নন্দন দত্ত, সিউড়ি: শীতলকুচির পালটা বগটুই। চব্বিশের লোকসভা ভোটের (2024 Lok Sabha Polls) প্রচারে বীরভূমে এসে বিজেপি 'বিতর্কিত' প্রার্থী দেবাশিস ধর এভাবেই প্রচারে নেমেছেন। তাই দুবছর আগের সেই গণহত্যার নির্মমতা ফের লোকসভা নির্বাচনে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ স্বজনহারা পরিবারের বেশিরভাগ লোকই এখন বিজেপিতে (BJP)। এমনকি গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বজনহারা পরিবারের পক্ষ থেকে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী দিয়ে গোহারা হেরেছেন। ভোট জুটেছিল মাত্র ৩২ টি। যদিও একথা তাঁরা মনে রাখতে চান না। স্বজনহারা পরিবারের মুখ মিহিলাল শেখ। তার দাবি, ‘‘আপনারা শুধু পঞ্চায়েত দেখছেন। সমিতিরটা দেখুন। সেখানে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে ছিল।’’ তিনি জানান, ইদের পরেই স্বজনহারা মানুষজন মিলে বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধরের হয়ে লোকসভা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে তাঁদের উপর নির্মম গণহত্যার সেই কাহিনী তুলে ধরবেন।
বগটুই গ্রামে অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে সিবিআই। ফাইল ছবি।
যদিও রামপুরহাটের (Rampurhat) বগটুই গ্রাম বলছে অন্য কথা। ঘটনার পর গ্রামে উন্নয়ন হয়েছে। জাতীয় সড়কের মোড় থেকে দীর্ঘ পাকা রাস্তা নতুন কালভার্টের উপর দিয়ে কুমাড্ডা পর্যন্ত গিয়েছে। মিহিলালের দাদা শেখলাল শেখ জানান, ‘‘যারা আগে ভোটে মাতব্বরি করত, তারা এখন চুপ। কেউ জেলে, কেউ এলাকাছাড়া। তাই ভোট নিয়ে গ্রামে কোনও উথালপাথাল হাওয়া নেই।’’ তবে বগটুই পশ্চিম পাড়ায় গণহত্যার সেই ঘর এখনও সেভাবেই পড়ে আছে। সেই ক্ষতচিহ্ন দেখেই স্বজনহারারা শপথ নেয়, অভিমান করে বদলা নেওয়ার কথা বলে।
[আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার প্রার্থী নিয়ে বাম ঐক্য ভেঙে চুরমার, বীরভূমেও প্রার্থী দেবে ফরওয়ার্ড ব্লক!]
গত ২০২২ সালে ২১ মার্চ। বীরভূমের (Birbhum) বড়শাল পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ বগটুই মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হন। তারই বদলা নিতে বগটুই পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ায় বাণী, মিহি, শেখলাল, ফটিকের বাড়িতে পরের পর আগুন লাগে। প্রাণভয়ে মেয়ে ও শিশুরা পশ্চিম পাড়ার একটি পাকা ঘরে আশ্রয় নেয়। সেই ঘরে ঢুকে পেট্রল ঢেলে অগ্নিদ্বগ্ধ করে ন’জন নারী ও শিশুকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। দুবছর পরেও সেই ঘর একইরকম অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরের ভিতর কালো কালি, পেট্রল বয়ে আনা জেরিক্যান, উল্লাসে ভেঙে ফেলা জানালার কাঁচ, ঘরের দরজা। অন্যদিকে, বাকিদের ঘর মেরামতের জন্য মুখ্যমন্ত্রী আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।
রামপুরহাটের বগটুই কাণ্ডের তদন্তে পুলিশ। ফাইল ছবি।
স্বজনহারা শেখলাল শেখের কথায়, ‘‘তাতেই তার পুরনো পুড়ে যাওয়া দোকান সারিয়ে ফের বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে এসে আমাদের যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা সবই পূরণ করেছেন। আমরা সরকারি পরিষেবা পেয়ে খুশি।’’ যদিও স্বজনহারাদের কেউ কেউ তাঁদের বাড়ি দেখিয়ে বলেছেন যে তাঁদের বাড়িতে সেই রাতে বোমাবাজি হয়েছে তাতে বাড়ির কাঠামো নড়ে গিয়েছে। কোনও রকমে সরকারি দানে পলেস্তরা করে ঘরগুলি সোজা করে রাখা হয়েছে। গণহত্যার সেই ঘরের সামনে এখনও চারজনের পুলিশ ক্যাম্প। মিহিলালের দেহরক্ষী দুজন। পোড়া ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাকাবাড়ি মাটির বাড়ির পাশে সবুজ গাছের চারা উঠেছে। গ্রামে শান্তি বিরাজ করছে। আশেপাশের যে সব ঘরের মানুষ আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছিল। তাদের ঘরের উঠোনে মুরগি খেলে বেড়াচ্ছে।
[আরও পড়ুন: ভালোবাসার প্রতিদান! চেঁচিয়ে লুটপাট রোখার চেষ্টা, চারপেয়েকে পিটিয়ে ‘খুন’ দুষ্কৃতীদের]
বগটুইয়ের গ্রামবাসীরা জানান, এক গণহত্যা গোটা গ্রামের ছবিকে পালটে দিয়েছে। এখন এই গ্রামে রাজনীতি নিয়ে খুব একটা কেউ আলোচনা করে না। তাই গোটা গ্রামের দেওয়ালে কোনও রাজনৈতিক দলের লেখা চোখে পড়ল না। একমাস উপবাসের পর তারা শান্তিতে ইদ পালন করতে চায়। কিন্তু রাজনীতির কারবারিরা সেই গণহত্যাকে ইস্যু হিসাবে ফের লোকসভা ভোটে তুলে ধরতে চাইছে। তাই শীতলকুচির গণহত্যার প্রসঙ্গ এলেই পালটা বগটুইকে ফের সামনে ঠেলে দিচ্ছে বিজেপি।
দেখুন ভিডিও: