সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুর। সোমবার সেদেশের আদালত তাঁর বিরুদ্ধে আনা ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব বাতিল করেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে দেশে সামরিক আইন জারির ঘোষণার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে বরখাস্ত করা হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন হান। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে তিনিও আইনপ্রণেতাদের রোষের মুখে পড়েন। তাঁকেও বরখাস্ত করা হয়। এতদিন হানের ভাগ্য নির্ভর করছিল আদালতের নির্দেশের উপরে। অবশেষে স্বস্তি পেলেন তিনি।

জানা গিয়েছে, আজ সোমবার হানের ইমপিচমেন্ট বাতিল করা নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালতে ভোটাভুটি হয়। ভোট দেন আট বিচারপতি। এখানেই ৭টি ভোট যায় হানের পক্ষে। একজন বিচারপতি বাদে অন্যান্য সকলেই হানের ইমপিচমেন্ট প্রস্তাব সম্পূর্ণ বাতিলের পক্ষে ভোট দেন। শেষ পর্যন্ত হানকে ফের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে ঐতিহাসিক ঘোষণা করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইওল। অভিযোগ তোলেন, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে সামরিক আইন বা মার্শাল ল জারি করা হয়। বকলমে এই আইন দেশে জরুরি অবস্থা লাগু করার সামিল। তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে পরাহত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু এই ঘোষণার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের জনতা। দেশের নানা প্রান্তে শুরু হয় বিক্ষোভ, আন্দোলন। সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পথে নামে গোটা দেশ। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরাও সংসদ ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভ সামাল দিতে সংসদ ভবন চত্বরে সেনা নামাতে হয় সরকারকে। সেই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তা প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট। এরপর ১৪ ডিসেম্বর ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ভোটাভুটির পর বরখাস্ত হন ইওল। শুরু হয় ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে সেখানকার আদালতও।
এরপরই ইওলের জায়গায় ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন হান। কিন্তু মাত্র দু’সপ্তাহ এই পদে বহাল থাকার পর বিপদে পড়েন তিনি। কারণ এই দায়িত্বগ্রহণ করার পর হান সাংবিধানিক আদালতে তিন জন বিচারপতিকে নিয়োগ করতে অস্বীকার করেন। এর পরেই বিরোধীদের সঙ্গে বিরোধের মুখে গত ২৭ ডিসেম্বর তাঁর বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব আনা হয়। পাশাপাশি, সামরিক আইন জারির নেপথ্যেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। হান বরখাস্ত হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেন সেদেশের অর্থমন্ত্রী চৌই সাং-মক। কিন্তু আদালতের নির্দেশে ফের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট পদে বহাল রইলেন হান। যতদিন না নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত দায়িত্ব সামলাবেন হান।