সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেহাল অর্থনীতি ও বালোচিস্তানে বিদ্রোহের আগুন। সাঁড়াশি চাপে পড়ে ফের আফগান শরণার্থীদের নিশানা করল পাকিস্তান। আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং ‘আফগান সিটিজেন কার্ড’ধারীদের দেশ থেকে বিতড়নের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল পাক সরকার। মূলত দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার আবহে কাবুলের উপর চাপ বাড়ানোর লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এর নেপথ্যে অর্থনৈতিক চাপ এবং বালোচিস্তানে বিদ্রোহের আগুনও রয়েছে বলে মত কূটনৈতিক মহলের।

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তাল্লাল চৌধুরী সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে সব ‘অবৈধ অভিবাসী’ এবং আফগান সিটিজেন কার্ডধারী বিদেশি নাগরিকদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। ওই অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার জন্য আগেই ৩১ মার্চ ডেডলাইন দিয়েছিল পাক সরকার। তাল্লাল চৌধুরী এবার জানালেন, ৩০ এপ্রিলই চূড়ান্ত সময়সীমা। আর সেটা বাড়ানো হবে না।
আটের দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার অনুপ্রবেশ এবং মুজাহিদ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই শুরুর পর থেকে পাকিস্তানে মূলত পাশতু জনগোষ্ঠীর শরণার্থীদের ভিড় শুরু হয়েছিল। দুদশক আগে আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনা অভিযান শুরুর পরও কয়েক লক্ষ আফগান নাগরিক প্রাণভয়ে পাকিস্তানে পালান। মূলত পাক-আফগান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার-পাখতুনখোয়া এবং বালুচিস্তান প্রদেশে তাঁদের বসবাস। পাক সরকারের দাবি, তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় তা সাড়ে ১৭ লক্ষের আশপাশে। এর আগে ২০২৩ সালেই ১৭ লক্ষ অভিবাসীকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয় পাকিস্তান। সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে। পাক সরকারের দাবি, বেআইনি বিদেশি নাগরিক প্রত্যাবর্তন কর্মসূচি’তে এ পর্যন্ত সাড়ে ৮ লক্ষ আফগানকে দেশে ফেরানো হয়েছে। বাকিদেরও আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়তে হবে। নাহলে সবাইকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এখনও যেসব আফগান পাকিস্তানের মাটিতে বসবাস করছেন, তাঁদের অনেককে পশ্চিম বিশ্বের কিছু দেশ আশ্রয় দিতে রাজি। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে সেই স্বস্তিটুকুও নেই। ফলে পাকিস্তান যদি আফগানদের বের করে দেয়, বহু মানুষ সমস্যায় পড়বে।
মূলত দুটি কারণে পাক সরকারের এই সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এক, দেশের অর্থনীতির অচলাবস্থা। দুই, বালোচিস্তানে পাক বিরোধী বিক্ষোভ। পাক সরকার মনে করছে, বালোচিস্তানে তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের সক্রিয়তার জন্য দায়ী আফগান শরণার্থী এবং আফগানিস্তানের তালিবান সরকার। অভিবাসীদের দেশছাড়া করার হুমকি দিয়ে একসঙ্গে অভিবাসী এবং আফগান সরকার দুপক্ষের উপরই চাপ বাড়ানো যাবে।