অর্ণব আইচ: সম্পত্তি বিবাদে বউদি ও এক বছরের ভাইপোকে খুন। ঘটনার ১২ বছর পর শুক্রবার খুনের দায়ে সত্য সাহা নামে দোষীর ফাঁসির সাজা ঘোষণা করল আদালত। তার স্ত্রী নন্দিতা সাহাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন বিচারক।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উল্টোডাঙা থানার সুরেন সরকার রোডে এই খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল। এখানেই স্ত্রী বুলু সাহা ও শিশুপুত্র ইন্দ্রজিৎ সাহাকে নিয়ে থাকতেন বিদ্যুৎ সাহা। একই বাড়িতে থাকত বিদ্যুতের ভাই সত্য ও ভাইয়ের স্ত্রী নন্দিতা। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বহুদিনের বিবাদ ছিল। তা নিয়েই পারিবারিক গোলমাল চরমে ওঠে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিল এক বছরের শিশু ইন্দ্রজিতের জন্মদিন। সেদিনই সুযোগ পেয়ে শিশুটিকে আদর করার অছিলায় আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়ে সত্য ও তার স্ত্রী গলা টিপে খুন করে। শিশুটির মা বুলু সাহাকে ব্যায়াম করার যন্ত্র দিয়ে প্রথমে আঘাত করা হয়। তারপর দড়ি গলায় পেঁচিয়ে তাঁকে খুন করে দোষীরা। মা ও শিশুর দেহ লোপাট করার দায়িত্ব নেয় সত্য।
[আরও পড়ুন: ফের মুখ্যসচিবকে রাজভবনে তলব, প্রয়োজনীয় নথি দেখে বাজেটে অনুমোদন রাজ্যপালের]
ক্যানাল ইস্ট রোডের খালের ধারে ফেলে দেয় শিশুটির দেহ। মায়ের দেহ নিয়ে চলে যায় হুগলির চণ্ডীতলায়। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাছে একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে দেয় মায়ের বস্তাবন্দি দেহ। পরে দেহ দু’টি উদ্ধার হয়। পরিবারের লোকেরা শনাক্ত করেন। শিশুর দেহ উদ্ধারের জেরে উল্টোডাঙা থানার পুলিশ খুনের মামলা শুরু করে। মায়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করে হুগলি জেলা পুলিশ। পরে সেই মামলা চলে আসে হুগলি থেকে চলে আসা কলকাতা পুলিশের হাতে। দু’টি খুনের তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। গ্রেপ্তার হয় স্বামী সত্য ও স্ত্রী নন্দিতা। তাদের বিরুদ্ধে চার্জ শিট ও চার্জ গঠন হয়। শুরু হয় শুনানি। মামলায় ৪৬ জন সাক্ষ্য দেন।
শুধু সম্পত্তির বিবাদে নিজের এক বছরের শিশু ভাইপোকে গলা টিপে খুন করতে দোষীদের হাত কাঁপেনি। এছাড়াও যেভাবে এক নিরীহ আত্মীয়াকে তারা খুন করে দেহ লোপাট করে দেয়, তাতে তাদের নৃশংসতাও শুনানির সময় বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। বৃহস্পতিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় খুন, ২০১ ধারায় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও ৩৪ ধারায় ষড়যন্ত্রে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। এদিন শিয়ালদহ আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারক খুনের দায়ে সত্য সাহাকে ফাঁসির নির্দেশ দেন। তার সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের দায়ে সাত বছরের সাজা ঘোষণা হয়। সত্যর স্ত্রী নন্দিতাকে বিচারক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের দায়ে তার তিন বছরের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দোষীদের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: নির্জন রাস্তায় মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের পর ডাকাতি, সর্বস্ব খোয়ালেন যুবক]
The post উল্টোডাঙায় সম্পত্তির লোভে বউদি ও ভাইপোকে খুন, দোষীকে ফাঁসির সাজা দিল আদালত appeared first on Sangbad Pratidin.