সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: বয়স নিয়ে সন্দিহান স্বয়ং পরিবারের সদস্যরা। শতাব্দী পার করেছেন প্রায় এক যুগ আগেই। এবারও পায়ে হেঁটেই পঞ্চায়েত ভোট দিতে যাবেন জেলার সবচেয়ে প্রবীণ ভোটার হারাধন সাহা। এখনও দুর্বল পায়ে নিয়ম করে পাড়া বেরিয়ে প্রতিবেশীদের খোঁজ নেন কাঁকসার মলানদিঘির সরস্বতীগঞ্জের ১১২ বছরের হারাধন সাহা।
ব্রিটিশ আমলে ইউনিয়ন বোর্ডের সময় থেকেই ভোট দিচ্ছেন শতায়ু টপকেও ‘নট আউট’ হারাধনবাবু। ২০১৬ বিধানসভাতেও কারও সাহায্য ছাড়া একাই বুথে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছিলেন। তবে তাল কেটেছে এবার। মনের জেদ এবার হার মেনেছে অশক্ত শরীরের কাছে। ‘ঘরের মেয়েকে’ ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বেইমানি করছে শরীর। ঠান্ডা লেগেছে বলে বিছানায়। তবে ভোট দেবেন বলে এখন থেকেই নাছোড়বান্দা কাঁকসার ১১২ বছরের ‘ছোঁড়া’ হারাধন সাহা। এই বয়স নিয়েও সন্দেহ আছে পরিবারের সদস্যদের। অঙ্কের হিসাব কষে এখন আর তাঁর বয়স গোনাও ছেড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এলাকার মানুষ ভালবেসে তাঁকে ‘ছোঁড়া’ বলেই ডাকেন। যদিও ভোটার কার্ড অনুযায়ী বয়েস ১০৪।
[আরও পড়ুন: তুমুল বৃষ্টির মাঝে লাগাতার বজ্রপাত, বাঁকুড়ায় মৃত ৪]
ব্রিটিশ আমলে দাপটের সঙ্গে ঠিকাদারী করেছেন। চাষের কাজ দেখভাল করেন এখনও। গোটা তল্লাটে একডাকে সবাই চেনেন ‘ছোঁড়া’কে। ঘর থেকে মাত্র ৭০০ ফুট দূরেই সরস্বতীগঞ্জ অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়’ ভোট গ্রহণ কেন্দ্র। বুথ নম্বর ২১৭। তবে পছন্দ বলতে বরাবরের ডানপন্থী হারাধনবাবুর ‘ঘরের মেয়ে’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অকপটে জানালেনও তা। ব্রিটিশ আমলে লাউদোহা কালিনগর গ্রামে ভোট দিতে যেতেন হারাধন সাহা। কখনও গরুর গাড়ি করে আবার কখনও সাইকেলে চড়ে স্বাধীন ভারতে মলানদিঘিতে যেতেন ভোট দিতে। তারপর তাঁদের গ্রামে গড়ে ওঠেছে ভোট কেন্দ্র। ২০১১ সাল থেকে সরস্বতীগঞ্জের বুথে ভোট দিয়ে আসছেন হারাধন সাহা। এখনও ভোরে নিয়ম করে ওঠেন। সামান্য জলখাবার খেয়েই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়েন পাড়ায়। তবে বয়সের কারণে ‘ছোঁড়া’র ভরসা এখন লাঠি।
বিছানায় শুয়ে হারাধন বাবু জানান, “বেঁচে যখন আছি ভোট দেবই। যতদিন বেঁচে থাকব ভোট দিয়ে যাব। এটা আমার অধিকার। এখন ঠান্ডা গরম লেগে শরীরটা একটু বেগ দিচ্ছে। দুই একদিনেই সুস্থ হয়ে যাবো। পঞ্চায়েতে ভোট দিতে বুথে হেঁটেই যাব।” দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” প্রবীণ ভোটারদের ভোট দানে সুবিধার জন্যে বুথে বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। শতায়ু ভোটারদের ব্যাপারেও ব্লক প্রশাসন পরিকল্পনা নিয়েছে।”