স্টাফ রিপোর্টার: ভারতের সাদা টেস্ট জার্সিতে আর হয়তো দেখা যাবে না ‘সুপারম্যান’কে। স্টাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে আর হয়তো অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ নেবেন না তিনি। আর হয়তো টিমের দুর্যোগে প্রতিরোধের প্রাচীর হয়ে উঠবে না তাঁর ব্যাট। কারণ সংবাদ সংস্থার খবর ধরলে, ঋদ্ধিমান সাহার টেস্ট কেরিয়ারের সূর্যাস্ত হয়ে গেল মঙ্গলবার। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের প্রভাবশালী অংশ ঋদ্ধিমানকে নাকি বলে দিয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দেশের মাঠে টেস্টে আর টিমে নেওয়া হবে না ঋদ্ধিকে। টিম নতুন রক্ত চায়, নতুন ব্যাকআপ কিপার চায়। ঋদ্ধিকে আর চায় না!
প্রথম চাঞ্চল্যটা ছড়িয়েছিল গতকাল সন্ধেয় রনজি ট্রফির (Ranji Trophy) টিমে ঋদ্ধিমানের না থাকাকে কেন্দ্র করে। চেতেশ্বর পূজারা থেকে শুরু করে অজিঙ্ক রাহানে- সবাই রনজি খেলছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে বাংলার রনজি টিম লিস্টে ছিলেন না ঋদ্ধিমান। যে দলে জায়গা করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের রবি কুমার। অভিমন্যু ঈশ্বরণের নেতৃত্বে খেলবেন মন্ত্রী মনোজ তিওয়ারিও। কিন্তু ঋদ্ধি কেন নেই? ব্যাখ্যা চাইলে সিএবির তরফে বলা হয়, ব্যক্তিগত কারণে নিজেকে রনজি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন ঋদ্ধিমান। কে জানত, সেই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে এত বেদনাদায়ক কাহিনী লুকিয়ে রয়েছে? সংবাদ সংস্থা যে লিখে দিয়েছে, টিমে থাকবেন না জেনেই নাকি নিজেকে রনজি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন ঋদ্ধিমান।
[আরও পড়ুন: মাঠের বাইরেও রাজা রোনাল্ডো, বিশ্বের একমাত্র তারকা হিসেবে গড়লেন নয়া রেকর্ড]
ভারতীয় টেস্ট উইকেটকিপারকে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন ধরলেন না। তাঁর পরিবারের কেউও ফোন ধরেননি। কিন্তু ক্রিকেটমহল বুঝতে পারছে না, মাঝের সময়ে কী এমন ঘটে গেল যে একেবারে টিম থেকে সোজাসুজি বাদ পড়ে গেলেন ঋদ্ধি। কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে চাপের মধ্যে লড়াকু ৬১ করেন বঙ্গসন্তান। সেটাও ঘাড়ে চোট নিয়ে, আগের রাত ভাল করে না ঘুমিয়ে, ইঞ্জেকশন নিয়ে ব্যাট করতে নেমে। যা দেখে সুনীল গাভাসকর পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল চতুর্দিকে। পরের মুম্বই টেস্টেও খারাপ খেলেননি। তাহলে?
বলাবলি চলছে, দিনের পর দিন, ম্যাচের পর ম্যাচ, বছরের পর বছর, চূড়ান্ত খারাপ খেলা সত্ত্বেও জাতীয় নির্বাচকরা এখনও দুই সিনিয়র ভারতীয় ব্যাটার চেতেশ্বর পূজারা আর অজিঙ্ক রাহানেকে কিছু বলে উঠতে পারলেন না। বরং তাঁরা শেষ লাইফলাইনের খোঁজে রনজি খেলবেন। যা শুরু হতে চলেছে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। আর ঋদ্ধিমান (Wriddhiman Saha)– তাঁরই ব্যাকআপের প্রয়োজন পড়ল? তাঁর ক্ষেত্রেই তরুণ রক্তের প্রয়োজন? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ফিটনেস যদি এক্ষেত্রে মানদণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে টিমের (Team India) প্রথম তিনে আসেন ঋদ্ধিমান। বয়স তো মহেন্দ্র সিং ধোনিরও হয়েছিল। কিন্তু তিনিও তো উনচল্লিশ বছর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন ফিট ছিলেন বলে। তাহলে ঋদ্ধিমান কী দোষ করলেন?
এটা ঘটনা যে, ঋদ্ধিমানের সঙ্গে এসব প্রথম হচ্ছে না। ধোনির (MS Dhoni) ছায়ায় কেরিয়ারের দীর্ঘ একটা সময় পেরিয়ে যাওয়া না হয় নিতান্ত দুর্ভাগ্য। কিন্তু পরবর্তী কালেও তাঁকে কখনও নিরঙ্কুশ ভাবে সুযোগ বা সমর্থন করা হয়নি। কখনও ঋষভ পন্থকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কালে কালে ঋদ্ধি টিমের দ্বিতীয় উইকেটকিপারও হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও একবারও কখনও তিনি কোথাও অসন্তোষ দেখাননি। একবারও বলেননি, অবিচার হচ্ছে। শেষ দিকে তো কোনা ভরতকে খেলানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। ঋদ্ধি রান করে দিয়ে সব প্রচেষ্টায় জল ঢেলে দেন। কে ভেবেছিল, সেটা নিছকই সাময়িক প্রতিরোধ। কে ভেবেছিল, টিম ম্যানেজমেন্টের ‘প্রিয়পাত্র’ কোনা ভরত ফের ভেসে উঠবেন? সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, কোনা ভরতই নাকি শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্টে রিজার্ভ কিপার হিসেবে থাকবেন।
[আরও পড়ুন: কোচের মগজাস্ত্রেই বাজিমাত, হায়দরাবাদকে হারিয়ে মূল্যবান ৩ পয়েন্ট তুলে নিল সবুজ-মেরুন]
কী হবে এবার? ঋদ্ধি তাহলে কী করবেন এখন? আসন্ন আইপিএল নিলামে (IPL Auction 2022) নাম জমা করেছেন বঙ্গসন্তান। আশা করা যায়, কোনও না কোনও টিম ঠিকই পেয়ে যাবেন। কারণ ওপেন করে ভাল ব্যাটিং গত কয়েক বছর ধরেই করছেন আইপিএলে। তাছাড়া নিশ্ছিদ্র উইকেটকিপিং তো আছেই। কিন্তু সাদা জার্সি? টেস্ট? ৪০ টেস্ট, ১৩৫৩ রান, গড় ২৯.৪১, ৩ সেঞ্চুরি, ৬ হাফসেঞ্চুরি, ৯২ ক্যাচ, ১২ স্টাম্পিং- পরপর সব পরিসংখ্যানগুলো মনে হচ্ছে চিরকালের মতো নিশ্চল হয়ে গেল। কমবেও না, বাড়বেও না!