চারুবাক: সাধারণভাবে বিগ বাজেটের ছবি মানেই লক্ষ্য থাকে বড়৷ লগ্নি অর্থ ফিরিয়ে আনার কিঞ্চিৎ ঝুঁকি থাকলেও কলকাতার বিগ বাজেটের বড় হাউজগুলো সেই ঝুঁকিই নিয়ে থাকে৷ দল হয়তো অনেক সময়েই আশাপ্রদ হয়৷ দুঃখের ব্যাপার, ফেলে আসতে চলা ২০১৮ সালে তেমন কিছু ঘটল না৷ প্রথম কথা সেই অর্থে বিগ বাজেটের ছবির সংখ্যা ছিল বেশ কম৷ আঙুলে গোনা যে কয়েকটি ছিল তার কোনওটাই সুপারহিট হতে পারেনি৷
যেমন ধরা যাক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘এক যে ছিল রাজা’ বা ‘উমা’, অরিন্দম শীলের দুটি ছবি ‘আসছে আবার শবর’ আর ‘ব্যোমকেশ গোত্র’ কিংবা অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘কবীর’৷ কোনওটাই ব্যবসায় ব্লকব্লাস্টার হতে পারেনি৷ হ্যাঁ, মোটামুটি ব্যবসা করেছে৷ আর এখন তো ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে ছবি রিলিজের এক সপ্তাহের মধ্যেই সাকসেস পার্টির ব্যবস্থা করা! যেন অর্থনীতির নিয়মে এটা যে হয় বোঝা মুশকিল৷
[ফিরে দেখা ২০১৮: সাফল্য থেকে ব্যর্থতা, বছরটা কেমন গেল বিনোদন জগতের?]
বরং সেই তুলনায় বলব এই বছর অল্প বাজেটে তৈরি বেশ কিছু ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে৷ হয়তো বাণিজ্যিক পরিভাষায় ‘সুপারহিট’ নয় কিন্তু দর্শকের ভাল বা মন্দ লাগার মাপকাঠিতে ‘হিট’ বলাই যায়৷ এই লিস্টে প্রথম নাম ইন্দ্রাশিস আচার্যের ‘পিউপা’৷ এই মুহূর্তে বাংলা ছবির প্রদর্শন ব্যবসায় যে চক্র অতীব সক্রিয়, তাকে তাড়িয়ে ‘পিউপা’ যে দর্শকের কাছে পৌঁছতে পেরেছে তাই-ই অনেক৷ একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের আন্তসংকট নিয়ে সত্যিই একটি মন কেমন করা অথচ বুদ্ধি মাখানো ছবি ‘পিউপা’৷ ‘বিলু রাক্ষস’-এর পর ইন্দ্রাশিস এমন একটি জটিল মনের মানুষদের নিয়ে নিপাট ছবি বানাবেন ভাবাই যায়নি৷ ‘পিউপা’ একাধিক আন্তর্জাতিক উৎসবে পৌঁছে গিয়েছে৷ ওই একই তালিকায় রাখা যায় সৌকর্য ঘোষালের ‘রেনবো জেলি’, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘সোনার পাহাড়’, রঞ্জন ঘোষের ‘রংবেরংয়ের কড়ি’-কে৷ সঠিক রিলিজ পেলে বা বিগ বাজেটের রাজনীতি সক্রিয় না থাকলে এই ছবিগুলি আরও কিছুদিন দর্শকের সামনে থাকতে পারত৷
[ফিরে দেখা ২০১৮: বন্যা থেকে সুনামি, বিপর্যয়ের সালতামামি]
ব্যতিক্রমী ভাবনা এবং বিষয় নিয়ে নাটকের মানুষ কৌশিক করের প্রথম ছবি ‘পর্ণমোচী’ এবং দীপ চৌধুরির ‘আলিফা’ অবশ্যই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত৷ বিষয়ের সাহসিকতায় ‘পর্ণমোচী’ এগিয়ে৷ আর উত্তর-পূর্ব ভারতের গরিব অনাবাসীদের সমস্যা নিয়ে তৈরি ‘আলিফা’ ছবির চিত্রায়ণে নজর কাড়ে৷ সুপারহিট পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দৃষ্টিকোণ’ গরম হাওয়া ছড়িয়ে একটু পরেই ঠান্ডা৷ তবে তাঁর ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’ সত্যিই হতাশ করেছে৷ যেমন প্রতীম ডি গুপ্তর ‘আহারে মন’ তাঁর অতীত সুনাম বজায় রাখেনি৷ পাভেল বছরের শেষ সপ্তাহে ‘রসগোল্লা’ বিতরণের তেমন সুযোগ পেল না৷ নতুনদের মধ্যে মহাদেব সাহার রোড মুভি ‘উড়নচণ্ডী’ ব্যবসায় তেমন সফল না হলেও নির্মাণ কৌশলে নজর কেড়েছে৷ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গুপ্তধনের সন্ধানে’-র মধ্যে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া ভরপুর৷ তবে মৈনাক ভৌমিকের ‘জেনারেশন আমি’ আর বছরের শুরুতে রিলিজ হওয়া রিংগোর ছবি ‘রে’-কে হয়তো অনেকেই ভুলে গিয়েছেন৷ কিন্তু বিশেষ করে ‘রে’ থ্রিলার মেকিংয়ের দিক থেকে এক বিস্ময়কর চমক৷
[ফিরে দেখা ২০১৮: অসামান্য কৃতিত্বের জন্য বিশ্ব মনে রাখবে যাঁদের]
এমনটা যদি পরিচালনা ও ব্যবসার মানচিত্র হয়, শিল্পীদের আঠাও কিন্তু তেমন উজ্জ্বল নয়৷ সুপারস্টার দেব ‘কবীর’-এ অন্যরকম হওয়ার চেষ্টা করেছেন মাত্র৷ ‘হইচই আনলিমিটেড’ তো দর্শক দেখলেনই না৷ নায়কদের মধ্যে প্রসেনজিৎকেই এগিতে রাখতে হচ্ছে ‘দৃষ্টিকোণ’ আর ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এর জন্য৷ আবির বা ঋত্বিক কেউই ‘হিট’ হননি৷ ব্যোমকেশের চরিত্র আবির তবু সহনীয়৷ বরং সেই তুলনায় উঠতি অভিনেতা ঋতব্রত মুখোপাধ্যায় দুটি ছবি ‘পর্ণমোচী’ ও ‘জেনারেশন আমি’-তে প্রমাণ করেছে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যত৷ হ্যাঁ, যিশু সেনগুপ্ত এগিয়ে আছেন অনেকটাই৷ প্রমাণ ‘এক যে ছিল রাজা’ আর ‘সোনার পাহাড়’৷ আর নায়িকা জগৎ? সেখানেও ঋতুপর্ণা এবার প্রথম তালিকায় ‘দৃষ্টিকোণ’-এর জন্য৷ ‘এক যে ছিল রাজা’-র জন্য পাশেই থাকছেন জয়া এহসান৷ এক্কেবারে তাঁদের কাঁধেই নিশ্বাস ফেলছেন ‘উড়নচণ্ডী’ সুদীপ্তা চক্রবর্তী৷
[ফিরে দেখা ২০১৮: বিয়ের তালিকা তো লম্বা, বিভ্রাটগুলো মনে আছে তো?]
সুতরাং বলা যেতেই পারে পরিচালনা-প্রযোজনা-অভিনয় সব মিলিয়েই ২০১৮ সালটা গরিব ছবিরই দখলে৷ গরিবিয়ানাই এখন বুঝি বাংলা সিনেমার বনেদিয়ানা৷
The post ফিরে দেখা ২০১৮: টলিউড মাত করল কম বাজেটের ছবিগুলিই appeared first on Sangbad Pratidin.