অর্ণব আইচ: মধ্য কলকাতার চাঁদনি থেকে অটোয় উঠেছিলেন প্রবীণ দম্পতি। জানবাজারের কাছে আসতেই মোবাইলের মাধ্যমে লাউড স্পিকারে গান চালিয়ে দিলেন অটো চালক। হিন্দি চটুল গানে কান ঝালাপালা আরোহীর। মল্লিকবাজারের কাছে আসতে রীতিমতো প্রতিবাদ করে উঠলেন প্রবীণ আরোহী। কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর মিলিয়েই গেল অটোর লাউড স্পিকার থেকে বের হওয়া বিকট শব্দে। পার্ক সার্কাসে নামার আগে পর্যন্ত প্রবীণ দম্পতিকে সহ্য করতে হল এই ‘অত্যাচার’।
আবার রয়েছে অন্য সমস্যাও। দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট এলাকার হিন্দুস্থান পার্কের কাছে পিছন থেকে একটি গাড়ির ধাক্কা অন্য গাড়িতে। খুব বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও ট্রাফিক পুলিশকর্মী ছুটে এসে বুঝলেন দুর্ঘটনার কারণ। পিছনের গাড়ির চালক চলন্ত গাড়িতেই মোবাইলে কথা বলতে বলতে ধাক্কা দিয়েছেন সামনের গাড়িকে। হয় গাড়ির ভিতর প্রচণ্ড জোরে গান বাজানো, না হয় চালকের মোবাইলে কথা বলার ফলে পথদুর্ঘটনা। কলকাতার রাস্তায় ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ধরনের ট্রাফিক সমস্যা। এবার এই ব্যাপারে আরও কড়া হচ্ছে পুলিশ। লালবাজারের নির্দেশে শুরু হয়েছে ধরপাকড়। গত দু’মাসে অভিযান চালিয়ে এই দুই অভিযোগে প্রায় ১৩০০ গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে আইনি ব্যবস্থা।
[আরও পড়ুন: দু’সপ্তাহের মধ্যে বাবুঘাট থেকে সরাতে হবে বাসস্ট্যান্ড, নির্দেশ পরিবহণ দপ্তরের]
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে গাড়িতে জোরে রেডিও বা মোবাইলে গান বাজানোর অভিযোগে ধরা পড়ে মোট ২৪৫ জন। গত মাসে এই ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ আরও বেশি কড়া হয়। এই একই অভিযোগে গত মাসে সারা কলকাতা থেকে ধরা পড়েছে ৩৩৫ জন। দু’মাসে মোট ধরা পড়েছে ৫৮০ জন। গত দু’মাসেই দেখা গিয়েছে, জোরে গান বাজানোর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পার্ক সার্কাস এলাকায়। ফেব্রুয়ারিতে পার্ক সার্কাস ট্রাফিক গার্ডের হাতে ধরা পড়েন ১০১ জন গাড়ি ও অটো চালক। মার্চে এই ধরপাকড়ের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে হয় ১৭৪।
এর পরই এই ধরনের বেশি অভিযোগ আসে দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতা থেকে। সাউথ-ইস্ট ট্রাফিক গার্ডের আধিকারিকরা গত দু’মাসে ধরেছেন ১৮০ জনকে। এই অভিযোগে প্রথমবার ধরা পড়লে অভিযুক্ত চালক বা গাড়ির মালিককে জরিমানা দিতে হয় ৫০০ টাকা। এর পর থেকে একই অভিযোগে এই জরিমানা বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়ায় দেড় হাজার টাকা। যদিও চলন্ত গাড়িতে মোবাইলে কথা বলার অভিযোগে জরিমানার পরিমাণ অনেক বেশি। প্রথমবার ধরা পড়লেই অভিযুক্তকে দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। দ্বিতীয়বার থেকে এই জরিমানার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় দশ হাজার টাকায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গাড়িতে মোবাইলে কথা বলার অভিযোগে ৪২২ জন ও মার্চে ৩৩৯ জন ধরা পড়েছে। মধ্য কলকাতার ধর্মতলা, ডালহৌসি চত্বর, পূর্ব কলকাতা, দক্ষিণ—পূর্ব কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতার জেমস লং সরণি, রিজেন্ট পার্ক অঞ্চলে এই ধরনের ট্রাফিক আইন ভাঙার প্রবণতা বেশি।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গাড়ির মধ্যে জোরে গান বাজানোর প্রবণতা রয়েছে অটো চালকদের মধ্যে। এ ছাড়াও বহু বেসরকারি গাড়ির চালকদেরও দেখা গিয়েছে জোরে গান বাজিয়ে যেতে। যাত্রীবাহী গাড়িতে গান বাজালে সমস্যায় পড়েন আরোহীরা। অনেক সময় চালকের সঙ্গে তাঁদের গোলমালও বাধে। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, এই ব্যাপারে ট্রাফিক সার্জেন্টরা সতর্ক থাকেন। জোরে গান বাজাতে দেখলেই সেই গাড়ি থামিয়ে মামলা দায়ের করেন।
[আরও পড়ুন: ‘সারারাত হাত বেঁধে রেখে দিয়েছিল,’ এবার দুই বিদেশি তারকার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক চাহাল!]
এদিকে, দুর্ঘটনা কমানোর জন্য চালকরা যাতে মোবাইলে কথা না বলেন, সেই ব্যাপারেও ট্রাফিক পুলিশ সতর্ক হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অ্যাপ ক্যাবের চালক মোবাইলে কথা বলায় যাত্রীদের সঙ্গে গোলমাল হয়েছে। তাই গাড়ির চালকদের উপর রয়েছে পুলিশের নজরদারি। যদিও মোবাইল সরাসরি কানে না দিয়ে গাড়ির মধ্যে স্পিকারেও কথা বলার প্রবণতা রয়েছে বহু চালকের। সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।