নন্দন দত্ত, সিউড়ি: গরমে নাজেহাল পরিস্থিতি। অথচ এর মধ্যেই নিজেকে ও কর্মীদের ভোটের মাঝে চাগিয়ে রাখতে হবে। কেউ গাইছেন নিজের লেখা থিম সং। কেউ আবার কলকাতা থেকে অর্কেস্ট্রা নিয়ে করছেন এলাকায় অনুষ্ঠান। বীরভূমে এমনই অভিনব প্রচারের পথ বেছে নিল বিজেপি। কলকাতা থেকে এল অর্কেস্ট্রা টিম। সেখানে গায়কদের সঙ্গে এলাকার মানুষদের গান শোনাচ্ছে প্রার্থী। অন্যদিকে রবিবাসরীয় প্রচারের মাঝে তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় নিজেই হুড খোলা জিপ চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। সিনেমায় দেখা জিপ চালানো নায়িকা গ্রামের রাস্তায় লাল ডুরে সুতির শাড়ি পরে গাড়ি চালাচ্ছে! তা দেখতেই ভিড় জমল নলহাটি বিধানসভার সুহদিঘি মোড়ে। একইভাবে সারাদিন প্রচারের পড়ে অভিনব প্রচারের অঙ্গ হিসাবে সন্ধ্যায় তারাপুরের বিচিত্রানুষ্ঠানে মাইক ধরে এলাকাবাসীকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনালেন বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস ধর। বোঝাই যাচ্ছে চতুর্থ দফার বীরভূমের দুটি কেন্দ্রের ভোট যত এগিয়ে আসছে প্রচারের রকমফের তত বাড়ছে।
নলহাটি, মুরারই কেন্দ্রকেই পাখির চোখ করেছে তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি। গতবারের মুরারই কেন্দ্রের ভোটেই দিল্লি যাওয়ার তৃতীয়বারের টিকিট মিলেছিল তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের (Satabdi Roy)। তাই তাঁর নিশ্চিত পকেটগুলিকে তিনি ধরে রাখতে এলাকায় এলাকায় দিনভর ঘুরলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী। পাইকর থানার কুশমোড় গ্রামের পথসভা দিয়ে শুরু হল রবিবাসরীয় প্রচার। শতাব্দী বললেন, ‘‘আমি কথা রেখেছি। আপনারা কতটা কথা রাখছেন সেটা বলতেই আমার এখানে আসা। ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দেবেন না। কেউ যদি বলে আমি তোমাদের ধর্মের, আমাকে ভোট দাও। তাঁকে ভোট দেওয়ার আগে ভাববেন, কারা আপনাদের পাশে থেকেছে।’’ তার পরেই নিজের লেখা থিম সংয়ের সুর ধরেন, ‘‘জিতব আমি, জিতব আমরা, জিতবে তৃণমূল/ বীরভূম আছে দিদির সঙ্গে জিতবে তৃণমূল।’’ পরে নলহাটি বিধানসভার সুহদিঘি মোড় থেকে রুদ্রনগর পঞ্চায়েত পর্যন্ত হুড খোলা জিপে শতাব্দী নিজে ড্রাইভ করে গ্রামে গ্রামে প্রচারে যান। তাঁকে দেখতেই রাস্তার ধারে ভিড় জমে যায়। ড্রাইভ করতে করতেই কোথাও গাড়ি থামিয়ে তিনি জানতে চান, ‘‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ঠিকমতো পাচ্ছেন তো?’’
[আরও পড়ুন: পরীক্ষায় ফেল করায় মনখারাপ, CA হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই আত্মঘাতী কসবার ছাত্রী]
অন্যদিকে প্রচারের পরও জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের বিজেপি প্রার্থী (BJP Candidate) দেবাশিস ধর। এদিন সন্ধ্যায় তারাপুর দুর্গামন্দিরে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে গেয়ে উঠলেন গাইতে - ‘সে যে মানে না মানা’ অর্কেস্ট্রার সঙ্গে পেশাদার গায়কের মতো গেয়ে উঠলেন। কর্মীরা তাতেই খুশি। বিজেপির দলীয় সূত্রে খবর, প্রতি বিধানসভা এলাকায় এভাবেই অকেস্ট্রা দলের সঙ্গে গান (Cultural Programme) গাইবেন দেবাশিস ধর। থাকবেন অন্য শিল্পীরাও। তার জন্য বাঁধা হচ্ছে ম্যারাপ। এ প্রসঙ্গে দেবাশিস ধর জানালেন, ‘‘বীরভূমের ভোট মানেই তো কুকথার বন্যা। আমি সেখানে সভ্য সাংস্কৃতিক সুশীল প্রচার করার কথা ভেবেছি। সন্ধ্যায় কিছুটা লোকে গরম থেকে রেহাই পাবে। সকলে মিলে গান গাইবে।’’
[আরও পড়ুন: জয়সলমেরকে টেক্কা কলকাতার, ৪৫ ডিগ্রি পার পানাগড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সানস্ট্রোকও]
রবিবার প্রচারে বেরিয়ে দেবাশিসবাবু (Debaashish Dhar) হরিদাসপুরের মাঠে ঠা ঠা রোদে নেমে পড়লেন খুদেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, যার বেশিরভাগ সময়ে ঠান্ডা ঘরে থেকে মস্তিষ্ক দিয়ে কাজের অভ্যাস, তিনি মাঠে নেমে ৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা, বীরভূমের (Birbhum) লু উপেক্ষা করে ত্রিকেট খেলছেন! দেখেই উৎসাহী জনতা। অন্যদিকে মাথায় রঙিন কাপড় জড়িয়ে, গলায় খোল ঝুলিয়ে রীতিমতো বাজনদারদের মতন বাজিয়ে এলাকায় ঘুরলেন বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। বোলপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল রবিবার ময়ূরেশ্বরের গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। বিকালে কোটাসুরে দলীয় পার্টি অফিসে কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।