সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: গত পাঁচ অর্থবর্ষে রাজ্যে মহিলা আয়করদাতার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে যেখানে বাংলার প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ মহিলা আয়কর জমা দিতেন, সেই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ। শীতকালীন অধিবেশনের প্রথমদিন কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়ের প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের কাছে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ গত পাঁচ অর্থবর্ষে কোন বছরে, কোন রাজ্য থেকে, কতজন করে মহিলা আয়কর দিয়েছেন, সেই তথ্য জানতে চান। জবাবে মন্ত্রক জানায়, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দেশে মোট ১ কোটি ৮৩ লক্ষ ১২ হাজার ২০০ জন মহিলা আয়কর দিয়েছিলেন। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে যা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ২৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে বাংলা থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে আয়কর দিয়েছিলেন ১০ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৫৫ জন। যা বেড়ে হয়েছে ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫০৬ জন।
সম্প্রতি ভারতীয় আয়করদাতাদের উপর একটি সমীক্ষা করে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। যেখানে দেখা যায় দেশের মোট আয়করদাতাদের মধ্যে মহিলাদের অংশীদারিত্ব ১৫ শতাংশ। তবে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের অনুপাত জাতীয় হারের থেকে বেশি। তালিকার মগডালে থাকা বামশাসিত রাজ্য কেরলের মোট আয়রকরদাতাদের মধ্যে মহিলার পরিমাণ ২২-২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ডিএমকে নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ুতে এই সংখ্যা ২১ থেকে ২৫ শতাংশ। ১৬ থেকে ১৯ শতাংশের অংশীদারিত্ব নিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে রয়েছে যথাক্রমে বাংলা ও পাঞ্জাব। বাংলায় তৃণমূল, পাঞ্জাবের মসনদে আম আদমি পার্টি। চন্দ্রবাবু নাইডুর অন্ধ্রপ্রদেশে এই হার ১৫ থেকে ১৯ শতাংশ। শুধু আয়কর দেওয়াই নয়, বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রেও পুরুষদের থেকে অনেক এগিয়ে বাংলার মহিলারা। শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ১০ জন বিনিয়োগকারীর মধ্যে ৭ জনই মহিলা। অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে মহিলারা স্বনির্ভর হয়ে তো উঠছেনই, বিনিয়োগের মত বেশ কিছু ক্ষেত্রে পিছনে ফেলে দিচ্ছেন পুরুষদেরও।
মহিলাদের অংশীদারিত্বে বাংলা তৃতীয় স্থানে থাকলেও সামগ্রিক তালিকায় প্রথম সারিতে নেই বাংলা। এই তালিকার প্রথম পাঁচটি রাজ্য যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান ও তামিলনাড়ু। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিস্কার হয়ে যায়। ১) আইনসভায় মহিলা প্রতিনিধিত্বের নিরীখে সর্বোচ্চ স্থানে থাকা, মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে থাকা পশ্চিমবঙ্গ নারী সশক্তিকরণে কতখানি এগিয়ে, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়ে যাওয়া। ২) বিজেপি মুখে যতই দাবি করুক, তাদের শাসনে থাকা রাজ্যে মহিলাদের অবস্থা যে মোটেই ভাল নয়, নতুন করে তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়া। উল্লেখ্য, উগ্র দক্ষিণপন্থায় বিশ্বাসী বিজেপি-আরএসএস হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে দলীয় সংগঠন - কোথাও অগ্রণী ভূমিকায় মহিলাদের রাখে না, এই অভিযোগ বহু পুরনো।