স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যে এবার দুই মেরুর নির্বাচন হচ্ছে না। সারা দেশে বামপন্থীরা ঘুরে দাঁড়াবে। বাংলাতেও শূন্যের গেরো কেটে বামেরা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশার আলো দেখছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। একুশের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ‘জিরো’। সেই প্রসঙ্গে শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য প্রেস’-এ বিমান বসুর দাবি, ‘‘দ্বিমেরু রাজনীতির ভিতকে আমরা নড়বড়ে করে দিয়েছি। যাঁরা বাম-কংগ্রেস জিরো বলে অবজ্ঞা করার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা অপেক্ষা করুন। শূন্য থেকেই শূন্যের জন্ম হয়। কিন্তু রাজনীতিতে তা নয়। গণনা যখন শেষ হবে বুঝতে পারবেন। আপনারা ভাবতেও পারবেন না বাংলাতে এমন ফল হবে। ফলাফল বেরনোর পর আপনারাও বলবেন, এ তো ভাবতেই পারিনি।’’ বিমান বসুর দাবি, সারা দেশের সঙ্গে উত্তর ভারতেও বামেদের আসন বাড়বে।
শুক্রবার রাজ্যে লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Election) প্রচারে এসে তৃণমূলের সঙ্গে একযোগে বাম-কংগ্রেসকেও আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi)। সেই প্রসঙ্গ তুলে বিমান বসু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে দ্বিমেরু রাজনীতির অবসান ঘটাতে অগ্রসর হতে পেরেছি আমরা। যাতে রাজ্যে বিজেপি এবং তৃণমূল, এই দুই মেরুর পরিস্থিতি ভাঙা যায়। প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তৃণমূলের সঙ্গে বাম ও কংগ্রেসেরও সমালোচনা করছেন। এই পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছি।’’ দলের রাজ্য সম্পাদক সাধারণত সংগঠন দেখেন। অনিল বিশ্বাস থেকে বিমান বসুরা (Biman Basu) কখনও ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম মহম্মদ সেলিম। সেলিমের প্রার্থী হওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এদিন বিমান বসু বলেন, ‘‘১৯৫৯ সালে বালিগঞ্জে ও ’৬০ সালে বাঁকুড়ায় আমায় বলা হলেও প্রার্থী হইনি। কিন্তু ব্যক্তি-মানুষের পছন্দের বিষয় রয়েছে। এটা পার্টিকে বোঝাতে হয়েছে। সেলিম (Md Selim)সাংসদ, বিধায়ক ছিলেন। কাজেই এটা সংখ্যালঘু ভোটের প্রশ্ন নয়। মুর্শিদাবাদ আসনটি দু, তিনবার বাদ দিলে আমরা সবসময় জিতেছি।’’
[আরও পড়ুন: ন’ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ট্রেনের দেখা নাই, কলকাতা-হাওড়া স্টেশনে বিক্ষোভ]
একইসঙ্গে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এদিন বলেন, পার্টিতে তরুণ প্রজন্মই ভরসা। সর্বত্রই মাঠে নেমেছে নতুন প্রজন্ম। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ - স্লোগানের কড়া সমালোচনা করেছেন প্রবীণ এই সিপিএম নেতা। তথ্য তুলে ধরে বিজেপির উদ্দেশে ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের প্রশ্ন, ‘‘মাথাপিছু আয়ে ভারত ২০১৪ সালে ১২০টি দেশের মধ্যে ৫৫ তম স্থানে ছিল। এখন এনডিএ আমলে ১১১ নম্বরে নেমে গিয়েছে। শতকরা ১ ভাগ মানুষের হাতে দেশের ৪০ ভাগ সম্পদ কুক্ষিগত। তাহলে 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ' কোথায়?’’ এদিন মোদির কড়া সমালোচনা করে বিমানের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিজেপির ইস্তাহারেও মিথ্যার ফুলঝুরি রয়েছে।’’
[আরও পড়ুন: রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তদন্তে SET গঠন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ ‘অবিশ্বাস্য’, দাবি জেলবন্দি পার্থর]
ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে রয়েছে বাম ও কংগ্রেসও। কিন্তু বাংলায় সেই জোটধর্ম জলাঞ্জলি দিয়ে তৃণমূলের অন্ধ বিরোধিতা করতে গিয়ে বিজেপিকে আক্রমণের পথ থেকে সিপিএম (CPM) সরে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে। এ রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলও রাম-বাম আঁতাঁতের অভিযোগে সরব। পাশাপাশি দেশে ও রাজ্যের ক্ষেত্রে পার্টির এই দ্বিমুখী অবস্থান নিয়ে সিপিএমের অন্দরেও নিচুতলার প্রশ্ন সামলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে আলিমুদ্দিনকে। পার্টি ক্লাস করে অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হয়েছে নিচুতলার কমরেডদের। সেই বিষয়টি এদিন আরেকবার স্পষ্ট করে বিমান বসু বলেন, ‘‘এ রাজ্যের ক্ষেত্রে দেশকে বাঁচাতে বিজেপিকে পরাস্ত করতে হবে। আর রাজ্যকে বাঁচাতে তৃণমূল সরকারকেও পরাস্ত করতে হবে বলে আমরা বলছি।”