ধীমান রায়, কাটোয়া: পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার আউশগ্রামের গোয়ালআড়া গ্রামের মণ্ডল পরিবারের দুর্গাপুজো (Durga Puja 2022) এখন সর্বধর্মের পুজো। যা আগে শুধুই পারিবারিক পুজো ছিল, তা এখন গোয়ালআড়া গ্রামের সকলের দুর্গোৎসব। গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজনও উৎসবের অংশীদার। মন্দিরের সামনে ঝাঁট দেওয়া থেকে শুরু করে বাজার, পুজোর জোগাড় সবই করেন তাঁরা।
গোয়ালআড়া গ্রামের মণ্ডল পরিবারের এই পুজোর সূচনা হয় প্রায় দেড়শো বছর আগে। শোনা যায়, প্রায় দেড়শো বছর আগে মণ্ডল পরিবারের এক পূর্বপুরুষ এই পুজোর সূচনা করেন। তখন পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল। দুর্গাপুজো ধুমধাম সহকরেই হত। পরপর কয়েক প্রজন্ম যথাযথভাবে পুজো করেও আসছিলেন। তেমন বিলাসিতা না থাকলেও পুজোর আয়োজনে ভাঁটা পড়েনি।
[আরও পড়ুন: মহালয়ায় কতক্ষণ থাকবে অমাবস্যা? কখন শুরু সন্ধিপুজো? জেনে নিন দুর্গাপুজোর নির্ঘণ্ট]
গ্রামবাসী সুনীল মণ্ডল বলেন, “বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই মণ্ডল পরিবারের আর্থিক অনটন শুরু হয়। দুর্গাপুজোর খরচ কম নয়। তাই পরিবারের পক্ষ থেকে আর পুজো করা সম্ভব ছিল না। তাই পুজোর দায়িত্ব গ্রামের সকলে নিয়ে নেন। এখন এটি বারোয়ারি পুজো। শুধু বারোয়ারি বলা ভুল, এই পুজোয় এখন হিন্দু-মুসলিম সকলের সমান অধিকার।”
জানা যায় গোয়ালআড়া গ্রামের দুর্গাপুজোয় প্রতিমা তৈরির সময় থেকে নিরঞ্জনের সময় পর্যন্ত গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ সমানভাবে দায়িত্ব পালন করেন। পুজোর যাবতীয় খরচ হিন্দু-মুসলিম সকলেই ভাগ করে নেন। যদিও পুরানো আমলের মাটির ঘরে দেবীর মন্দির। মন্দির চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে মন্দিরের তদারকি, বাজারহাট করা সবেতেই গোয়ালআড়া গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সমান ভূমিকা। পুজোর খরচ ছাড়াও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করতে যা খরচ তাতেও সমানভাবে দায়িত্ব পালন করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।
গ্রামবাসী শেখ মোস্তাক আলি, আবদুল গনিদের কথা অনুযায়ী, গ্রামের এই দুর্গাপুজো দেড়শো বছরের পুরনো। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা তাঁদের সকলের কর্তব্য। আবদুল গনি বলেন, “আমাদের দুর্গামন্দিরটি অনেক পুরনো, ভগ্নপ্রায়। এটি ভেঙে নতুন পাকা মন্দির তৈরি করার ইচ্ছা রয়েছে। ইতিমধ্যে পাশের গ্রামের বাসিন্দা আবদুল লালন নামে একজন ব্যবসায়ী আমাদের নতুন মন্দির নির্মাণের জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও চাঁদা তুলছি। আশা করছি নতুন মন্দিরের কাজ আগামী বছরের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।”
গোয়ালআড়া গ্রামের দেবীপ্রতিমার নিরঞ্জন হিন্দু ভক্তদের পাশাপাশি মুসলিমদের কাঁধে চড়েও হয়। মণ্ডল পরিবারের এই পুজো শাক্তমতে হয়। তাই বলিদান প্রথা রয়েছে। পুজোর নিয়মকানুন বদলাননি গ্রামবাসীরা।