অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: বার বার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলকে ভোট দিয়ে জেতানোই সার। বার বার প্রতিশ্রুতি দান আর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, এই বৃত্তটা অব্যাহত এ বঙ্গের পাহাড়ের রাজনীতিতে। দার্জিলিংয়ের (Darjeeling) মানুষজনের পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি এখন কার্যত স্বপ্নে পর্যবসিত হয়েছে। কেন্দ্রে ইউপিএ থাক কি এনডিএ – এই গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর ভিত্তিতেই পাহাড়ে মূলত ভোট হয়ে থাকে। ঘিসিং- গুরুং জমানায় ভূমিপুত্রদের প্রার্থী করার চাপ থাকত রাজনৈতিক দলগুলির উপর। কিন্তু বর্তমানে বাংলার শৈল কেন্দ্র জিততে বিজেপি মোটের উপর শক্তিশালী প্রার্থীকেই লড়াইয়ের ময়দানে নামাচ্ছে। আর দলের এই নীতিতেই ক্ষুব্ধ কার্শিয়াংয়ের বর্তমান বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা (Bishnuprasad Sharma)। একাধিকবার তিনি একক আন্দোলনের পথে হেঁটেছেন, কিন্তু সুরাহা হয়নি কিছুই। এবারও ভূমিপুত্র নন, বরং বিদায়ী সাংসদ রাজু বিস্তাকেই ফের দার্জিলিং কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে বিজেপি। আর তার প্রতিবাদ জানিয়ে চব্বিশের লোকসভা ভোটে (2024 Lok Sabha Election) নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা।
এর আগে একাধিকবার গোর্খাল্যান্ডের (Gorkhaland) দাবি তুলে সমালোচিত হয়েছেন কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক। একুশের বিধানসভা ভোটে জেতার কয়েকমাস পরই পৃথক রাজ্যের দাবিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডাকে (JP Nadda) চিঠিও পাঠিয়েছিলেন বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা। তাঁর দাবি ছিল, যথাযথ উন্নয়নের জন্য পৃথক রাজ্য প্রয়োজন। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে গোর্খা (Gorkha) জনজাতি নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। এর পরেও বেশ কয়েকবার তিনি গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে সুর চড়িয়েছেন। এমনকী বিধানসভার বাইরে একাই অবস্থান বিক্ষোভে বসেছিলেন। তাঁর ‘আন্দোলন’কে স্বভাবতই সুনজরে দেখেনি গেরুয়া শিবির। তবে তিনি যে একেবারে ভোটের ময়দানে ভূমিপুত্র আবেগ নিয়ে বিজেপির ভোট কাটতে নামবেন, তাও অনুমান করা যায়নি। এবার তাঁর এই সিদ্ধান্তে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি।
[আরও পড়ুন: ‘হাউ ইজ দ্য জোশ…’, বর্ধমানে পা রাখতেই দিলীপ ঘোষকে ঘিরে নয়া স্লোগান]
বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মাকে নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ড্যামেজ কন্ট্রোলে তিনি ঠেলে দিয়েছেন কালচিনির বিধায়ক বিশাল লামাকে। বিশাল কার্শিয়াঙে বিষ্ণুপ্রসাদের বাড়ি গিয়ে দেখা করবেন বলে সূত্রের খবর। বিষ্ণু যাতে নির্দল হয়ে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন, সেই অনুরোধ জানানো হবে। এ প্রসঙ্গে কালচিনির বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বিজেপি পরিবারের সদস্য। এক পরিবারের সদস্য হলে যে কোনও বিষয়ে সমস্যা হতেই পারে। সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে তিনি আর আমাদের পরিবারের সদস্য নন, এমনটা তো নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিজেপি প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামানোর চেষ্টা করব।’’