সুকুমার সরকার, ঢাকা: উচ্চতা ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। পথেঘাটে বেরলে অবাক দৃষ্টিই পাওনা তাঁর। না বললেও অনেকেরই মনের কথা-‘এ মানুষ নয়, এ দানব’। তবে ‘সাধারণত্বে’ অভ্যস্ত সমাজের কাছে অসাধারণ বা ভীতিকর হলেও, আদতে ‘দ্য জেন্টল জায়ান্ট’ বাংলাদেশের জিন্নাত আলি। বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষ বলে নিজেকে দাবি করেন তিনি। হরমোন জনিত কিছু সমস্যার দরুণ অস্বাভাবিকভাবে উচ্চতা বেড়েছে ২২ বছরের এই যুবকের। ফলে নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁকে। উন্নত চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সঙ্গতি নেই তাঁর পরিবারের। এই কথা জানতে পেরে ‘বিস্ময় মানব’ জিন্নাতের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয় বহন করার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
[ভারতের উদ্যোগে মাথা গোঁজার ছাদ পাচ্ছে ঘরছাড়া রোহিঙ্গারা]
বর্তমানে রাজধানী ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজে ভরতি রয়েছেন জিন্নাত। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে সংসদ ভবনে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। এহেন বিরল রোগ ও জিন্নাতের আর্থিক দুরবস্থার কথা শুনে চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করার আশ্বাস দেন তিনি। একাধিক জটিল রোগে ভুগছেন তিনি। মাত্রাতিরিক্ত উচ্চতার ফলে শরীরিক সঞ্চালনে দেখা দিয়েছে জটিলতা। মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মহম্মদ আবদুল্লা বলেন, “জিন্নাতের মস্তিষ্কে টিউমার রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া হরমোন জনিত সমস্যার কারণে ওর উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও পরীক্ষা করতে হবে। এমনই সমস্যা নিয়ে আগেও কয়েকজন রোগী এসেছিল। তবে জিন্নাতের মতো দীর্ঘদেহী কেউই ছিল না।” এদিকে শরীরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জিন্নাতের পেটে রয়েছে দানবীয় খিদে। একটি সাধারণ মানুষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি খাদ্যের প্রয়োজন হয় তাঁর। এদিকে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এই বিপুল খাবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারের লোকজনদের। একাই একবারে এক কেজি চালের ভাত খান জিন্নাত। সঙ্গে বিপুল পরিমাণে তরকারির দাবি থাকে তাঁর। মাছ-মাংসের পরিমাণও থাকে কেজিতে। হাসপাতালেও জিন্নাত একাই চারজন রোগীর খবর খান। তবুও তাঁর খিদে মিটতে চায় না।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামে বাড়ি জিন্নাত আলির। বৃদ্ধ বাবা আমির হামজার এক মেয়ে, তিন ছেলের মধ্যে জিন্নাত তৃতীয়। তাঁর দাদা ইলিয়াস আলী জানান, ছোটবেলায় অন্য সবার মতো স্বাভাবিক ছিল জিন্নাতের গড়ন। কিন্তু বয়স যখন ১২ বছর, তখন থেকেই দ্রুত উচ্চতা বাড়তে থাকে তার। প্রতি বছর দুই থেকে তিন ইঞ্চি করে আকৃতি বাড়তে থাকে। ১০ বছরের মধ্যে প্রায় চার ফুট উচ্চতা বেড়ে জিন্নাত এখন ৮ ফুট ৬ ইঞ্চির এক অতিমানব। ছয় বছর আগে পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) আনা হয়েছিল জিন্নাতকে। তখন বলা হয়, অস্ত্রোপচার করতে হবে। ১২ লক্ষ টাকা খরচ হবে। অপারেশন না করলে বাঁচানো যাবে না তাঁকে। উল্লেখ্য, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ তুরস্কের সুলতান কশেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। ১৯৮২ সালে জন্মেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকায় ব্যক্তির স্বীকৃতি দেয়।
[খাশোগ্গি হত্যায় চড়ছে পারদ, অভিযুক্তদের ভিসা প্রত্যাহার করল আমেরিকা]
The post হাসপাতালে বিশ্বের ‘সবচেয়ে লম্বা’ মানুষ, চিকিৎসার ব্যয় বহন করবেন হাসিনা appeared first on Sangbad Pratidin.