শুভঙ্কর বসু: ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মার্কিন মুলুকের মাটিতে। অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্ত ভারতীয়, স্পষ্ট করে বললে কলকাতার ছেলেমেয়ে। আর অভিযুক্তর জামিনও হল কলকাতা হাই কোর্টে।
বিষয়টি শুনে অবাক হলেও জেনে রাখুন, শুধু ধর্ষণ নয়। বিশ্বের যে কোনও জায়গায় সংগঠিত কোনও অপরাধের সঙ্গে যদি ভারতীয় জড়িত থাকে। তাহলে এদেশের আদালতে তার বিচার হতে পারে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪ নম্বর ধারায় উল্লিখিত এই আইন সম্পর্কে অনেকেই জানতেন না। কিন্তু, উপরিউক্ত ঘটনাটি তা সামনে এনে দিয়েছে। যাকে ঘিরে ইতিমধ্যে কৌতূহল দানা বেঁধেছে রাজ্যের আইনজীবী মহলে।
[আরও পড়ুন: পার্ক সার্কাসের আন্দোলনকারীদের জন্য বায়ো টয়লেট, জল-বিস্কুট দিয়ে এগিয়ে এল ছাত্র সমাজ ]
ঘটনাটির সূত্রপাত গত বছরের নভেম্বরে, আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোয় (San Francisco)। সেখানে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন সার্ভে পার্ক এলাকার এক তরুণী। সেখানেই সাগ্নিক দে নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। MBA শেষ করে সেও পাড়ি দিয়েছিল মার্কিন মুলুকে। পরিচয় থেকে দু’জনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা হয়। আর অল্প দিনেই তা পরিণত হয় প্রেমে। এরপর সানফ্রান্সিসকোতে দু’জনে মিলে একটি ব্যবসাও শুরু করেন।
তরুণীর অভিযোগ, গত বছরের ২ নভেম্বর রাতে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে তিনি একটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন। সাগ্নিক-সহ অন্য বন্ধুরা উপস্থিত ছিলে সেখানে। পার্টি শেষ হয়ে যাওয়ার পর মদ্যপ অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে সাগ্নিক। তারপর থেকে তরুণীর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কোনও উপায় না দেখে এই ঘটনার ২৪ দিন পর সানফ্রান্সিসকো পুলিশের কাছে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। তারপর দেশে ফিরে আসেন। সানফ্রান্সিসকো পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি কলকাতার সার্ভে পার্ক থানাতেও সাগ্নিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণীর মা। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ডিসেম্বর মাসে সাগ্নিককে গ্রেপ্তার করে সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ।
[আরও পড়ুন: শ্বাসনালীতে কুলের বীজ আটকে বিপত্তি, কিশোরীকে বাঁচাল কলকাতা মেডিক্যাল ]
এই ঘটনার পর মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও তদন্তে কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় কলকাতা হাই কোর্টে জামিনের আবেদন জানায় সাগ্নিক। বিচারপতি সইদুল্লা মুন্সি ও বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি উঠলে জানা যায়, সানফ্রান্সিসকোতে অভিযোগ জানালেও তরুণীর কোনও শারীরিক পরীক্ষা হয়নি। এরপরই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা ও গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করার নির্দেশ দেয় বেঞ্চ। গোপন জবানবন্দি দিতে গিয়ে তরুণী জানান, সাগ্নিকের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিল। এবং সেকথা তিনি কাউকে জানাননি।
পরবর্তী শুনানির দিন সরকারি আইনজীবী শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘সাগ্নিক নামে ওই যুবক বিবাহিত। সেকথা গোপন করে ওই তরুণী-সহ অন্য অনেক মহিলার সঙ্গে সাগ্নিকের সম্পর্ক রয়েছে।’ যদিও সাগ্নিকের আইনজীবী প্রদীপকুমার ঘোষ পালটা বলেন, ‘২ নভেম্বর রাতে সাগ্নিকের সঙ্গে অনেকেই ওই হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণীই তাঁদের ডেকেছিলেন।’ এরপর আদালত তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্বাশ্বতবাবু জানান, সানফ্রান্সিসকো থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেগুলি পৌঁছতে আরও সময় প্রয়োজন।
সরকারি কৌঁসুলির এই আবেদন নাকচ করে আদালতের পর্যবেক্ষণ, ধর্ষণ, নাকি এটি সহমতের ভিত্তিতে যৌন মিলন তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই ঘটনায় আরও তদন্তের প্রয়োজন। তবে এই মুহূর্তে অভিযুক্তর আর আটক থাকার প্রয়োজন নেই। এরপরই এক লক্ষ টাকার ব্যক্তিগত বন্ড ও দেশ না ছাড়ার শর্তে সাগ্নিকের জামিন মঞ্জুর করে ডিভিশন বেঞ্চ। সাগ্নিকের পাসপোর্ট আদালতে জমা থাকবে। সপ্তাহে অন্তত একবার তাকে থানাতেও হাজিরা দিতে হবে।
The post সানফ্রান্সিসকোয় ধর্ষণ করে কলকাতার সার্ভে পার্কে গ্রেপ্তার যুবক appeared first on Sangbad Pratidin.