সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্য। গাজা যুদ্ধের দাবানল ক্রমে গ্রাস করছে পশ্চিম এশিয়াকে। যে কোনও মূহুর্তে প্রবল লড়াই শুরু হয়ে যেতে পারে ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কাজান শহরে ব্রিকস সামিটের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস্কিয়ান। বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফেরাতে বড় ভূমিকা নিতে পারে ভারত।
৩ বছর হতে চললেও থামেনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সংঘাত থামিয়ে শান্তির পথে ফেরার জন্য দুদেশের রাষ্ট্রপ্রধানকেই বার্তা দিয়েছেন মোদি। প্রত্যেকবার তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, যুদ্ধের ময়দানে কখনও সমস্যার সমাধান হয় না। কূটনৈতিক আলোচনা ও বৈঠক জরুরি। এবার ভারতের এই বিদেশনীতিতেই নাকি ভরসা রাখতে চাইছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। রয়টার্স সূত্রে খবর, ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে মঙ্গলবার পেজেস্কিয়ানের সঙ্গে বৈঠক সারেন মোদি। পশ্চিম এশিয়ার উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন নমো। তখনই শান্তিস্থাপনের উপর জোর দিয়ে পেজেস্কিয়ান বলেন, "মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে নয়াদিল্লি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।" এছাড়ও জানা গিয়েছে, এদিনের আলোচনায় ভারত-ইরান বন্ধুত্ব আরও মজবুত করতে সহমত পোষণ করেছেন মোদি ও পেজেস্কিয়ান।
ভারত-ইরানের বন্ধুত্ব দীর্ঘ দিনের। কাশ্মীর ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একাধিকবার দিল্লির হয়ে সুর চড়িয়েছে তেহরান। ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়েও দুদেশ একে ওপরের সহযোগী। কিন্তু সম্প্রতি খানিক হলেও দূরত্ব বেড়েছিল দুদেশের মধ্যে। ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা আলি খামেনেই দাবি করেন, "ভারতে মুসলিমদের উপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।" যার পালটা দিয়ে সাউথ ব্লক সাফ জানায়, "আগে নিজের ঘর সামলান, পরে অন্যকে জ্ঞান দেবেন।" এর পরই জল্পনা শুরু হয়, ইরান-ভারত বন্ধুত্বে কি এবার দাড়ি পড়তে চলেছে? কিন্তু মোদি-সাক্ষাতে কার্যত সেই জল্পনা উড়িয়ে দিলেন পেজেস্কিয়ান।
প্রসঙ্গত, ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়ে আমেরিকার রক্তচক্ষুর নজরে পড়েছে ভারত। কিন্তু তাতেও তেহরানের হাত ছাড়েনি দিল্লি। কিন্তু এদিন মোদি-পেজেস্কিয়ান সাক্ষাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে আমেরিকার কপালেও। আবার ইজরায়েলের সঙ্গেও বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন মোদি। একইভাবে ইহুদি দেশটিকেও শান্তির বার্তা দিচ্ছেন তিনি। ফলে মুসলিম বিশ্বে ভারসাম্যের খেলাতেই শান্তির পথ বাতলে দিতে চায় ভারত। এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, কূটনীতির কারবারিদের মতে, সংঘাত থামিয়ে শান্তির পথে ফিরতে পুতিনের ভরসা মোদি। একইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীই 'শান্তির দূত' ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে। এবার পেজেস্কিয়ানও হস্তক্ষেপ চাইছেন দিল্লির। এটাই প্রমাণ যে বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক যেকোনও ইস্যুতেই ভারতের বিদেশনীতি থেকেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে চায় একাধিক দেশ।