নব্যেন্দু হাজরা: শহর কলকাতার হল কী! ভ্যাপসা গরম ছিল না। পূর্বাভাস মতো বৃষ্টিও হয়নি। তা সত্ত্বেও ভোটদানে আগ্রহ দেখাল না তিলোত্তমা। অধিকাংশ জায়গাতেই ভোটকেন্দ্রের বাইরে লম্বা লাইনের চেনা ছবি দেখা গেল না। কলকাতা উত্তর এবং দক্ষিণ দুই কেন্দ্রের চিত্রটা খানিকটা ছিল একই। যে কারণে ভোটের হার দেখে শনির সন্ধ্যায় ভ্রু কোঁচকাতে দেখা গেল সব দলের নেতা-কর্মীদেরই। অন্যান্য কেন্দ্রে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত যেখানে ৭০-৭৫ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে, সেখানে দুই কলকাতায় ভোটের হার ৬০ শতাংশের আশপাশে। অথচ ২০১৯ সালে কলকাতা দক্ষিণে প্রায় ৭০ এবং উত্তরে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল।
সকালের দিকে প্রথম ঘণ্টায় তাও কিছু বুথে লাইন নজরে এসেছে। কিন্তু তারপর! বেলা যত বেড়েছে শহর যেন ততই ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট শুনশান, গাড়িঘোড়া হাতেগোনা। দোকানপাট বন্ধ। শ্যামবাজার (Shyambazar) থেকে গিরিশ পার্ক, রাসবিহারী থেকে রুবি মোড় (Ruby) শহর ঘুরে মনে হচ্ছিল, যেন বন্ধ চলছে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিই ছিল বেশি। কিন্তু ভোটারের লাইন কোথায়! আর এই লাইন কোথায়ের কারণ খুঁজতেই মাথার চুল ছিঁড়লেন ডান-বাম-গেরুয়া শিবিরের লোকজন। বিকেলের দিকে কোনও কোনও বুথে আবারও ভোটার বেড়েছে ঠিকই, তবে ওই মেরেকেটে গোটা দশেক লোকের লাইন। দুপুরের দিকে তো বহু বুথে থাকা এজেন্টকে কার্যত হাই তুলতে দেখা গেল। অটো বা রিকশায় করে ভোটারকে বুথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার যে 'ঐতিহ্য' মানুষ বছর বছর দেখে আসছেন, এদিন যেন তাতেও ভাটা।
[আরও পড়ুন: ভোটের পরও উত্তপ্ত ভাটপাড়া, এবার অর্জুনের এজেন্টের বাড়ির পাশে বোমাবাজি]
ভোটের সকালে মাংসের দোকানের লাইন বরং ছিল চোখে পড়ার মতো। দোকানদারদের দম ফেলার সময় নেই। শুক্রবারই কেজি কেজি মাংস নিয়ে গিয়েছে বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট। রাজনৈতিক দলগুলোর দুপুরের ভোজের আয়োজনে ছিল চরম ব্যস্ততা। বেশিরভাগ গেরস্তের বাড়ির মেনুতে মাংস-ভাত। অনেকেই বলছেন, ভোটদানের সময় যেহেতু প্রায় এগারো ঘণ্টা, তাই কোথাও বড় লাইন নজরে আসেনি। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেল শতাংশও বাড়েনি। যা নিয়ে চিন্তায় কমিশনের কর্তারাও।
বেলেঘাটা, মানিকতলা, এন্টালি, রাজাবাজার, বড়বাজারের যে সব বুথগুলোতে প্রতি ভোটে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়, সেইসব বুথগুলোও এদিন ছিল বেশ ফাঁকা। পাইকপাড়ার একটি বুথে তো দুপুরের দিকে বেশ কিছুক্ষণ কোনও ভোটারই দেখা গেল না। সেখান থেকে জোড়াসাঁকো, মানিকতলা! উত্তরের ভোটকেন্দ্রের প্রাণকেন্দ্র যে সমস্ত এলাকা সেখানেও ভোটদানের হার বেশ কম।
খোঁজ নিতে দেখা গেল, গোটা দিন ধরে এভাবেই ফাঁকায় ফাঁকায় ভোট হচ্ছে। ভোট শুরুর প্রথম দুঘণ্টায় তো কলকাতা উত্তর (Kolkata Uttar lok Sabha) কেন্দ্রে ভোটদানের হার দুই ডিজিটে পৌঁছোয়নি। ট্যাংরার একটি বুথে যেখানে অন্যান্যবার ভোট দিতে প্রায় ঘণ্টাখনেক লেগে যায়, সেখানেই মিনিট পাঁচেকও লাগেনি এবার ভোট দিতে। এতো গেল উত্তরের ছবি।
দক্ষিণের চিত্রটাও যে খুব বদলেছে তেমন নয়। বেহালা থেকে বেলতলা, বন্দর থেকে কসবা যেদিকেই গিয়েছি, সেভাবে মানুষের ভিড় চোখে পড়েনি। ভোটের লম্বা লাইন খুঁজে না পেয়ে ফোটোগ্রাফারদের তো কার্যত মাথা ঠোকার জোগাড়। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়েছে। তাতেও গড়িমসি কাটিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে দেখা যায়নি। শুধু শহর কলকাতা (Kolkata) নয়। সল্টলেকের (Salt Lake) বুথগুলোতেও এদিন ভোটদানের আলোচনা একটাই, গত লোকসভায় যেখানে কলকাতা দক্ষিণে প্রায় ৭০ শতাংশ আর উত্তরে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল, সেখানে এবার শহরবাসীর হল কী!