রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: দিনের আলো কমে আসতেই গোটা এলাকার দখল নেয় মাতালরা! প্রধান রাস্তার পাশে খোলা আকাশের তলায় কিংবা ধাবাগুলোতে বসে মদের আসর। সন্ধ্যার পর বাজারে আসতে ভয় পান মহিলারা। এলাকার এমন বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের গ্রামেও। তার জেরেই নাকি ওই গ্রামে ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন না কেউ। এছাড়া এলাকার পড়ুয়ারাও মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়ছেন বলে দাবি স্থানীয়দের। একাধিকবার এই কথা পুলিশ-প্রশাসনকে, বাজার কমিটি, গ্রাম পঞ্চায়েতকেও জানিয়ে লাভ হয়নি বলে অভিযোগ। এবার মাতালের অত্যাচার থেকে বাঁচতে মদ্যপ ব্যক্তি ও খোলা বাজারে মদ বিক্রেতাদের সতর্ক করলেন মহিলা সমিতির সদস্যরা। স্থানীয় কলেজের গেটে ব্যানার টাঙিয়ে নেশাড়ুদের সর্তক করলেন তাঁরা।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রাম তেহট্ট থানার বেতাই। অভিযোগ, এই গ্রামে অন্ধকার নামলেই ড. বি আর আম্বেদকর কলেজ এবং নতুন বাজার চত্বর মাতালদের দখলে চলে যায়। বেতাই বাজারের এক কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি অনুমোদিত তিনটি মদের দোকান রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রেস্তরাঁ বা খাবারের দোকানে বেআইনি দেশি-বিদেশি মদ বিক্রি হয় বলে অভিযোগ।
ফলে হাতের কাছে মদ পেয়ে অনেকেই নেশায় ডুবছেন। মাতালদের অত্যাচারে ঘর ছেড়ে বেরনো কঠিন হয়ে পড়েছে। মহিলাার নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন বলে জানিয়েছেন। মাঝে মাঝে পুলিশের অভিযান চলে। তবে স্থানীয়দের দাবি, আবগারি দপ্তর বা পুলিশ অভিযান চালাতে আসার আগেই অবৈধ মদ বিক্রেতাদের কাছে খবর চলে যায়। এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে?
এই পরিস্থিতিতে আম্বেদকর কলেজের প্রিন্সিপাল পীযূষকান্তি দেবের আশ্বাস, "কলেজ চত্বরে মদ কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসককে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এখন কলেজ ছুটি রয়েছে, খুললে বিষয়টি নিয়ে পুনরায় পদক্ষেপ করা হবে।" পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "মাঝেমধ্যেই অভিযান চালিয়ে অবৈধ মদ কারবারিদের দোকান থেকে মদ বাজেয়াপ্ত এবং বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের প্রতি আইনি পদক্ষেপ করা হয়।"
বেতাই রানি লক্ষ্মীবাঈ মহিলা সমিতি এবং প্রীতিলতা মহিলা সমিতির সদস্যা কাজল মণ্ডল, সবিতা মল্লিকরা জানাচ্ছেন, "মাতালদের দৌরাত্ম্যে নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। অনেক পরিবার এই গ্রামে ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে চাইছেন না। এক কথায় বলতে গেলে বিয়ে আটকে যাচ্ছে অনেক যুবক-যুবতীর। এর আগেও একাধিকবার বেআইনিভাবে মদ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেও মদের কারবার বন্ধ করা যায়নি।" এই কারণেই এলাকার দুটি মহিলা সমিতির সদস্যরা একত্রিত হয়ে বেআইনি মদ বিক্রেতা এবং মাতালদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।