আকাশ মিশ্র: বলিউড শিখিয়েছে ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’! তাই অগত্যা বীরত্বকে প্যাকেটে ভরে, জিমে গিয়ে পেশি ফোলানো। মাচো হয়ে ওঠার কসরত। ১৬ বছরের কিশোরও দাড়ি না ওঠা গালে রেজারের আঘাত দিতে ব্যস্ত। পুরুষ হয়ে ওঠার সমস্ত নিয়মকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নেওয়ার হুড়োহুড়ি। সমাজ তো আমাদেরই। তাই মালিকানা ভোগ করার লড়াইয়েই মত্ত। ঠিক এই সমাজেই পুরুষের মুখে ঝামা ঘষে যখন ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠে কোনও নারী! তখন খবরের হেডলাইনে হয় নারীর জয়গান। সেই নারীর গলায় সাহসিনীর মেডেল। কিছুদিন আগেও যে নারীকে নষ্ট মেয়ে বলে কত কথা, কত আলোচনা! সব ভ্যানিশ? পালটি খেয়ে সেই নারীই এখন সমাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চাকা? আর তাঁর পাশে থাকা পুরুষটি, ফাউ নাকি?
উপরের এই পুরুষ পুরুষ কথাগুলো একেবারেই অভিনেতা যশ দাশগুপ্তকে (Yash Dasgupta) নিয়ে। আর ওই সাহসিনী মেয়ে হলেন অভিনেত্রী নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। নুসরত কী করেছেন, তা এখন আট থেকে আঠারো সবাই জানে। গত কয়েকমাস ধরে পাড়ার মোড় থেকে চায়ের ঠেকে সেই একই নুসরত কাণ্ড। একটি মেয়ে তুরস্কের মাটিতে স্বপ্নের মতো বিয়ে সেরে, দুম করে ভারতে এসে তা অস্বীকার করলেন। এক নায়কের প্রেমে পড়ে নাকি সো-কল্ড স্বামীর সংসার ছাড়লেন। কারও কথায় কান না দিয়ে গুঞ্জনে থাকা সেই প্রেমিকের সঙ্গে ইচ্ছেমতো সময় কাটালেন। হঠাৎ করে বোমা ফাটালেন অন্তঃসত্ত্বা হয়ে। ৯ মাস কাটিয়ে প্রেমিকের সঙ্গেই হাসপাতালে গেলেন। মা হলেন। প্রেমিকের গাড়িতে বসেই বাড়ি ফিরলেন সন্তান কোলে। এর মাঝে অবশ্য প্রেমিকের হাত ধরে এদিক, ওদিক ঘুরেছেন, ফিরেছেন। কফি ডেট থেকে লাঞ্চ ডেটেও গিয়েছেন। উঠুক গুঞ্জন, কাউকে পাত্তা দেননি এই প্রেমিক জুটি!
[আরও পড়ুন: ছেলে নিয়ে বাড়ি ফেরার পর প্রথম ছবি পোস্ট করলেন Nusrat Jahan]
ভাবছেন এ গল্প তো বস্তাপচা। এতে নতুন কী? গুঞ্জন থেকে একটু চোখ সরান। এমনকী, নুসরতের সন্তানের বাবা কে, সে প্রশ্নটাও আপাতত একটু পাশে সরিয়ে রাখুন। এই গোটা পর্বে পার্শ্ব চরিত্রের মতো যিনি সদা বিরাজমান ছিলেন সেই যশের কথা ভাবুন!
অভিনেতা যশ দাশগুপ্তর কেরিয়ারটা দেখুন। ধারাবাহিক থেকেই জনপ্রিয়তায় আসা। ‘বোঝে না সে বোঝে না’ (Bojhena Se Bojhena) টিভি ধারাবাহিকের ‘অরণ্য সিংহরায়’ চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি সেলিব্রিটি। তার আগে অবশ্য কয়েকটা সিনেমা করেছেন যশ। সেগুলো বক্স অফিসে কামাল দেখাতে পারেনি তেমন। সেগুলোর কয়েকটিতে নুসরত, যশের নায়িকা হিসেবে ছিলেন অবশ্য। তবে হিট নায়কের তালিকায় কখনওই যশকে রাখা যায় না। অন্যদিকে দেখুন, নুসরত সফল অভিনেত্রী। কয়েকটা হিটও আছে তাঁর ঝুলিতে। সাংসদ। সেভাবে দেখতে হলে সফল এক নারী। সেই সফল নুসরতের ব্যতিক্রমী লড়াইয়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন যশ। আর শুধু পাশে নয়, রীতিমতো শক্তপোক্ত খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তিনি জানতেন, নুসরতের এই লড়াইয়ে তিনি সঙ্গ দিলে বদনাম হবেন। হয়েওছেন। ক্ষতি হতে পারত তাঁর কেরিয়ারের। তবুও একটিবারের জন্যও নুসরতের পাশ থেকে সরে যাননি যশ। ভেঙে পড়তে দেননি অভিনেত্রীকে। শক্ত করে হাত ধরে সমস্তরকম বিতর্ক এড়িয়েছেন। এগিয়ে এসে সমাজের ছোঁড়া কাদা গায়ে মেখেছেন। তর্ক উঠতেই পারে, নুসরতকে তো ভালবাসেন যশ। এটুকু করবেন না? নাই তো করতে পারতেন! যদি পাশে না থাকতেন, আইনে কি বাঁধা যেত তাঁকে?
নুসরতের লড়াইটা নুসরত নাকি একা লড়েছেন। মা হওয়ার পর হঠাৎ করেই এতদিন চলে আসা নুসরতকে নিয়ে গুঞ্জনের সমীকরণ এভাবেই বদলে গেল। যে মা হওয়া নিয়ে এত গুঞ্জন, তা লড়াইয়ের রূপ পেল। নুসরতের গায়ে সাহসিনীর তকমা। কিন্তু সত্যিই কি এই লড়াইটা শুধুই তাঁর? বদনাম তো গায়ে মেখেছেন যশও। মানসিক দিক থেকে তিনিও নিশ্চয়ই বিপর্যস্ত হয়েছেন । তবুও নুসরতের পাশে শক্ত হয়ে থেকেছেন। একবারও নিজেই নেওয়া নিজের দায়িত্ব থেকে সরে যাননি। বরং নুসরতের বিদ্রোহী রথের সারথী হয়ে থেকেছেন বরাবর। নিন্দুকেরা বলেছেন, নুসরত সাংসদ হওয়ার জন্যই নাকি তাঁর গা ঘেঁষে রয়েছেন যশ। অনেকে আবার বলেছে, কেরিয়ারকে লিফট দিতেই এই উপায়ে লাইমলাইটে থাকা! পাত্তা দেননি যশ। এক অদ্ভুত মন্তরে যেন নুসরতের সঙ্গে বাঁধা পড়েছেন যশ।
বৃহস্পতিবার পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন নুসরত। আড়াই দিন ধরে হাসপাতালে ঘোরাফেরা যশের। নুসরতের সন্তানকে কোলে করে গাড়িতে উঠলেন যশ। হাসপাতাল থেকে গাড়ি চালিয়ে নুসরতকে নিয়ে বাড়ি ফিরলেন নায়ক। নুসরত ছেলের নাম দিলেন ঈশান। ইংরেজি অক্ষরে যার বানান Yishaan। নিন্দুকেরা এখানেও খুঁজে বার করল বিতর্ক। নুসরতের ছেলের নামের শুরু Y দিয়ে। নুসরত নাকি এভাবেই ইঙ্গিত দিলেন তাঁর সন্তানের বাবা কে? নুসরত চুপ। যশ চুপ। সাহসিনী, ব্যতিক্রমী নুসরতের পাশে এভাবেই রইলেন যশ। নুসরত পর্বের পার্শ্বচরিত্র হয়ে! বাস্তবের গল্পেও হিরো হয়ে ওঠা হল না যশের। শুধুই নুসরতের সন্তানের বাবা কি তিনি? এই মুখোরোচক গসিপেই তাঁর ‘যশ’লাভ। এতেও দুঃখ করা যাবে না। প্রতিবাদ করা যাবে না। কারণ, বলিউড শিখিয়েছে মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা!
[আরও পড়ুন: সন্তান প্রসবের মুহূর্তটি এভাবেই সেলিব্রেট করেছিলেন Nusrat Jahan]