন্তু আলোচনায় উঠে আসবে সাখিনা খাতুনের নাম।”
সাখিনা জানান, “আগে তাঁতের কাজ করতাম। কিন্তু তাতে যা আয় হত ,তা দিয়ে সংসার চলছিল না। তাই দিদির সঙ্গে পরামর্শ করে দুই বোনের কানের দুল বিক্রি করে ও কিছু টাকা ধার করে একটা পুরাতন টোটো কিনে ফেলি। কিন্তু তখন বুঝিনি ব্যাটারির দশা। কেনার তিন মাসের মধ্যেই ব্যাটারি বসে গিয়েছে। সারা রাত চার্জ দিয়ে ভগীরথপুর ডোমকল মাত্র দুবার যাতায়াত হয়। চার-পাঁচবার যাতায়াত করতে পারলে তবেই কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। কিন্তু তা সম্ভব করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।”এভাবেই কষ্টে কাটছে সাখিনার জীবন। সৎ পথে থেকে রোজগারের জন্য সাখিনার হাত এখন টোটোর হ্যান্ডেলে। বলা যায় সংসারেরও। টোটো চালক সাখিনার ওই আক্ষেপের গল্প শুনে ডোমকলের সমাজসেবী আব্দুল আলিম বাপী বিশ্বাস জানান, কোনও সমস্যা নেই। মেয়েটিকে টোটো চালানোর সুবিধা করে দেওয়ার জন্য নতুন ব্যাটারির ব্যাবস্থা করে দেওয়া হবে।