জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: গাইঘাটা কাণ্ডে মৃতের স্ত্রী স্বপ্না সরকার ও তার প্রেমিক সুজিত দাসকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে তাদের পরিকল্পনা শুনে শিউরে উঠছেন তাবড় তাবড় পুলিশ অফিসাররা। ঘটনার নেপথ্যে আর কারও যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার। ওইদিন দুপুরে গোয়ালবাথান এলাকার একটি পুকুর পাড়ে রক্ত দেখতে পান
স্থানীয়রা। খবর দেওয়া হয় গাইঘাটা থানায়। পুলিশ এবং স্থানীয়রা খোঁজাখুঁজি করে পাশেই বাঁশবাগান থেকে
এক জোড়া জুতো, মাস্ক, টর্চ উদ্ধার করে। তাতে সন্দেহ দানা বাঁধে। বুধবার সকালে সন্দেহ আগুনে যেন ঘি পড়ে। গোয়ালবাথান এলাকারই বাসিন্দা সুজিত দাসের বাড়ির সামনে রক্ত দেখতে পায় স্থানীয়রা। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। এলাকায় পৌঁছে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে পুলিশ। তারা দেখতে পায় খাটের নিচে মাটি খোঁড়া হয়েছে। তা দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। কাউকে খুন করে রাখা হয়েছে বলেই অনুমান করে পুলিশ। শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ। বুধবার দুপুরে ওই জায়গার মাটি খুঁড়ে এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা হয়। এরপরই পুলিশ অনুমান করেছিল, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কারণে স্ত্রীই খুন করেছে ওই ব্যক্তিকে। সেই কারণে বুধবারই তদন্তের স্বার্থে আটক করা হয় মৃতের স্ত্রীকে। পরে তথ্যের ভিত্তিতে ওই বধূ ও তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই প্রকাশ্যে আসে গোটা ঘটনা।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারের সঙ্গে করোনার থাবা, প্রয়াত বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার সুকুমার হাঁসদা]
পুলিশের দাবি ধৃতরা বলে, “সোমবার রাতে মাথায় আঘাত করে খুন করা হয় রামকৃষ্ণকে। এরপর দেহ বাঁশবাগানে ফেলে বাড়ি ফিরে যাই আমরা। মধ্যরাতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় সুজিতের ঘরে। ভেবেছিলাম সুযোগ বুঝে দেহ টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেব।” তবে কোনও কারণে দেহটি সেদিন সরাতে না পারায় মাটিতেই পুঁতে ফেলে সুজিত। আর সেটাই হল কাল।
কিন্তু পরিকল্পনামাফিকই কী সেদিন খুন করা হয় রামকৃষ্ণকে? ধৃতদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার স্বপ্না ও তার স্বামী রামকৃষ্ণ সুজিতের বাড়িতে যায়। সেখানে তারা মদ্যপান করে। এরপর সন্ধেয় একসঙ্গে ঘুরতেও বেরোয়। ফেরার সময় বাড়ির কাছে এসে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রামকৃষ্ণ সুজিতকে গালাগালি করতে শুরু করেন। বলেন, “তুই আমার বউকে ভালবাসিস”। এরপরই সুজিতকে চড় মারেন রামকৃষ্ণ। পালটা দেয় সুজিতও। এরপর রামকৃষ্ণ লাঠি দিয়ে সুজিতকে মারতে গেলে সেই লাঠি দিয়েই রামকৃ্ষ্ণকে পালটা আক্রমণ করা হল। তখনই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা বাকি তথ্যের সন্ধানে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।