স্টাফ রিপোর্টার: সারা রাজ্যে উচ্চমাধ্যমিকের (Higher Secondary) প্রায় ২৩৫টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে সংবেদনশীল হিসাবে চিহ্নিত করা হল। সেগুলিতে যাতে মোবাইল বা অন্যান্য বৈদ্যুতিন যন্ত্র নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।। ওই পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে মেটাল ডিটেক্টরেরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির উপস্থিতি। এ ছাড়া, সার্বিকভাবে মোবাইল নিয়ে এবছর ব্যাপক কড়াকড়ি করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থী তো বটেই, শিক্ষাকর্মীদের মোবাইল নিয়ে প্রবেশেও জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা যাতে কঠোরভাবে মানা হয়, নানাভাবে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে সচেতনতা ও কড়া চেকিংয়ের ব্যবস্থার উপর। উল্লেখযোগ্যভাবে, এ বছরই প্রথমবার কোনও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী-সহ কোনও ব্যক্তি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোপন রিপোর্ট পাঠাতে পারবেন ভেনু সুপারভাইজার। তার জন্য সংসদের তরফে দেওয়া হয়েছে একটি ‘এক্সামিনেশন কনফিডেন্সিয়াল ফরম্যাট’।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “মোবাইল বর্তমানে অপরিহার্য একটা জিনিস। কিন্তু, যে কোনও পরীক্ষা ব্যবস্থায় এখন খুব বিপজ্জনক একটা বস্তু হয়ে উঠেছে। যে কোনও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা যন্ত্রের প্রবেশ আমরা আটকানোর চেষ্টা করছি।” ভেনু সুপারভাইজার তথা প্রধান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে মূল প্রবেশদ্বারে পুলিশের নজরদারিতে কড়া ও কঠোরভাবে মোবাইল চেকিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। থাকছে সতর্কীকরণ পোস্টারও। পরীক্ষার ঘরে মোবাইল নেই নিশ্চিত হয়ে তবেই ইনভিজিলেটররা প্রশ্নপত্র বিতরণ করবেন। যদি মোবাইল পাওয়া যায় তবে তা বাজেয়াপ্তের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর সেই দিনের বা বাকি সব পরীক্ষা বাতিল বলে গণ্য করা হবে। পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড বিতরণের সময়ই নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে সচেতন করতে বলা হয়েছে প্রধান শিক্ষকদের।
[আরও পড়ুন: প্রথা ভেঙে দোল পূর্ণিমার আগেই ‘বসন্ত বন্দনা’, সূচি প্রকাশ বিশ্বভারতীর]
শুধু মোবাইল ধরা পড়লে তো বটেই, টোকাটুকি, শিক্ষক-শিক্ষিকা নিগ্রহ, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট, উত্তরপত্র ছিঁড়ে ফেলা বা লুকিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়া, উত্তরপত্রে কোনও অশালীন শব্দের ব্যবহার বা অনৈতিক কাজের বিষয় থাকলেও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর খাতা ‘রিপোর্টেড এগেনস্ট’ করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল থাকবে শুধুমাত্র ভেনু সুপারভাইজার, সেন্টার ইনচার্জ ও সেন্টার সেক্রেটারির কাছে।
সূত্রের খবর, শিক্ষক বা অশিক্ষক কর্মচারীদের কেউ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মোবাইল নিয়ে চলে এলে, সেগুলি প্রধান শিক্ষকের ঘরে তালাবন্দি অবস্থায় রাখতে হবে। প্রশ্নপত্রের সুরক্ষা জোরদার করতে করা হয়েছে ম্যানুয়াল ট্র্যাকিং-এর ব্যবস্থা। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নপত্রের সার্বিক সুরক্ষার দায়িত্ব থাকছে ভেনু সুপারভাইজারদের উপর। পরীক্ষার দিনগুলিতে তিনি নিজে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করবেন এবং প্রশ্নপত্র খোলার সময় তাঁর কক্ষে একজন সংসদের নমিনি এবং পুলিশের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সেই সময় তাঁদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের উপর সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।
[আরও পড়ুন: তৃণমূল কংগ্রেসের টুইটার অ্যাকাউন্টে হ্যাকার হানা, বদলে গেল নাম]
পরীক্ষা শুরু হবার পর কোনও শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। এদিকে মাধ্যমিকে আরও কড়া হচ্ছে নজরদারি। চারটি পরীক্ষার জন্য আরও আট দফা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে পর্ষদ। এবার থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের করিডরেও ঘুরে ঘুরে নজরদারি করতে হবে শিক্ষকদের। অন্তর্ঘাত এড়াতে প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের সাতদিনের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করবে পর্ষদ। সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত স্ট্রংরুমের এই ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। মোবাইল সতর্কতা ছাড়াও পরীক্ষার্থীদের ঢোকার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে।