সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জমি জট কাটিয়ে শারদোৎসবের আগে কালনা ও শান্তিপুরের মাঝে ভাগীরথীতে সেতুর কাজ শুরু করতে চায় পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার জমি মালিকদের নিয়ে বৈঠক করেছে প্রশাসন। ফের শুনানি করে জমি কেনার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেরে নিতে চাইছে প্রশাসন। তারপরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে আশা করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। জেলা শাসক বিজয় ভারতী জানান, দ্রুত কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতু গড়তে প্রাথমিকভাবে ৬১৩ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছিল। কিন্তু জমি জটের কারণে সেতু নির্মাণ কাজে বিলম্ব হওয়ায় তা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
২০১৮ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালনায় প্রশাসনিক সভায় এসে এই সেতুর কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার পর নকশা তৈরি থেকে শুরু করে কোন কোন এলাকায় কত পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ বা কিনতে হবে তা চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দও করে রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রথম পর্যায় থেকেই জমির সরকার নির্ধারিত দাম নিয়ে আপত্তি তোলেন বেশ কয়েকজন জমি মালিক। তার পর বৈঠক হয়। আবার আইনি জটিলতাতেও কিছু পরিমাণ জমির হস্তান্তর আটকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই সেতু গড়তে পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা ও নদীর ওপারে নদিয়ার শান্তিপুর জেলায় অ্যাপ্রোচ রোডের জন্য জমির প্রয়োজন। শান্তিপুরে জমি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কালনায় জট লাগে প্রকল্পের সূচনালগ্নে।
[আরও পড়ুন : মুর্শিদাবাদে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে বিধায়ক, ঘেরাও করে বিক্ষোভ ক্ষুব্ধ জনতার]
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজে কালনার হাঁসপুকুর, কুলেদহ, বারাসাত ও পূর্ব সাহাপুর মৌজায় মোট ৪৭.৯৭৬৭ একর জমির প্রয়োজন। মোট প্লট রয়েছে ১৩৩টি। জমির মালিক রয়েছেন ৫৮৭ জন। জমি কিনতে ৩৫ কোটি ৮২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯২৭ টাকা। এখনও পর্যন্ত ৭.৬৩২১ একর জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। জমি মালিকদের ৪ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯০ হাজার ৮০৭ টাকা জমির দাম বাবদ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ৩১ জন জমি মালিকের কাছ থেকে ১৪টি প্লট কেনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। জমি মালিকদের যাঁদের দাম নিয়ে আপত্তি ছিল তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করে অনেকটাই জট কাটানো গিয়েছে। এছাড়া আরও ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৭৪ টাকার রিকুইজিশন পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
[আরও পড়ুন : দুর্গাপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ব্যানারে অনুমতি ছাড়াই সুনীল শেট্টির ছবি, পুলিশের দ্বারস্থ অভিনেতা]
আরও প্রায় আড়াই একর জমির মালিকানা নিয়ে আপত্তি ওঠে। দাদা জমি বিক্রিতে সম্মত হলেও বোন তাতে আপত্তি জানান। তা মেটানোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া আরও ০.১৩৮ একর জমির মালিক সম্মত হলেও জমি রেজিস্ট্রির দিন হাজির হননি। অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি অধিগ্রহণ) শশীকুমার চৌধুরি জানান, জমির দাম নিয়ে আপত্তি ছিল অনেক জমি মালিকের। কালনায় শুনানি করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমি সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যাবে। এই সেতু গড়ে উঠলে নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভুম, মুর্শিদাবাদ জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে। জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নে এই সেতু গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। সেতু গড়ে উঠলে ব্যবসা, বাণিজ্য, পর্যটন সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে। দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” দুর্গাপুজোর আগেই কাজ শুরু করতে পারলে সেটা পুজোর উপহার হবে।