সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধে সাহায্যের বিনিময়ে 'অর্ধেক রাজত্ব' দাবি করেছিল আগেই, এবার ইউক্রেনের থেকে 'রাজকন্যা'ও দাবি করে বসল ট্রাম্প প্রশাসন! রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছিল আমেরিকা। তার বিনিময়ে ইউক্রেনের অর্ধেক খনিজের পর এবার ইউরোপে গ্যাস সরবরাহকারী রাশিয়ার পাইপলাইনের অধিকার দাবি করল ট্রাম্পের আমেরিকা। ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য ইউক্রেনের উপর দিয়ে যাওয়া এই পাইপলাইনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমেরিকা সেই পাইপলাইনের স্বত্ব নিতে চাওয়ার ঘটনাকে বড় চাল হিসেবে দেখছে কূটনৈতিক মহল। আমেরিকার এই দাবিকে 'ঔপনিবেশিক চাপ' বলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে কিয়েভ।

ইউক্রেনের সঙ্গে খনিজচুক্তি সম্পন্ন করতে গত শুক্রবার বৈঠকে বসেছিল ওয়াশিংটন ও কিয়েভের আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, সেখানেই আগের তুলনায় আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখায় ট্রাম্প প্রশাসন। ইউক্রেনের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বিরল খনিজ তো বটেই আমেরিকা প্রস্তাব দেয় ইউক্রেনের উপর দিয়ে যাওয়া রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে হবে আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স কর্পোরেশনের হাতে। আমেরিকার এহেন দাবিতে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ ইউক্রেন।
ইউক্রেনের অর্থনীতির দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই গ্যাস পাইপলাইন। যা রাশিয়ার সুধজা শহর থেকে ইউক্রেনের উজহোরোদ শহরের মধ্য দিয়ে স্লোভাকিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। সোভিয়েত যুগে নির্মিত হওয়া এই গ্যাস পাইপলাইন পাড়ি দিয়েছে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ। ইউক্রেনের অর্থনীতি তো বটেই ইউরোপের অন্যতম প্রধান জ্বালানি সরবরাহের পথ এটি। দীর্ঘ বছর ধরে এর মাধ্যমে কোটি কোটি অর্থ উপার্জন করেছে ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই দেশ। তবে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ৫ বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষের পর আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে গ্যাস সরবরাহ। এবার সেই পাইপলাইন আমেরিকা নিজেদের অধিকারে নিতে চাওয়ার ঘটনাকে মোটেই ভালো চোখে দেখছে না ইউক্রেন। কিয়েভের সেন্টার ফর ইকোনমিক স্ট্র্যাটেজির শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ভলোদিমির লানদা বলেন, 'আমেরিকা চাইছে যতটা সম্ভব আদায় করে নিতে। তবে এই ঔপনিবেশিক চাপ কিয়েভের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।'
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের দাবি মতো ইউক্রেনের ৫০০ মিলিয়ন ডলারের খনিজ আমেরিকাকে দিতে রাজি হয়েছিলেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেনের দাবি ছিল এই চুক্তির বিনিময়ে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দিতে আমেরিকাকে। অর্থাৎ ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। যদিও তাঁর সে দাবি খারিজ করে দেওয়া হয়েছে আমেরিকার তরফে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, নিঃশর্তভাবে এই চুক্তি সাক্ষর করতে হবে ইউক্রেনকে। এরই মাঝে ট্রাম্পের গ্যাস পাইপলাইনের অধিকার দাবি ইউক্রেন আদৌ মেনে নেবে না বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।