সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম দ্রাম্, শুনে লাগে খটকা...' কিংবা 'হুড়মুড় ধুপ্ধাপ্— ওকি শুনি ভাই রে!' সুকুমার রায়ের 'শব্দকল্পদ্রুম'-এর এই সব পঙক্তি সত্যি হয়ে উঠেছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায়। কেননা একনায়ক কিম রাজা সেখানে প্রয়োগ করেছেন তাঁর নয়া অস্ত্র 'নয়েজ বম্বিং'!
ব্যাপারটা ঠিক কী? আসলে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে দুই দেশের অসামরিক এলাকার বাসিন্দাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে। অভিযোগ, উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে বসানো লাউড স্পিকারে ভেসে আসছে আশ্চর্য ভয়ানক সব শব্দ! কীরকম শব্দ? এতে কিন্তু বৈচিত্র রয়েছে। কখনও একযোগে চিৎকার করে চলেছে ভূতেরা। কখনও বা ডেকে চলেছে অসংখ্য নেকড়ে। সেই সঙ্গে বিকট ধাতব শব্দ। কিংবা কোনও পাগল বানরের ভাঙা পিয়ানো বাজানোর মতো শব্দ ভেসে আসছে সহ্যের অতিরেক বেগে। এমনই নানা বিদঘুটে, অস্বস্তিকর শব্দ ভেসে আসছে ভীম বেগে। প্রবল জোরে ওই ধরনের শব্দ ছুটে আসায় আশপাশের গ্রামের মানুষরা ঘুমোতে পারছেন না। ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। সেখানকার এক বাসিন্দা 'নিউ ইয়র্ক টাইমস'কে তাঁর নিদারুণ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানাচ্ছেন, ''এটা আমাদের পাগল করে দিয়েছে। রাতে ঘুমোতে পারছি না।''
ব্যাপারটা শুরু হয়েছে জুলাই থেকে। দিনে ১০ থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত চলছে শব্দদানবের অত্যাচার। আগে সীমান্তে লাউড স্পিকার লাগিয়ে সেখানে নানা ধরনের প্রোপাগান্ডা তথা যুদ্ধের হুমকি প্রচার করত কিমের প্রশাসন। কিন্তু সেসব এখন অতীত। অতিকায় লাউড স্পিকার, পুরোটাই বিকট শব্দ। আর সেই শব্দব্রহ্মে পাগল হয়ে যাচ্ছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। সবথেকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কেবারে কাছের গ্রাম ডাংসানের বাসিন্দাদের।
দুই কোরিয়ার মধ্যে অশান্তি আজকের নয়। ১৯৫০-৫৩ সালের শান্তি চুক্তির পর থেকেই বার বার উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। কিন্তু কিম জং উনের আমলে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সিওল কিংবা ওয়াশিংটন সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা দ্বিগুণ করে দিয়ে কিম 'রণং দেহি' ভঙ্গিতে কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। কেবল সরাসরি যুদ্ধই নয়, নানা ভাবে তিনি উত্ত্যক্ত করতে চেয়েছন প্রতিবেশী দেশকে। গত মে মাসে আবর্জনা ভর্তি বেলুন সীমান্তের অন্য প্রান্তে পাঠাচ্ছিল কিমের সেনা। জবাবে লাউ়ডস্পিকারে দক্ষিণ কোরিয়া পপ গান বাজাচ্ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। আর তার পর শুরু হয়েছে কিমের এহেন শব্দদানবের অত্যাচার। এই পরিস্থিতিতে যদি সত্যিই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়, তাহলে অবাক হবে না ওয়াকিবহাল মহল।